মহিলা জামায়াত ও ছাত্রী সংস্থার নারীদের উপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ তুলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, এটা আগুন নিয়ে খেলা করা শামিল। আগুন নিয়ে যারা খেলা করে তাদের পরিণতি অতীত খারাপ হয়েছে, ভবিষ্যতেও খারাপ হবে। একই সাথে দিল্লি, পিন্ডি ও লন্ডনে বসে বাংলাদেশ চালানোর স্বপ্ন না দেখতেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর ভাষানটেক বিআরপি মাঠে ঢাকা–১৭ আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. এসএম খালেদুজ্জামানের উদ্যোগে যুব-ছাত্র, নাগরিক গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এ সময় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
শিবির সভাপতি বলেন, আমাদের স্বপ্ন এই বাংলাদেশ আধিপত্যবাদমুক্ত, স্বৈরাচারমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত, ইনসাফপূর্ণ একটি বাংলাদেশে পরিণত হবে। আমাদের স্বপ্ন এই বাংলাদেশের যত সম্ভাবনা রয়েছে, এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই জনপদে বারবার শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর থেকে শুরু করে সকলে জীবন দিয়েছে, আবু সাঈদ জীবন দিয়েছে, আলেম-ওলামারা জীবন দিয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মুগ্ধ, শহীদ ওয়াসিম-শান্তসহ হাজার হাজার ছাত্রজনতা জীবন দিয়ে এই বাংলাদেশকে নতুন করে, নতুন স্বপ্নের আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলার এক পথ আমাদের সামনে রচনা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সে স্বপ্ন নিয়ে যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা লক্ষ্য করেছি সে অতীতের ফ্যাসিবাদী এবং আধিপত্যবাদের দালালদের শক্তি আবার বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা দেখছি যে একটি দল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, সে সংস্কারে নোট অব ডিসেন্টের নামে সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি তাদের হাতে এখন পর্যন্ত গত দেড় বছরে দুইশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। যে দল নিজেদের কর্মীদেরকে নিজেরা হত্যা করে, যে দল বাংলাদেশের সংস্কারে বিশ্বাস করে না, যে দল বাংলাদেশে ন্যায় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হোক এটা চায় না, সে দলকে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষমতায় আর দেখতে চায় না।
বিএনপি বারবার নিজেকে বড় দল দাবি করে শিবির সভাপতি বলেন, তারা নির্বাচনের আগে নিজেদেরকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হিসেবে প্রকাশ করার, জাহির করার চেষ্টা করে। আপনাদের যদি সৎ সাহস থাকে একটি নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য অবাধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নেন। মানুষ হত্যা করে এই বাংলাদেশের পরিবেশকে আর নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। এই বাংলাদেশের মানুষ কোন চাঁদাবাজকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই বাংলাদেশের মানুষ কোন নারী ধর্ষনকারীকে, ইভটিজিংকারীকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যারা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে, যারা মানুষের অধিকারকে হরণ করে, ইনসাফকে হরণ করে ক্ষমতায় যেতে চায়, যারা মানুষকে হত্যা করে ক্ষমতায় যেতে চায়, তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ আর ক্ষমতায় যেতে দিবে না।
‘বিদেশ থেকে’ দেশ পরিচালনার স্বপ্ন দেখার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে বসে বসে পরিচালনার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেকের মাঝে। বাংলাদেশকে কি বিদেশ থেকে পরিচালনা করা যাবে? না বাংলাদেশে এসে পরিচালনা করতে হবে? এই বাংলাদেশের মানুষের সাথে জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সাথে পরিশ্রম করে যারা বাংলাদেশকে গড়তে জানবে, তারাই আগামী দিনে বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাবে। দিল্লিতে, পিন্ডিতে, লন্ডনে বসে বসে বাংলাদেশ চালানোর স্বপ্ন দেখবেন না। এটা দিবাস্বপ্নে পরিণত হবে। সৎ সাহস থাকলে বাংলাদেশে এসে মানুষের সাথে রাজনীতি করে এরপর ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখুন।
