
মিনার রশীদ
আমার গত লেখাটি নিয়ে পাঠকমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় সম্পাদক সাহেব ফোন করে পাঠকদের মন্তব্যের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নিজেও প্রায় সবগুলো মন্তব্য পড়েছি। বেশির ভাগ আপত্তি এসেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে সাপোর্ট করে কিছু লেখা নিয়ে। মন্তব্যকারীদের সবাই যে বিএনপিবিদ্বেষী, তা নয়। অনেককেই মনে হয়েছে বিএনপির প্রতি ভালোবাসার কারণে আহত পাখির মতো। জানি না আমার আজকের এই লেখাটি তাদের সেই ক্ষত নিরাময়ের জন্য কিছুটা মলমের কাজ করবে কি না।
সালাহউদ্দিন সাহেবকে আমি প্রখর জাতীয়তাবাদী চেতনার একজন পলিটিশিয়ান হিসেবেই জানি। ওনার বাবাও একজন বড় আলেম ছিলেন। আমার সঙ্গে সংযোগটা সে রকম আদর্শিক নৈকট্যের কারণেই ঘটেছে। আমার সেই লেখাটিতেও স্পষ্ট করেছিলাম যে তার বর্তমান কোনো কর্মকাণ্ড বা বক্তব্যকে আমি ডিফেন্ড করছি না। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে জনগণের রাজনৈতিক পালস বোঝার মতো প্রজ্ঞা ওনার যথেষ্ট রয়েছে।
জাপানে একটি উপদেশমূলক প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। ক্ষীরাক্ষেতে নিচু হয়ে জুতার ফিতা বেঁধো না। তাহলে কৃষক ভেবে বসতে পারে যে তুমি নিচু হয়ে ক্ষীরা চুরি করে খাচ্ছো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে ওই পরামর্শটি বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি খুবই প্রাসঙ্গিক!
বিএনপির বিরুদ্ধে ‘ভারতঘেঁষা’ হওয়ার যে প্রচারণা চলছে, তা মিথ্যা হলে চিন্তার কিছু নেই। তবে কিছু সত্য বা অর্ধ সত্য নিহিত থাকলে শুধু বিএনপিই নহে, পুরো জাতি ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হতে পারে।
বাংলাদেশের মানচিত্রের মাথা ও পা কেটে ইন্ডিয়ার সাত বোনের সঙ্গে আরো দুই বোন বানানোর পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। ইন্ডিয়ার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলাখুলিভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের সামরিকবিষয়ক সাময়িকী স্বরাজ্য (Swarajya)-তে ওই বিষয়ে করণীয় বলে দিয়েছে। Unlocking the landlocked নামক শিরোনামে এই নির্দেশনাটি রয়েছে। ২৫ মে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত শর্মা হুমকিমূলক বার্তা দিয়েছেন।
ভূরাজনৈতিক এমন একটা মুহূর্তে যেখানে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি দরকার, সেখানে একদল আরেক দলের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি শত্রুকে শক্তি জোগাবে। চিলে কান নিয়ে গেছে এটা শুনেই যেন চিলের পেছনে না দৌড়াই। দৌড়ানো শুরু করার আগে যেন কানে হাত দিয়ে দেখে নিই কান ঠিক আছে কি না।
বিএনপি কী আসলেই ভারতঘেঁষা দল হয়ে পড়েছে?
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঐতিহাসিকভাবে ভারতবিরোধী তথা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী রাজনীতির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই দলটির অন্যতম মূল রাজনৈতিক দর্শন ছিল জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ, বিশেষ করে ভারতের প্রভাব প্রতিহত করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এ প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে : বিএনপি কি আদৌ আর আগের মতো ভারতবিরোধী অবস্থানে আছে, না কি ধীরে ধীরে ভারতঘেঁষা রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে?
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আদর্শিক অবস্থান
বিএনপি জন্ম থেকেই ভারতকে সন্দেহের চোখে দেখেছে, কারণ বাংলাদেশে একটি নেপথ্য শক্তি হিসেবে সবসময় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে বলে বিএনপির অভিযোগ ছিল। ১৬ বছর এই অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে!
