ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে সংক্রমণ নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাড়া দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাত ২টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা শেষে ফেরার পথে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) আমাকে চিনতে পেরেছেন। আমরা সালাম দিলে তিনি উত্তর দিয়েছেন। আমাদের আবেদন থাকবে, সারাদেশের মানুষ শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নয়, ব্যক্তিগতভাবেও যেন উনার জন্য দোয়া করেন।’
হাসপাতালে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ও জাতীয়বাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
সংকটাপন্ন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এর আগে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। বের হওয়ার পথে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
মঈন খান বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন একটু আগে মেডিকেল বোর্ড বসেছিল। বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করেছেন। তারা প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার, ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্যারামিটারগুলো স্টাডি করছেন বোর্ড এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে রাতে হাসপাতালে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন।
পরে গভীর রাতে আসিফ নজরুল ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এখনি ফিরলাম। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা একদমই ভালো না। সবাই দোয়া করবেন উনার জন্য।’
সরেজমিন শুক্রবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখা যায়। তাঁরা মূলত বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতেই হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্বেগ জানিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞা জানিয়েছেন।
এছাড়া শুক্রবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির সংবাদে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাঁর সার্বিক শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। আল্লাহতায়ালা যেন তাঁকে দ্রুত পূর্ণ সুস্থতা দান করেন, সব কষ্ট সহজ করে দেন এবং তাঁর জন্য উত্তম ব্যবস্থা করে দেন।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকেরা জানান, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর একাধিকবার শারীরিক নানা জটিলতায় তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।