বুধবার আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোট গ্রহন ও ২২-২৩ ডিসেম্বর ফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে। এই নির্বাচনি তফসিল ঘিরে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছে বাস্তবতার আলোকে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটাই আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই আমাদের এই তফসিল করা।
আজ বুধবার (৫ অক্টোবর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড.মোস্তফা হাসান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২ নভেম্বর আমরা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসি। সেদিন আলোচনা সভায় বেশিরভাগ ছাত্রনেতারা বলেছে প্রচারণার সময় বাড়াতে। আগে ৭ দিন ছিলো এখন ১০ দিন করা হয়েছে। ছাত্র নেতাদের দাবি ছিলো সপ্তাহের মাঝামাঝি নির্বাচনের তারিখ দিতে। সেটাই করা হয়েছে। আমাদের কাছে ২২ ডিসেম্বর ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। এই মাসে অনেক গুলো সরকারি ছুটি। এখন যারা নির্বাচনী তারিখ নিয়ে কথা বলছে তারা তাদের পলিটিক্যাল বক্তব্য দিচ্ছে। যারা এসব কথা বলছে আমি তাদের কাছেই পরামর্শ চেয়েছি। কিন্তু তারা সুপরামর্শ দিতে পারেনি।
ডিসেম্বরের ২২ তারিখে নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচনের কারণে কোন প্রভাব পড়বে কিনা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন খারাপ কিছু হবে না। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হলে জকসু আটকে যাবে এমন কোন মেসেজ নেই। আমরা সুষ্ঠভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করবো। আমাদের এখনও পর্যন্ত কোন চাপ নেই। কোন প্রকার চাপে আমরা বিচলিত হবো না। জকসুর ভোটারবিভাগের চেয়ারম্যানরা ভোটার তালিকা পাঠাতে দেরি করেছে। আজও তিনটা বিভাগ পাঠিয়েছে।তফসিল অনুযায়ী আমরা কাল ভোটার তালিকা প্রকাশ করবো।
এদিন তফসিল ঘোষণা করে অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান তফসিল বিবরণীতে বলেন, আজ ৫ নভেম্বর বুধবার আচরণ বিধিমালা প্রকাশ করা হবে। ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি ৯ ও ১১ নভেম্বর। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ বুধবার ১২ নভেম্বর, এছাড়া ১৩ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর মনোনয়ন বিতরণ চলবে। এবং ১৭ ও ১৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। মনোনয়ন পত্র বাছাই করে ১৯ ও ২০ নভেম্বর সম্পন্ন করে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৩ নভেম্বর রবিবার। পরবর্তীতে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি ২৪ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর। এছাড়া প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হবে ২৭ ও ৩০ নভেম্বর। পরবর্তীতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৩ ডিসেম্বর বুধবার। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। প্রত্যাখ্যানকৃত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৯ ডিসেম্বর। এবং প্রার্থীদের প্রচারণা ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর। সবশেষে ২২ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ ও ২২-২৩ ডিসেম্বর ফল ঘোষণা করা হবে।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল শিক্ষার্থী সংসদ-২০২৫ কেন্দ্রিক নির্বাচনের সময় নিয়ে ছাত্রনেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সে সময়ে শাখা ছাত্র দলের অভিযোগ করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করছে। ছাত্রশিবিরের অভিযোগ একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে। গত ২ নভেম্বরে উপাচার্যের সভাকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জকসু নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায় শাখা ছাত্রদল। উক্ত সভায় নির্বাচন কমিশনারের নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত ২৭ নভেম্বরেই নির্বাচনের দাবি জানান শাখা ছাত্রশিবির।
নির্বাচনী আচারণবিধির এই এই মতাবিনিময় সভায় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, 'আমরা ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু নির্বাচন দেখেছি। সেখানে তফসিল ঘোষণার পরে তারা ২ মাস, পক্ষান্তরে ৩ মাস, এমনকি ৪ মাস পর্যন্ত সময় পেয়েছে। কিন্তু আমাদের নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে ২৭নভেম্বর।' তিনি বলেন, 'আমাদের সাংগঠনিকভাবে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি রয়েছে ক্যাম্পাসে। এরকম হলে আমরা বিধিমালা অনুযায়ী ক্যাম্পাসে কোনো প্রোগ্রাম করতে পারব না। নির্বাচনের ৯৬ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য অনুমতিক্রমে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনের সময়সীমা পিছিয়ে নিতে হবে। সময় তিনি নির্বাচন আচারণ বিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে পরামর্শ দেন।
এসময় নির্বাচন কমিশন একটি খসড়া তফসিল প্রদর্শন করলে সেখানে ১০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ দেখে তা আরো সময় নিয়ে পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানান শাখা ছাত্রদল। এসময় ছাত্রশিবির তা বিরোধিতা করে বলেন পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২৭ নভেম্বরেই নির্বাচন দিতে হবে। এসময় নির্বাচন নির্বাচন কমিশন জানান, আমরা সবার কথাই শুনেছি। গুরুত্ব সহকারে সবার কথা নোট করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে যৌক্তিক সময় জানাবো।
তবে আজ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন নিজ ফেসবুক পোস্টে জানান, জকসু নির্বাচন পেছানোর মতো কোন দাবি ছাত্রদল করেনি।
বুধবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন তার এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান, যাদের ক্যাম্পাসে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বয়ান নেই তাদের বয়ান হলো ছাত্রদল চায় নির্বাচন পেছাতে! অথচ এমন কোন দাবি করেনি জবি ছাত্রদল।