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া কিংবা দলীয় কৌশলপত্রে সবসময় একটি বিষয়ই প্রাধান্য পায়—বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে কোনো আপস নয়।
আমাদের গবেষণার খাতিরে বিএনপির বর্তমান প্রধান তারেক রহমানের আদর্শিক অবস্থানটি একটু পরখ করে দেখে নেওয়া যেতে পারে ।
তারেক রহমানের ভারত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতিগুলো (সংক্ষেপে)Ñ
বাংলাদেশের স্বার্থ ও সমতার ভিত্তি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কখনোই ভারতের শত্রু নয়, তবে বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে আপস করে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। আমরা চাই ভারত আমাদের বন্ধু হোক, কিন্তু সেই বন্ধুত্ব হতে হবে সমতার ভিত্তিতে।’—ভার্চুয়াল বক্তৃতা, ২০২২
সৎ প্রতিবেশী হওয়ার জন্য তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ‘আমরা ভারত বা অন্য কোনো দেশের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না, তবে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো পদক্ষেপ আমরা মেনে নেব না। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—প্রতিবেশী হোন, প্রভু নন।’ ‘আমাদের নীতিনির্ধারণ হবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ দেখে, কোনো বিদেশি শক্তির মনোরঞ্জনের জন্য নয়।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকরা সীমান্তে নিহত হবে আর সরকার চুপ থাকবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে সোচ্চার হব।’—বক্তব্য, ২০২১
নদীর পানিবণ্টনে ন্যায্যতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই বৈজ্ঞানিক, স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক নীতির ভিত্তিতে পানিবণ্টন হোক। ভারতকে আমাদের ন্যায্য হিস্যার স্বীকৃতি দিতেই হবে।’—ভার্চুয়াল আলোচনা, ২০২২
অর্থনীতিতে ভারসাম্য চায় বিএনপিÑএ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা মুক্তবাজারের পক্ষে, কিন্তু সেটা হতে হবে আমাদের উৎপাদকদের টিকিয়ে রাখার মতো ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে।’
পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনায় তিনি বলেছেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি কারো পক্ষে নয়, দেশের পক্ষে হতে হবে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হয় না।’ ‘বন্ধুত্বের নামে নতজানু কূটনীতি আমাদের চরিত্র নয়।’ ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতার ভিত্তিতে—তবেই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথ সুগম হবে।’
কাজেই বিএনপি সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে পার্টিপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে একটু গবেষণা করা উচিত।
সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও পরিবর্তিত কূটনৈতিক ধরন
তবে গত এক দশকে বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের পর থেকে বিএনপিকে একঘরে করার মাধ্যমে ভারতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ‘অবিশ্বস্ত’ বলে প্রচার করা হয়। ফলে বিএনপি-নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলতে শুরু করে। এটি বিএনপির একাংশের মতে কৌশলগত প্রয়োজন, আবার আরেক অংশ এটিকে আদর্শিক বিচ্যুতি মনে করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত
বিএনপির কিছু নেতা দিল্লিতে ‘ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোম্যাসি’ শুরু করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে, বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচন সামনে রেখে। ভারতপন্থি বলে পরিচিত কিছু সাবেক আমলা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বা সুশীলসমাজের ব্যক্তিদের বিএনপি ঘনিষ্ঠভাবে কাছে টানার চেষ্টাও দেখা গেছে।
জোট রাজনীতি ও আদর্শিক টানাপড়েন
বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে জোটবদ্ধ ছিল, যা ভারতের জন্য ছিল একটি ‘রেড ফ্ল্যাগ’। কিন্তু বিএনপির অনেক নেতা তখন জামায়াত থেকে দূরত্ব রাখার কথা বলেন, যা ভারতকে খুশি করতে চাওয়ার কৌশল হিসেবেও দেখা হয়। আবার একাংশ বলছে, এটি বাস্তব রাজনীতির অংশ, ভারতকে যেকোনোভাবে নিরপেক্ষ করতেই হবে।
ভারতীয় মিডিয়া ও বিশ্লেষকদের মনোভাব
ভারতের মিডিয়ায় একাধিকবার বলা হয়েছে—বিএনপি এখন বুঝতে পারছে যে দিল্লিকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসা অসম্ভব। ভারতবান্ধব বাংলাদেশি মিডিয়া এবং সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও এই মতবাদ পোষণ করেন। এদের সঙ্গে বিএনপির নৈকট্যও জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে! এর ফলে দলটি একটি মারাত্মক আদর্শিক ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। বিএনপিকে ভাঙার যে প্রচেষ্টা এক-এগারোতে শুরু হয়েছিল, সেই প্রচেষ্টা এখন আরো বেগবান হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিএনপিকে ভারতঘেঁষা হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য আমীর খসরুর যে ছবিটা ভাইরাল করা হয়েছে, সেটা দেখে বেশ কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে উদয় হয়েছে! কার পক্ষে সম্ভব এই ছবিটি তোলা এবং মোক্ষম মুহূর্তে প্রকাশ করার? তাহলে কি ভারতই চাচ্ছে বিএনপিকে ভারতঘেঁষা হিসেবে দেখানোর জন্য? এগুলো বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে!
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং জাতীয়তাবাদী চিন্তাশীল শ্রেণি, এখনো বিশ্বাস করে যে বিএনপি-ই অন্যতম দল, যারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। তাই বিএনপির যদি আদর্শচ্যুতি ঘটে বা ভারতপন্থি অবস্থানে চলে যায়, তাহলে তারা তাদের বিশাল সমর্থন হারাতে পারে। বিএনপির এই শুভাকাঙ্ক্ষীরা বেনিফিট অব ডাউটটি এখনো বিএনপিকেই দিতে চায়।
সুতরাং, বিএনপির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো : ভারতের সঙ্গে একটি ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বন্ধুত্ব’ বজায় রাখা অথচ জাতীয় স্বার্থ ও আদর্শ বিসর্জন না দেওয়া। এই ভারসাম্য রক্ষা করাটাই বিএনপির ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এ কথাটি সবাইকে বুঝতে হবে, শুধু বিএনপি নহে, এখন জামায়াতও যদি ক্ষমতায় আসে, তবে ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটা ওয়ার্কিং রিলেশন বজায় রাখতে হবে!
কাজেই নেতৃত্বকে যেমন সবার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, তেমনি জনগণের রাজনৈতিক পালস বুঝে সেভাবেই কথা বলতে হবে। এটার নামই রাজনীতি!
‘বিএনপি এখন ভারতঘেঁষা হয়ে গেছে—এই প্রচারণা মোকাবিলার কার্যকর উপায়গুলো
বিএনপি মূলত ডান এবং বামপন্থিদের একটি ককটেইল রাজনৈতিক দল। সমর্থক গোষ্ঠীর বড় অংশ ডানঘেঁষা হলেও নেতৃত্বের সারিতে ডান ও বামের মধ্যে একটা ভারসাম্য কাজ করত। এদেশের বামরা একটু ভারতঘেঁষা এবং ডানরা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করেন। বিএনপিতে যে বামদের সম্মিলন ঘটেছিল, তারা মূলত মওলানা ভাসানীর অনুসারী ছিলেন। ফলে বিএনপির ভারতবিরোধী চেহারাটি আপনা আপনি ফুটে উঠত। যেকোনো কারণেই হোকÑএখন বিএনপিতে ডান-বামের এই ভারসাম্যটি নষ্ট হয়ে পড়েছে। এ কারণেই বিএনপির অ্যাপিয়ারেন্সটি এ রকম হয়ে পড়েছে।
এদেশের মতলববাজ মিডিয়া বিএনপিকে জামায়াত গিলে ফেলছে বলে ভয় দেখাত! তখন বিএনপিকে কথিত জামায়াতের আছর থেকে হেফাজত করতে গিয়ে পুরোপুরি ডানপন্থি মুক্ত করে ফেলা হয়েছে। এখন বিএনপির নেতৃত্বে ডানপন্থি বলে কাউকে দেখা যায় না, ডানপন্থিরাও এখন সুবিধাপন্থি বনে গেছেন। কেউ ঝুঁকি নিতে চান না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিচে কৌশলগত ও সাংগঠনিক কিছু বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যেগুলোর মাধ্যমে বিএনপির সম্মুখে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভবÑ
১. সুনির্দিষ্ট আদর্শিক পুনর্ব্যাখ্যা
জাতীয়তাবাদ, সার্বভৌমত্ব এবং ভারতের আধিপত্যবিরোধী অবস্থানকে স্পষ্ট ভাষায় আবার ঘোষণা করতে হবে। ভারসাম্য রক্ষার্থে ডানঘেঁষা এক বা একাধিক প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী নেতাকে সামনে আনতে হবে!
