
বেজে গেছে ডাকসুর হুইসেল। চলছে দৌড়। মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শেষে এবার ডাকসু নিয়ে শক্তি সামর্থ্যের হিসাব কষছে দলগুলো। হলে হলে নিজেদের পক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে টানতে নানা কৌশল দেখা যাচ্ছে দলগুলোর। তবে শিক্ষার্থীরাও বসে নেই, প্রায় ৪০ হাজার ভোটার সিদ্ধান্ত কষছে, গতিবিধি নজরে রাখছে সংগঠনগুলো। অতীত ইতিহাস, সাম্প্রতিক কাজ ও মতাদর্শ হয়ে উঠছে বড় প্রভাবক।
তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে ছাত্রদল: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই ঠিক করবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল। তার আগে নেতাকর্মীদের মাঝে যারা নির্বাচন করতে চায় তাদেরকে ফরম তুলতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনে সবাই ফরম তুলেছে। তবে সেখানে একই পদে একাধিক ব্যক্তি ফরম নিয়েছে—সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে আবিদুল ইসলাম খান, মুমিনুল জিসানসহ অনেকে। এ নিয়ে ছাত্রদলের ভেতর অসন্তোষ ও সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছে চরম।
তবে শিগগিরই প্যানেল হবে ছাত্রদলের। সূত্র বলছে, আবিদুল ইসলাম খানকে সহ-সভাপতি (ভিপি), শেখ তানভীর বারী হামিমকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং তানভীর হাদী মায়েদকে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) করে গঠিত হতে পারে ছাত্রদলের প্যানেল। নবাগত দুই ব্যাচ শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে ছাত্রদলের। এছাড়া হল পাড়ার বেশ কিছু হলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সংগঠনটির প্রার্থীদের।
ভাঙনমুখর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ: এদিকে ডাকসু প্যানেল দেয়াকে কেন্দ্র করে ভাঙনের সুর পড়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোরামবাজি ইত্যাদি অভিযোগে একাধিক নেতা পদত্যাগ করেছেন, বিদ্রোহী হতে চাইছেন অনেকে। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে আব্দুল কাদের এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আবু বাকের মজুমদারের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনো বিবাদ না থাকলেও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদ নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছেন সাবেক সমন্বয়কদের হাতে গড়া এই দলটির কেউ কেউ। এনসিপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত মাহিন সরকার স্বতন্ত্রভাবে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন যদিও দলটির সূত্র জানাচ্ছে তাকে এজিএস পদে প্রার্থিতার অনুমোদন না দেয়ায় এমনটা করেছেন তিনি।
এদিকে কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদ্দাস্সির চৌধুরীকেও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে চাইছেন সংগঠনটির একাংশ। অন্যদিকে শুরু থেকেই এ পদে লড়াই করার কথা ছিল সদস্য সচিব জাহিদ আহসানের। এদিকে আবার একই পদের জন্য বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা টপ ফোরের একজন নেতা। সব মিলিয়ে তুমুল সংকটে দলটি।
বেকায়দায় বাম: বাম ছাত্র সংগঠনগুলো পড়েছে ভিন্ন রকমের বেকায়দায়। ডাকসুতে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য চাওয়া ইমিকে সামনে রেখে প্যানেল ঘোষণা করেছে তারা। প্যানেলের নাম দিয়েছে প্রতিরোধ পরিষদ। তবে প্যানেল ঘোষণার পরপরই মুখ থুবড়ে পড়েছে জনপ্রিয়তা। শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে সামনে রাখায় ইমেজ সংকটে ভুগছে ছাত্র রাজনীতির এই অংশটি। বামপন্থী ছাত্র সংকটের কারণে ফল সংসদে খুব বেশি দেখা যাবে না বামপন্থী প্রার্থীদের।
শিক্ষার্থী জোট নামে শিবির: এবারের ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থী জোট নামে প্যানেল দিয়েছে ছাত্র শিবির। ছাত্র সংগঠনটির পক্ষ থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ফরহাদের গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক আলোচনায় আসে। পাশাপাশি প্যানেলে রয়েছে ৪ জন নারী এর মধ্যে দুজন ছাত্রীসংস্থার নেত্রী। ইনকিলাব মঞ্চের ফাতেমা আক্তার জুমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে। এর মাধ্যমে কৌশলে শিবির তাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অস্বস্তি এড়িয়ে গেছে বলে মনে করছে অনেকে।
এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাইসুল রয়েছে শিবিরের প্যানেলে, আবার জুলাইয়ে চোখ হারানো জসিম উদ্দিনও রয়েছেন।
স্বতন্ত্র যারা: এদিকে একটি বিরাট অংশ আছে স্বতন্ত্র। সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছাড়া স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছে মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ এবং এবি জুবায়েরদের একটি অংশ। প্রায় ১৩ সদস্যের একটি প্যানেল তারা ঘোষণা করেছে। এখানে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন এবং সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদেরকে দেখা গেছে।
আরেকটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উমামা ফাতেমা। এখানে সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা চলছে, যদিও এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই শিক্ষার্থীদের মাঝে।
জামাল উদ্দিন খালিদের নেতৃত্বে আরেকটি স্বতন্ত্র প্যানেল গঠিত হয়েছে, এখানেও দেখা গেছে ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখদের।