Image description

একদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান, আবার সরকারের সঙ্গেও টানাপোড়েন। আর এসবের মধ্যেই আগামী মাসে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে মীমাংসা করতে হবে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর। সেই কারণেই নভেম্বর হতে যাচ্ছে রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণী মাস। বিশ্লেষকরা বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুর সুরাহা সম্ভব, নতুবা অনিশ্চিত গন্তব্যে যাবে দেশের রাজনীতি।

গত সপ্তাহজুড়েই অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে নানা তোপ দাগিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে গোড়া থেকেই। অথচ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমার পর প্রতারণা আর বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় সরকার আর ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে।

 
নোট অন ডিসেন্ট বা ভিন্নমত বাদ দেয়ায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছে বিএনপি। আবার রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দাবিতে অনড় এনসিপি। অন্যদিকে, জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি গণভোটের বিরোধী হলেও নভেম্বরেই চায় জামায়াত।
 
কিছু দিন আগেও দলগুলোর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য অনেকাংশেই সীমাবদ্ধ ছিল নিজেদের মধ্যেই। কিন্তু সেই গণ্ডি পেরিয়ে এখন তীর ছোঁড়া হচ্ছে সরকারের দিকে। দৃশ্যমান হচ্ছে সরকারের সঙ্গে দলগুলোর দূরত্ব। কিন্তু কেন বদলে গেল পরিস্থিতি?
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান সময় সংবাদকে বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর অভিপ্রায় অনুযায়ী সরকারের সময়সীমা ঠিক না হওয়া। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, অস্থার অভাব। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আস্থার সংকট আছে। আবার সরকারের প্রতিও তাদের আস্থার ঘাটতি আছে। সরকারও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে কখনও কোনো দল খুশি হয়েছে, আবার কখনও কোনো দল অখুশি হয়েছে।’  
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, 

 

বিএনপি চায় গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন হোক। কিন্তু অন্যান্য দলা চায় আগে হোক। কারণ তাদের ধারণা, নির্বাচনে জয় পেলে বিএনপি সেটি নাও দিতে পারে। একে অপরের প্রতি সন্দেহের কারণে এ সমস্যাটা হয়েছে।  

 

আবার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাইলে ডিসেম্বরেই ঘোষণা করতে হবে তফসিল। এর আগে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমানো, সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি আর গণভোট ইস্যুর মীমাংসা। আর সেই কারণেই নভেম্বরকে বিবেচনা করা হচ্ছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে।
 
এ বিষয়ে সোহরাব হাসান বলেন, ‘ডিসেম্বরে তফসিল হওয়ার কথা। তফসিল হওয়ার পর কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলে, সেটি একটি কঠিন অবস্থা তৈরি করবে। সেই কারণে নভেম্বরেই সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নির্বাচনের ব্যাপরে সরকারকে আস্থা তৈরি করতে হবে।’
 
আর অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী বলেন, 

 

রাজনীতিতে পর্দার অন্তরালে কিছু আলোচনা করতে হয়। সেই দিকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তা না হলে অসুবিধা হবে।  

 

বিভিন্ন ইস্যুতে দলগুলোর তীব্র বিরোধ যে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অস্বস্তিকর, প্রকাশ্যে সেই কথা জানিয়েছেন খোদ উপদেষ্টাদের কেউ কেউ।
 
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার পর আমরা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখছি, সেটা হতাশাজনক।’