Image description

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নওগাঁয় জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা। চায়ের দোকান, হাটবাজার, রাস্তাঘাট- সব জায়গায় চলছে শুধু ভোটের হিসাব-নিকাশ। চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বিভিন্ন দলের নমিনিদের আমলনামা ও যোগ্যতা। ইতোমধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে জেলার ছয়টি আসনে।

সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই তালিকা প্রকাশের পরই বাধে বিপত্তি। জুলাই বিপ্লবের পর থেকে নানাভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া নেতারা পড়েছেন বিপাকে। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন তারা। এতে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমনকি দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে ধানের শীষের ভোট ব্যাংকে।

জামায়াত প্রায় এক বছর আগেই অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এতে দাঁড়িপাল্লার নমিনিরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছেন। ভোটের মাঠেও তারা বেশ পরিচিত হয়ে গেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) সম্প্রতি একটি আসন বাদে পাঁচটিতে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। কিন্তু দলটির এসব প্রার্থীকে আগে নির্বাচনি মাঠে দেখা যায়নি।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি জেলার তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল থেকে নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে জানা গেলেও মাঠপর্যায়ে তাদের দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা বর্তমানে নির্বাচনি মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন।

২০০৮ সালের আগে জেলার ছয়টি আসনের প্রায় সবকটি দখলে ছিল বিএনপির। এরপর আওয়ামী লীগ একের পর এক ভোট কারচুপির নির্বাচন দিয়ে আসনগুলো তাদের দখলে রাখে। এবার কিছুদিন আগে থেকেই আসনগুলোর প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে রেখেছে জামায়াত। বিএনপি ছয়টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করলেও সব আসনে ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তন দাবিতে অটল আছেন বঞ্চিত নেতারা।

মনোনয়ন পরিবর্তনের আশা নিয়ে আগের মতোই এলাকায় নির্বাচনি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা। তাদের পক্ষের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এতে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীরা। এ সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে ব্যস্ত জামায়াতের প্রার্থীরা।

নওগাঁ-১ (সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর)

আসনটিতে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান। জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম। এ এলাকায় বিএনপির তিনবারের সংসদ সদস্য ডা. সালেক চৌধুরী এবার দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার পক্ষের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে এখনো সোচ্চার।

বিএনপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর ও জামায়াতের মাহবুবুল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনি মাঠে। আসনটিতে অন্যান্য প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আবদুল হক শাহ চৌধুরীকে প্রচারের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া এনসিপি কৈলাশচন্দ্র রবিদাসকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট)

এখানে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী পরপর তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খান এবং জামায়াত প্রার্থী প্রকৌশলী এনামুল হক। উভয় প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন। ২০১৩ সাল থেকে দুবার ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতের এই প্রার্থী। এ কারণে আসনটিকে জামায়াতের ঘাঁটি বলে মনে করে দলটি। এনসিপি দলটির জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজার রহমান চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে এবং এবি পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন মতিবুল ইসলাম।

নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী)

এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হুদা আকন্দ বাবুল। এছাড়া জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নেতা মাওলানা মাহফুজুর রহমান। ইসলামী আন্দোলনের হয়ে নির্বাচন করবেন মুফতি নাসির বিন আসগর। তবে এ আসনেও বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে মহাদেবপুরের দুজন দলীয় নেতার পক্ষে কাজ করছেন অনেক নেতাকর্মী। এখানে পরিমল চন্দ্র উরাওকে এনসিপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আল আমিন এবি পার্টির প্রার্থী বলে জানা গেছে।

নওগাঁ-৪ (মান্দা)

আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. ইকরামুল বারী টিপুর নাম ঘোষণা করেছে। অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী করেছে জেলা শাখার আমির খন্দকার মোহাম্মদ আবদুর রাকিবকে। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থীকে পরাজিত করে জামায়াত নেতা নাসির উদ্দিন জিহাদী জয়লাভ করেন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া এনসিপির প্রার্থী হিসেবে আবদুল হামিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

নওগাঁ-৫ (সদর)

আসনটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে আছে জেলা শহর, পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার অন্য পাঁচটি আসনের প্রার্থী আগে মনোনয়ন দিলেও সবশেষে গত ৪ ডিসেম্বর এখানে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এখানে কয়েকজন যোগ্য নেতা কয়েক মাস ধরে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় প্রচার চালালেও অবশেষে ভাগ্য খুলেছে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলুর।

এখানে মনোনয়নবঞ্চিত অন্য নেতারা তাদের ক্ষোভ চেপে রাখলেও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজমুল হক সনির সমর্থক ও নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জাহিদুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল করে নজমুল হক সনিকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে নওগাঁ শহরে মশাল মিছিল ও সমাবেশ করছেন।

জামায়াত আসনটিতে আগে থেকেই প্রার্থী দিয়ে রেখেছে জেলা শাখার সেক্রেটারি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম সায়েমকে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের পক্ষে অবস্থান তৈরির জন্য কাজ করছেন। তবে জামায়াতকে তাদের নিজস্ব স্টাইলেই বেশি কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।

আসনটিতে এনসিপির হয়ে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক (জেলার একমাত্র মহিলা প্রার্থী) মনিরা শারমিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আবদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে এবং এবি পার্টির প্রার্থী হিসেবে আতিকুর রহমান কিছুদিন ধরেই প্রচার চালাচ্ছেন।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই ও রানীনগর)

এখানে বিএনপি থেকে দলটির আত্রাই উপজেলা সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম রেজুকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে জামায়াতের প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের আমির খবিরুল ইসলাম। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা রফিকুল ইসলাম নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর কবির এবং ২০০৮ সালে আসনটির বিএনপি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলু মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন। এখনো গণসংযোগ চালিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী মনে করছেন তারা হাল ছাড়েননি। সর্বশেষ ব্যর্থ হলে জনতার দাবির কারণে তাদের দুজনের মধ্যে যেকোনো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।