Image description

জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের প্রতীকে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের পর এখন বিধান এমনই দাঁড়িয়েছে। তাতে আগামী জাতীয় সংসদে দুই–তিনটি দল কর্তৃত্ব করবে কি না, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে নৌকার অনুপস্থিতিতে প্রতীক হিসেবে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার প্রাধান্য বিস্তারের ইঙ্গিতও স্পষ্ট হচ্ছে।

এত দিন জোট গড়লে বড় শরিক দলের প্রতীকে অন্যদের ভোট করার সুযোগ ছিল। এবার সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সংশোধিত আইন অনুসারে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে অংশ নিতে পারবে না।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি তৎপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। বিএনপি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও ৩৭টি আসন ফাঁকা রেখেছে। বলা হচ্ছে—এগুলোতে জোটের শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে। জামায়াত সারা দেশেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে তারাও ইসলামী সাতটি দলকে নিয়ে একধরনের জোট করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কোনো জোটে ভিড়ে কি না, সেই আলোচনা আছে।

২০০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে প্রধান দলগুলো জোটবদ্ধ হয়েই অংশ নেয়। এসব নির্বাচনে সবাই না হলেও জোটের শরিক দলগুলোর অনেক প্রার্থীই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে জয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। মূলত নিজ দলের প্রতীকে ভোট করে জয়ী হওয়া কঠিন ভেবেই জোটের বড় দলের জনপ্রিয় প্রতীকে ভোট করা হতো।

বিএনপির ধানের শীষ এবং জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা পুরোনো প্রতীক। অন্যদিকে অনেক আলোচনা-জটিলতার পর শাপলা কলি প্রতীক পেয়েছে এনসিপি। জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙল রয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় নৌকা থাকবে না ভোটে।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধন করেছে। জোটবদ্ধ দলের প্রতীক বরাদ্দ প্রসঙ্গে সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে, যদি দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যৌথ প্রার্থী দিতে সম্মত হয়, তবে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। তবে ভোট করতে হবে প্রার্থীর নিজ দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীকেই।

গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত অনুমোদন পায়। দলীয় প্রতীকে ভোটের বাধ্যবাধকতাকে জামায়াত ও এনসিপি স্বাগত জানালেও বিএনপি আপত্তি তুলেছিল। সেই আপত্তি উপেক্ষা করেই ৩ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারি হয়।

তরুণ ও যুবকদের নিয়ে গত মে মাসে ঢাকায় তারুণ্যের উৎসব করেছিল বিএনপি
তরুণ ও যুবকদের নিয়ে গত মে মাসে ঢাকায় তারুণ্যের উৎসব করেছিল বিএনপিফাইল ছবি: প্রথম আলো

জোটভুক্ত দলগুলো আর অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না—এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জোট রাজনীতির পুরোনো এক কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। এত দিন বড় দলের প্রতীক ছোট দলগুলোর জন্য ছিল টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন। এখন সেই সুযোগ না থাকায় প্রশ্ন উঠছে—জোট থাকবে নাকি কেবল কাগজে থাকবে? থাকলেও কি শরিকেরা জয়ী হতে পারবে?

ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার প্রাধান্যের সম্ভাবনা

একটানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর দলটির কার্যক্রম পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর নির্বাচন কমিশনও তাদের নিবন্ধন স্থগিত করায় তাদের আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। বিগত তিন নির্বাচনের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থাও নড়বড়ে।

বিএনপি ৩৭টি আসন ফাঁকা রেখেছে মিত্রদের জন্য। ইসলামী সাতটি দলকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বাম দলগুলোও জোটবদ্ধভাবে ভোট করার কথা বলছে। জাতীয় পার্টি এখনো ভোটের মাঠে নামেনি। ১৪ দলের শরিক দলগুলোরও কোনো তৎপরতা নেই।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। কখনো বিএনপি আবার কখনো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এর বাইরে প্রয়াত এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব দেখা গেছে সংসদে। ২০১৪ সালের পর পরবর্তী তিনটি নির্বাচন অনেকটা একতরফা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের জোট শরিকদের জয়ী করে সংসদে আনে।

বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপি নিঃসন্দেহে বড় রাজনৈতিক শক্তি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে না থাকা, জাতীয় পার্টির কোণঠাসা অবস্থা এবং গত কয়েক মাসে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিপুল জয় জামায়াতের শক্তির জানান দিচ্ছে। এর বাইরে নতুন হলেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়াদের দল এনসিপিও আলোচনায় আছে।

ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। নেতা–কর্মীদের চাঙা রাখতে গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে করেছিল ছাত্র ও যুব উৎসব
ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। নেতা–কর্মীদের চাঙা রাখতে গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে করেছিল ছাত্র ও যুব উৎসবছবি: প্রথম আলো

বিএনপির ধানের শীষ এবং জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা পুরোনো প্রতীক। অন্যদিকে অনেক আলোচনা-জটিলতার পর শাপলা কলি প্রতীক পেয়েছে এনসিপি। জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙল রয়েছে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে আসছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, শরিক ও মিত্রদের নিয়ে জোটগতভাবে ভোট করবে। তাদের জোট ও মিত্রদের মধ্যে আছে—এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, লেবার পার্টি, ১২–দলীয় জোট, সমমনা জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শরিকদের নৌকা প্রতীক দিলেও দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছিল। ফলে নৌকা প্রতীক নিয়েও আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন না থাকায় জয়ী হতে পারেননি শরিক দলগুলোর অনেক নেতা।

বিএনপির একসময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতের নেতারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেছিলেন। কারণ, তখন তাঁরা ইসির নিবন্ধন হারিয়েছিলেন। জামায়াত এখন ইসলামী আন্দোলনসহ আরও সাতটি দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছে। ঘোষণা দেওয়া না হলেও তারা জোটগতভাবে কিংবা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

এনসিপি বিএনপির সঙ্গে জোট করতে পারে, এমন আলোচনা হয়েছে। তবে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোটের অংশ হতে চায় না বলে জানা গেছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টি এখনো ভোটের মাঠে নামেনি। আওয়ামী লীগের জোট ১৪ দলের শরিক দলগুলোর অনেকেটিরই শীর্ষ নেতা কারাগারে বা পলাতক। বাম দলগুলোও জোটবদ্ধভাবে ভোট করার কথা বলছে।

তবে ২০০১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে যে ভোটের ইতিহাস, সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত জরিপ বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার মধ্যেই হবে। অন্য দলগুলো তাদের সমর্থন নিয়ে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করবে। এর ফলে জোটের প্রধান দল ও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা আন্তরিক না হলে অন্য শরিকদের জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

জোটের প্রধান দলের ওপর অন্যদের ভাগ্য

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফজলুল হক আমিনী প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেবার তিনি ভোট করেছিলেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। এর আগে তিনি নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করে সুবিধা করতে পারেননি। একইভাবে শাহীনুর পাশা চৌধুরীও ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এই দুজনের বিরুদ্ধে বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চারটি আসন পেয়েছিল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে।

ওই নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। জামায়াত নিজ দলের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়েই ভোট করে। তবে ওই আসনগুলোতে বিএনপির ধানের শীষের কোনো প্রার্থী ছিল না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জোটের মূল শরিক দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুরোপুরি সমর্থন ও ভোট দেওয়ার কারণেই ২০০১ সালে অপেক্ষাকৃত ছোট শরিকেরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছিল।

২০১৮ সালের নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। ওই নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে বিএনপি, তাদের মিত্র ও জোটসঙ্গীরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নির্বাচনে অংশ নেয়।

ওই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। গণফোরামের আরেক প্রার্থী মোকাব্বির খান উদীয়মান সূর্য প্রতীকে ভোট করে সিলেট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। অবশ্য ওই আসনে বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা প্রার্থী হয়েছিলেন। আদালতের রায়ে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হলে ধানের শীষের কেউ ছিলেন না। আর আওয়ামী লীগ তাদের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় নৌকায় কেউ প্রার্থী ছিলেন না। প্রতিষ্ঠার পর সেবারই প্রথম গণফোরামের দুজন সংসদ সংসদ হন। মূলত বিএনপির ভোটেই গণফোরামের দুজন জয়ী হন, তা অনেকটাই স্পষ্ট।

