Image description

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারিত সময়েই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের যে তারিখ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করেছে, তা থেকে পিছিয়ে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। একই সঙ্গে তিনি অন্তত পাঁচ বছরের জন্য দেশে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।

গত বৃহস্পতিবার পূর্ব লন্ডনের একটি হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।

ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক সংসদীয় আন্ডারসেক্রেটারি অব স্টেট সীমা মালহোত্রার আমন্ত্রণে এক দিনের   সফরে লন্ডনে যান তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের চিন্তা হচ্ছে অন্ততপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য দেশে একটি জাতীয় সরকার হওয়া উচিত। নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব স্টেকহোল্ডারকে এতে আহবান জানানো হবে। তবে দুটি শর্ত মানতে হবে—প্রথমত, তাঁরা নিজেরা দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না।

দ্বিতীয়ত, বিচার সবার জন্য সমান হবে, এখানে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলবে না। যাঁরা এই শর্ত মানবেন, তাঁদের আমরা সাদরে আমন্ত্রণ জানাব।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর আমরা যদি বিরোধী দলে বসি, তাহলে সরকারে যাঁরা থাকবেন, সব বিষয়ে আমরা তাঁদের পূর্ণ সহযোগিতা করব। তাঁদের আলাদা করে চাইতে হবে না।

আর জনগণ যদি ভালোবেসে আমাদের নির্বাচিত করে, তাহলে আমরা ভিন্নভাবে চিন্তা করছি।’

ভারত প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘প্রকৃত বন্ধু হলে ভারত পলাতক আসামিদের ফেরত দেবে। বাংলাদেশের চিহ্নিত, পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত যত মানুষ আছে, সব কয়টিকে সসম্মানে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত—এটাই হবে বন্ধুত্বের কাজ। আমরা পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখতে চাই।’

তিনি বলেন, কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছেন নির্বাচনে জামায়াত জয়ী হলে কোন মডেলের সরকার হবে—আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান নাকি সৌদি আরবের মতো? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে মদিনা মডেলের সরকার হবে।

মদিনা মডেল ছিল সবার মিলেমিশে একসঙ্গে চলার মডেল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনা সনদের মাধ্যমে সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান। পরবর্তী সময়ে এখান থেকেই অন্যান্য সংবিধান বিকশিত হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার লন্ডনে সীমা মালহোত্রার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, আগামীতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি গড়া, আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করা, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ও আলোচনায় আসে।

তিনি বলেন, “অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। তিনি খুবই আন্তরিক ছিলেন এবং তাঁদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘তোমাদের জাতি এখন পরিবর্তন চায়।’ এর অর্থ হলো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মতো আমাদের উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধুরাও মনে করেন, বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন প্রয়োজন।”

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজের গ্লোবাল সিটিজেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আগ্রহ থাকা জরুরি এবং এই আগ্রহকে আমরা অন্যায় মনে করি না। তবে এই আগ্রহ যদি চাপে রূপ নেয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো দেশ যদি নিজের মতো করে আমাদের দেশের সরকারব্যবস্থা গড়ে দিতে চায়, সেটাও আমরা চাই না।’

চুরির অপরাধে হাত কাটার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা হাত কাটব না। যে অভাবের তাড়নায় চুরির দিকে হাত বাড়িয়েছে, তার হাতে আগে খাদ্য তুলে দেব, ইনশাআল্লাহ। তার প্রয়োজন আগে পূরণ করা হবে। সামাজিক ভারসাম্য আনা হবে, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর পরও কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে চুরি করলে তাকে দুর্ভাগ্যবান বলতে হবে। আমরা চাই না একটি হাতও কাটা পড়ুক।’

 

ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বললেন জামায়াত আমির

এদিকে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জামায়াত আমির বলেন, ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাজ্য সফরে থাকলেও তাঁর মন পড়ে আছে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে। প্রতিটি মুহূর্তে দেশের খোঁজ-খবর রাখছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলেও জানান।

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তিনি একটি আধিপত্যমুক্ত, স্বাধীন ও ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই সংগ্রামেই শাহাদাতবরণ করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তাঁর রক্ত বিফলে যাবে না।’

শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রকারী যেন স্যাবোটাজের মাধ্যমে আন্দোলনকে কলুষিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং প্রবীণ সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলা ও অপপ্রচারের তিনি তীব্র নিন্দা জানান। তাঁর মতে, স্বাধীন গণমাধ্যম রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিও তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।

হাইকমিশন কার্যালয়সহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ম অবমাননা অন্যায় হলেও আইন হাতে তুলে নেওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়। ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে তিনি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, দেশের মূলধারার ইসলামপন্থী দল ও সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী এবং আইন হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে নয়। পরিকল্পিতভাবে স্যাবোটাজের উদ্দেশ্যেই এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বিভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে দেশের সুরক্ষায় কাজ করতে হবে।

শেষে তিনি বলেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ করুক। মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে হেফাজত করুন।’