প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে হামলার কড়া নিন্দা জানালেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা জানান।
নাছির বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বরাবরই মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসনকে মব সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় মব সন্ত্রাসের কদর্য রূপ দেখতে পেলাম। এবার দৈনিক সংবাদপত্র প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটল। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, দল-মতনির্বিশেষে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সাম্প্রতিক হামলা সেই আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে সাম্প্রতিক এসব ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকেন কেন্দ্র করে মবের ঘটনা ঘটছে দাবি করে তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যখন দেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে এবং আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের আপামর মানুষের আশার বাতিঘর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হতে যাচ্ছে, ঠিক তখন দেশে অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে কারা দেশের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তায় ফেলতে চাচ্ছে, তা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
ছাত্রদল সম্পাদক বলেন, আমরা দুটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধের রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপির বক্তব্য দেখেছি। দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠন তছনছ করে দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারির আহ্বানসংবলিত বক্তব্যও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আবার শিবির সমর্থিত ডাকসু নেতাদেরকে আমরা প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের ওপর হামলার নিন্দা জানাতে দেখলাম। অন্যদিকে জামায়াতের আমিরকেও গণমাধ্যমে হামলার নিন্দা জানাতে দেখা গেছে। জামায়াত-শিবির স্পষ্টতই ‘সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো‘- এমন দ্বৈত নীতি অনুসরণ করছে। এই নীতি থেকে তাদেরকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। অথচ শহীদ হাদিকে আমরা প্রতিষ্ঠান ভাঙা নয়, গড়ার পক্ষে সরব থাকতে দেখেছি। ফলে যারা তাঁর নাম ব্যবহার করে এ ধরনের হামলা করছে, তারা শহীদ হাদির অমর্যাদা করছে, তারা শহীদ হাদির আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।
ফ্যাসিবাদবিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাছির বলেন, দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সকল সহযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, যেকোনো হঠকারী কর্মকাণ্ড থেকে সবাই বিরত থাকুন। দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সবাই সহযোগিতা করুন। গণতন্ত্রে উত্তরণ না ঘটলে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে- এমন আশঙ্কা সব মহল থেকেই করা হচ্ছে। সে রকম অবস্থা তৈরি হলে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা বিপদগ্রস্ত হবেন আর লাভবান হবে ফ্যাসিবাদী অপশক্তি। তাই সবার প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, কারো পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার পক্ষে থাকুন। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।