আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের দুটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম. এ. মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম. আহমেদ।
এম. এ. মালিক ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা–ফেঞ্চুগঞ্জ–বালাগঞ্জ) আসনে, আর কয়ছর আহমেদ লড়বেন সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর–শান্তিগঞ্জ) আসনে।
গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের টানা শাসনামলে তারা যুক্তরাজ্যে থেকে দলীয় আন্দোলন ও প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে আওয়ামী লীগবিরোধী জনমত গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরগুলোর সময় তাদের নেতৃত্বে বিএনপির জোরালো প্রতিবাদও হয়। দলীয় প্রধান তারেক রহমানের নির্দেশনায় যুক্তরাজ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তারা নিয়মিত ছিলেন, ফলে তাঁর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন এই দুই নেতা।
এম. এ. মালিকের সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাড়ি একাধিকবার হামলা ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ফিরে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশায় সরব হন। এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময় ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি সক্রিয় ছিলেন। দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে বড় পরিসরে মিলাদ মাহফিলও আয়োজন করেন তিনি। তবে সিলেট-৩ আসনে আরও কয়েকজন শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় প্রচারণা ও অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা তীব্র হয়।
প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার এম. এ. সালাম, ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল।
অন্যদিকে, কয়ছর আহমেদ দেশে ফিরে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ৯০–এর দশকে জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ছড়িয়ে দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান এবং সেখানে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন।
এই আসনে অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি এম. এ. সাত্তার, এম. এ. কাহার, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন ও নাদের আহমদ প্রমুখ।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় এম এ মালিক বলেন, ‘দল এবার ত্যাগী প্রার্থীদেরকে মূল্যায়ন করেছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কারণ বিএনপি একটি সুশৃঙ্খল দল। আমি আশা করি, অতীতের মতো এবারও সেই শৃঙ্খলা বজায় রেখে সবাই দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করবে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমি এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থেকেছি, তাদের সমস্যার সমাধানে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। সেই হিসেবে দল আমাকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছে।’
কয়ছর এম আহমদ জানান, ‘সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের হাইকমান্ডের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বহু বছর পর বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হলো। এখন শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ধানের শীষের বিজয়ের জন্য আমরা মাঠে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘অনেক যোগ্য নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন একবারে একজনকেই দেওয়া সম্ভব। তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। আশা করছি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সুনামগঞ্জ-৩ আসনটি আমাদের নেত্রী মা খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে উপহার দিতে পারব।’
এদিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে এই বৈঠক হয়।
প্রসঙ্গত, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের প্রথমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।