Image description
প্রত্যাবর্তনের দিন ২০ লাখ লোকসমাগমের প্রত্যাশা

দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৫ ডিসেম্বর তার দেশে ফেরার দিনকে ইতিহাসের বড় মাইলফলক হিসাবে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে ফিরবেন জাতীয়তাবাদের এই কান্ডারি। এজন্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি তাকে বরণ করতে নেওয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি। গঠন করা হয়েছে কমিটিও। সেদিন ঢাকায় অন্তত ২০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন দলটির নেতারা। তবে নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তাও রয়েছে। তার নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) দেওয়ার জন্য সরকারকে দু-একদিনের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার কথা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, দেশে ফিরলে তারেক রহমানকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে সরকার-এমন নিশ্চয়তা ইতোমধ্যে পেয়েছে বিএনপি। সরকারের একটি মহল থেকে জানানো হয়েছে, পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি বিশেষায়িত টিম ইতোমধ্যে তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে তারেক রহমানের বর্তমান রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশের নিরাপত্তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করে দলটি। তাই এসএসএফ দিতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সরাসরি যাবেন মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে। তিনি প্রথমে গুলশানের ফিরোজায় উঠবেন। পরে পাশের আরেকটি বাসায় থাকবেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান যুগান্তরকে জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনের দিন শান্তিপূর্ণভাবে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের। এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিতে সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে সরকার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১-এর ধারা ২(ক) অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসাবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ রয়েছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের সবচেয়ে বড় দলের গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় নেতা। তিনি দেশের মানুষের কাছে এখন অবিসংবাদিত নেতা। তার নিরাপত্তা দেশের জন্য বেশি জরুরি। নিরাপত্তায় দলের পক্ষ থেকে এসএসএফ চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। আশা করি সরকার অনুমতি দেবে। কারণ, এর আগেও ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে কিছু সময়ের জন্য ভিভিআইপি ঘোষণা করেছিল তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক যুগান্তরকে বলেন, তারেক রহমান এখন আর শুধু বিএনপির নেতা নন, তিনি সর্বজনীন নেতা, জনমানুষের নেতা। তার ফেরার দিন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। নেতাকর্মীদের এদিন ঘরে রাখা যাবে না। এটা আবেগের জায়গা। সবাই এদিন বিমানবন্দরে ছুটবেন তাদের প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য।

বিএনপির নেতারা জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ, স্বপ্ন ও সংগ্রামের প্রতীক। বহুমাত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে অসীম ধৈর্য, নির্যাতন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবিচল থাকার উদাহরণ তিনি। জাতির দুঃসময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে তিনি আশার আলো ও ঐক্যের প্রতীক। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভদ্রতা, নৈতিকতা ও সৌজন্যবোধ ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি নিরন্তর আপসহীন সংগ্রামী। বিএনপি ও বাংলাদেশের একজন অপরিহার্য রাজনীতিক। প্রায় ১৮ বছর তিনি যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত। তিনি ফেরার দিন লাখ লাখ নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ তাকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় থাকবেন-এটাই স্বাভাবিক। দিনটি দেশের জন্য ঐতিহাসিক হবে।

দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, তারেক রহমান দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন এবং কোথায় অফিস করবেন, তাও চূড়ান্ত। এছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এ গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে গাড়ি চলে এসেছে বলে দাবি সূত্রের।

দলীয় সূত্র আরও বলছে, গুলশান-২-এর ‘ফিরোজা’ ভবনে থাকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন)। এর পাশের বাড়িটি ১৯৮১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর তৎকালীন সরকার তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ওই বাড়ির নামজারি সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র বিএনপির চেয়ারপারসনের হাতে হস্তান্তর করে। দেশে ফিরে এই বাড়িতেই থাকার কথা রয়েছে তারেক রহমানের। চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই অফিস করবেন তারেক রহমান। এজন্য তার বসার উপযোগী করেই কক্ষটি সাজানো হয়েছে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা যুগান্তরকে বলেন, তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আগে গুলশান-২-এর ফিরোজায় উঠবেন।

এদিকে তারেক রহমান দেশে ফেরার খবরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক হাওয়া বইছে। দলগুলো মনে করছে, এর মাধ্যেমে নানা জল্পনাকল্পনার অবসান হবে। তাছাড়া এ মুহূর্তে দেশের প্রয়োজনে তারেক রহমানকে বেশি প্রয়োজন। নেতারা আশা করেন, তারেক রহমান ফিরলে দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য আরও দৃঢ় হবে, যা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হবে।

প্রসঙ্গত, ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রায় ১৮ মাস কারান্তরীণ থাকার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান। তিনি শাশুড়ির শয্যার পাশে রয়েছেন।