দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থায় এখনো দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সংকটাপন্ন রয়েছেন। চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার সম্ভাবনাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে জানান, শরিফ ওসমান হাদি এখনো ডিপ কোমায় রয়েছেন। চিকিৎসকদের নির্ধারিত ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণকাল আগামীকাল সোমবার রাতে শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যেই তার শারীরিক প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী চিকিৎসা–কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বড় কোনো পরিবর্তন না হলেও রোগীর কিছু অভ্যন্তরীণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা অবস্থা স্থিতিশীল ঘোষণা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এর আগে, ইনকিলাব মঞ্চ থেকেও জানানো হয়, হাদির অবস্থা এখনো অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি চিকিৎসা শেষে নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গুলি কানের ডান পাশ দিয়ে প্রবেশ করে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যার পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বর্তমানে একই হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ কারণে হাদি ও খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন।
সিলেট থেকে আসা এক ব্যক্তি জানান, হাদির পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্যও তারা দোয়া করতে এসেছেন। তার মতে, শরিফ ওসমান হাদি প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং হামলার ঘটনাটি নৃশংস।
জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা শরিফ ওসমান হাদি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই তার ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার পর হাদির সমর্থকেরা এর দায় পতিত আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ঘটনাটিকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি পৃথক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের একজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাকে ধরিয়ে দিতে তথ্য দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত করে এর মালিককে আটক করার তথ্যও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।