২০১৪ থেকে ২০২৪ সমঝোতার ভোটেও জোট

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর প্রথম ভোট হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। ১৫৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও দলটির শরিকেরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে সমালোচনার জন্ম দেয়। ১৪৭ আসনে হওয়া ভোটও ছিল সহিংসতা, জাল ভোট আর অনিয়মে ভরা।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি নিজস্ব প্রতীকে ভোট করে। অন্য শরিকেরা কোথাও নিজের প্রতীকে এবং কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করেন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নৌকা নিয়ে ভোট করা আসনগুলোতে শরিকেরা জয়ী হয়েছেন। অন্যগুলোতে তাঁরা প্রার্থী দিয়েছিলেন মূলত অংশগ্রহণ বাড়াতে।

চট্টগ্রাম-২ আসনে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনে দলটির তৎকালীন মহাসচিব এম এ আউয়াল নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে সংসদ সদস্য হন। দলটির আরও অনেক প্রার্থী নিজ দলের প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে ভোট করে জিততে পারেননি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি আসনের প্রার্থীরা নিজ দলের প্রতীকের পরিবর্তে নৌকা প্রতীকে ভোট করে জয়ী হন।

ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে ২০১৮ সালে হয়েছিল একাদশ সংসদ নির্বাচন। কুমিল্লার চান্দিনার পশ্চিম বেলাশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলা হয়েছিল
ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে ২০১৮ সালে হয়েছিল একাদশ সংসদ নির্বাচন। কুমিল্লার চান্দিনার পশ্চিম বেলাশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলা হয়েছিলফাইল ছবি: প্রথম আলো

সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ‘আমি আর ডামি’ নামে পরিচিতি পায়। ওই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমঝোতার ভিত্তিতে ১৪ দলের শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়ে দেয়। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ সবাই নৌকা প্রতীকে ভোট করেন। কিন্তু রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের রেজাউল করিম তানসেন ছাড়া সবাই পরাজিত হন। নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও শরিকদের পরাজিত হওয়ার পেছনে মূল কারণ শরিকদের সবাইকে জয়ী করে আনার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়নি আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে দায়িত্ব নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শরিকদের নৌকা প্রতীক দিলেও দলটির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ওই সব আসনে স্বতন্ত্র ভোট করতে উৎসাহিত করা হয়। মূলত বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধীদের বর্জনের মধ্যে হওয়া নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতেই এই উদ্যোগ। এর ফলে নৌকা প্রতীক নিয়েও আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন না থাকায় জয়ী হতে পারেননি শরিক দলগুলোর নেতারা।

একইভাবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারা জয়ী হতে পেরছিল ১১টিতে। অন্যগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন।

আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য চিত্র

অতীত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জোটগত নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত ছোট শরিকদের জয়ী হওয়ার মূল কারণ তিনটি। ১. জোটের শরিক দলের প্রার্থীকে মূল শরিকের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ দেওয়া। ২. প্রধান দলের কাউকে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা। ৩. প্রধান শরিকের কর্মী-সমর্থকদের অন্য শরিক দলের প্রার্থীর সমর্থনে নামানো। এগুলো যখন ঠিকঠাক হয়েছে তখন জোটের শরিক দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ২০২৪–এ এর ব্যতিক্রম হয়েছে বলে অনেক আসনে সমঝোতার পরও শরিকেরা হেরেছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, তাতে ৩৭টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এসব আসনের কোনো কোনোটি শরিক ও মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে চাইলেই বিএনপি তাদের প্রতীক ধানের শীষ তাদের বরাদ্দ করতে পারবে না। ফলে দলটির সব কর্মী-সমর্থক জোটের শরিক দলের প্রার্থীর পক্ষে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করবেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। এ ছাড়া বিএনপির কোনো নেতা স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে গেলে বিপদ আরও বাড়বে। একই কথা প্রযোজ্য জামায়াতসহ অন্য দলগুলোর জোটের ক্ষেত্রেও।

গত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের ছোট শরিকদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে। বিএনপি ও জামায়াত সেটা কতটা করতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।

এত দিন জোটের কারণে সংসদে উপস্থিত থাকা বহু ছোট দল এবার নিশ্চিতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বড় ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ, তাদের প্রতীক ও সংগঠন—কোনোটিরই ভোট টানার শক্তি বড় দলের মতো নয়। অবশ্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মনে করছে, এটা তাদের জন্য আত্মপরিচয় পুনর্গঠনের একটি সুযোগ। এর ব্যতিক্রম হলে আগামী জাতীয় সংসদ গুটিকয় দলের সংসদে পরিণত হবে।