শিবিরের উপর বিগত সময়ে হওয়া নিপীড়নের বিবরণ দিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রশিবির ১৯৭৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের ছাত্র সমাজকে, যুব সমাজকে নৈতিকভাবে মেধার ভিত্তিতে গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল সে ১৯৭৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের শত শত ভাইদেরকে জীবন দিতে হয়েছে। আমাদের ভাইদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যখন প্রশ্ন করেছিলাম, কী আমাদের অপরাধ ছিল? কেন আমাদের ভাইদের উপর এত নির্যাতন, এত গুম, এত খুনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে? তখন একটাই উত্তর পাওয়া গিয়েছে, আমরা শুধুমাত্র এই ঘোষণা দিয়েছিলাম যে আমরা শুধুমাত্র এক আল্লাহর কাছে আমাদের নিজেদের বিশ্বাসকে সপে দিয়েছিলাম, এই অপরাধে শহীদ সাব্বির, শহীদ আইয়ুব থেকে শুরু করে, আমাদের প্রথম সভাপতি শহীদ মীর কাসেম আলী, শহীদ কামরুজ্জামান থেকে শুরু করে শত শত ভাইদেরকে জীবন দিতে হয়েছে। আমাদের শত শত ভাইদেরকে গুম করা হয়েছে, নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে রিমান্ডে নিয়ে। অনেক ভাইদের লাশ খুঁজে পাওয়া গেছে নদীতে, খালে, বিভিন্ন রাস্তার ধারে। তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে আমাদের অনেক ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের পর অনেকগুলো আয়নাঘর আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল আমাদের সাতজন ভাই এখনো ফিরে আসেনি। আমরা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বারবার বলেছি, তাদের পরিবারকে নিয়ে এসে বিভিন্ন আবেদন উপস্থাপন করেছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের সেই ভাইদেরকে কোন খোঁজ সরকার দিতে পারেনি। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব, অতি সত্তর আমাদের ভাইদের এই খোঁজ আমাদের বাংলাদেশের কাছে, তাদের পরিবারের কাছে দিতে হবে। আমাদের অসংখ্য ভাইদেরকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, হাত কেটে ফেলতে হয়েছে, চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই সকল লড়াই-সংগ্রাম, এই ত্যাগ-কোরবানির পথ মাড়ি দিয়ে যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি, এখন এসে নতুন করে আমাদেরকে ভয় দেখানো, আমাদেরকে থামিয়ে দেওয়ার যে রাজনীতি, এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
অতীতে শিবিরকে যারা থামিয়ে দিতে চেয়েছে তারা নিজেরাই থেমে গিয়েছে উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, অতীতে যারা আমাদেরকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল তারাই বাংলাদেশের মানুষের গণআদালতে নিষিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এজন্য আমাদেরকে ভয় দেখাতে আসবেন না। আমরা এক আল্লাহর কাছে নিজেদের কপাল এবং নিজেদেরকে সপে দিয়েছি। আমরা ঘোষণা দিয়েছি- আমরা শুধুমাত্র এক আল্লাহর কাছে নিজেদের মাথাকে নত করি। দুনিয়ার কোন শক্তি, দুনিয়ার কোন খোদাদের কাছে আমরা নিজেদের মাথা নত করি না। এজন্য এই শক্তিকে যারা রুদ্ধ করতে আসবেন, বাধা সৃষ্টি করতে আসবেন তারাই পৃথিবীর ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে পরিণত হবেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা নারীদের উপর হামলা করছে অভিযোগ তুলে শিবির সভাপতি বলেন, আগামীর বাংলাদেশে হবে ন্যায় ইনসাফের রাজনীতি। আগামী বাংলাদেশে কোন ধরনের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির রাজনীতি হবে না। আজকের এই জেনজি, আজকের এই জেনারেশন জুমার, জেনারেশন আলফা এ ধরনের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির নোংরা রাজনীতি পছন্দ করে না। আমরা সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি, একটি দল আমাদের নারী এবং বোনদের উপর হামলা চালাচ্ছে। এর চেয়ে নির্লজ্জ কাজ বাংলাদেশের জমিনে জুলাই এবং আগস্টের পরে আর কিছু হতে পারে না। আমরা দেখেছি একটি দল আমাদের কোরআন ক্লাস কোরআন তালিম প্রোগ্রামে হামলা চালাচ্ছে। যারা কোরআনের তালিমে কোরআনের প্রোগ্রামে হামলা চালাবে। এটা আগুন নিয়ে খেলা করা শামিল। আগুন নিয়ে যারা খেলা করে তাদের পরিণতি অতীত খারাপ হয়েছে, ভবিষ্যতেও খারাপ হবে।