Image description

আলোচিত-সমালোচিত একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখলের পর সামরিক শাসনকে বেসামরিক রূপ দিতে যে দলের প্রতিষ্ঠা করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

নিয়মিত বিরতিতে ভাঙন আর নেতৃত্বের কোন্দলে দেশের সংকটে তেমন দাপুটে ভূমিকা ছিল না দলটির। তবে পটপরিবর্তনে কখনও কখনও কাজ করছে প্রভাবকের। সবশেষ বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জোরেশোরেই উচ্চারিত হয়েছে জাপার নাম। অভিযোগ আছে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে সাজানো নির্বাচনে বিশেষ দলকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিতে কাজ করেছে তারা।

গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাসা জাতীয় পার্টি। দাবি উঠেছে দলটিকে নিষিদ্ধের।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আইনবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে, আইনিভাবে জাতীয় পার্টির যে দায় আছে, তাদের যে অপরাধগুলো আছে, সেগুলোর জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল, যারা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল, জনগণের সঙ্গে প্রতারণায় জড়িত ছিল—তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে হবে। 

জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর অভিযোগ করেন, ভোটের অংকে নিজেদের এগিয়ে রাখতেই এমন আওয়াজ তুলেছে কেউ কেউ। 

চ্যানেল 24-কে তিনি বলেন, নতুন যে দলগুলো আছে, বিশেষ করে গণঅধিকার বা এনিসিপি, তারা জাতীয় পর্যায়ের দল হতে পারেনি, ভোট ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অংশে তারা অংশ নিতে পারেনি। ফলে তারা অনেকেই ভাবতে পারে, জাতীয় পার্টি ভোটে অংশগ্রহণ করলে যদি কোনো দলের সঙ্গে অ্যালায়েন্স (জোট) করে, ভোটের অনেকগুলো হিসাব এলোমেলো হয়ে যাবে। পাশাপাশি ভোট করব না, জোট করব না—এ রকম যে হুমকিগুলো দেওয়া হয়, সেই হুমকিটা তখন আর দিতে পারবে না। 

তিনি আরও বলেন, মূলত, বিএনপিকে আঁকড়ে বা চেপে ধরার জন্য, বিএনপিকে শ্বাসরুদ্ধ করার জন্যই তারা জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে চায় অথবা ভোটে আনতে চায় না। আগে সরকারতে নিরপেক্ষ হতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে, দেশের কাঠামোকে নিরপেক্ষ হতে হবে। তখন অবশ্যই জাতীয় পার্টি ভোটে যাবে। জাতীয় পার্টি সবসময় ভোটে যেতে আগ্রহী।    

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। স্থগিত আছে তাদের প্রতীকও। তবে জাতীয় পার্টির রাজনীতির বিষয়ে নেই কোন আইনি নিষেধাজ্ঞা। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, আপনি আ.লীগের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন, জাতীয় পার্টির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন, এই দুটি ইস্যুকে যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করেন তাহলে নির্বাচন সমস্যা হবে।  

নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলী বলেন, আইনগত কোনো ব্যবস্থা ছাড়া শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে বা তার বিরুদ্ধে তাকে কোনো কিছু থেকে বাদ দেওয়া, এগুলো করার একটা গ্রাউন্ড (ভিত্তি) থাকতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।   

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, যেহেতু এই পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়নি, আ.লীগের মতো তাদের কার্যক্রমটাও নিষিদ্ধ হয়নি, তাই এই মুহূর্তে তাদের নির্বাচনে আসতে আর বাধা নেই।   

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দলটির নেতাদের দাবি, মোট ভোটারের অন্তত ৭ থেকে ৮ শতাংশের সমর্থন রয়েছে লাঙলের পক্ষে।