২. একটি নীতিগত দলিল (Policy Brief) প্রকাশ করা
একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের দলীয় পলিসি পেপার প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে পরিষ্কারভাবে বলা থাকবে : ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চাই (সমতা ও পারস্পরিক সম্মান), বাংলাদেশে ভারতের আগ্রাসী ভূমিকাকে বিএনপি কীভাবে দেখছে, ভবিষ্যতের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, এসব স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে।
৩. জনসম্পৃক্ত ব্যাখ্যা : ক্যাম্পেইন ও ব্যানার ভাষা
প্রতিটি মিছিল, ছাত্র সংগঠন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্যানারে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন স্লোগানÑ‘জাতীয়তাবাদই বিএনপির চেতনা—আগ্রাসন নয়, সমতা চাই’। প্রচারপত্র, লিফলেট বা ডিজিটাল পোস্টারের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে দিতে হবে।
৪. গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জবাবদিহি
মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাসঙ্গিক এবং প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী কণ্ঠগুলোকে (যেমনÑসাংবাদিক, লেখক, প্রাক্তন কূটনীতিক) দিয়ে লিখিয়ে বা বলিয়ে প্রচারণার জবাব দেওয়া।
৫. ভারতের বাস্তব ভূমিকার তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা
ভারত কীভাবে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করে এসেছে, কীভাবে সীমান্তে হত্যা, পানির সমস্যা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে—এর দলিলভিত্তিক উপস্থাপন। ভারতের RAW কীভাবে কাজ করে—এ বিষয়গুলো বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা।
৬. যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মুসলিম বিশ্বের দিকে স্পষ্ট কূটনৈতিক সুর
শুধু ভারত নয়—বিএনপিকে একটি মাল্টিপোলার কূটনীতির পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নিতে হবে : চীন, ওআইসিভুক্ত দেশগুলো, পশ্চিমা শক্তি—সবার সঙ্গে সমতা রক্ষার বার্তাটি স্পষ্ট করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে বিএনপি কোনো আপস করবে না। জাতির স্বার্থে যা কিছু করা প্রয়োজন, প্রয়োজনে বিএনপি তা-ই করবে—দৃঢ়তার সঙ্গে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে।
৭. বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা
সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রোপাগান্ডা মোকাবিলার জন্য ‘জাতীয়তাবাদী প্রচারণা ও গণমাধ্যম সেল’ গঠন করে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া। এই সেলে তরুণ, তথ্যসচেতন ছাত্রনেতা, মিডিয়াকর্মী, গবেষক অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
সর্বশেষ দুটি কথা
প্রচারণা মোকাবিলা কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসিতা বা কোনো ফান বা কৌতুক নয়, এটি একটি কৌশলগত যুদ্ধ। বিএনপিকে এই যুদ্ধে জিততে হলে আদর্শে অটল থাকতে হবে, কিন্তু কৌশলে হতে হবে আধুনিক ও জনসম্পৃক্ত। জাতীয়তাবাদকে আবার সংগঠিত করতে পারলে এই প্রচারণা, মনের বাঘ হোক কিংবা বনের বাঘ হোকÑউভয়ই দূর হয়ে যাবে।