Image description

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশে ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৮১ জন। এসময়ের মধ্যে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিতে নিহত হন ১৯ জন। মব সৃষ্টির মাধ্যমে গণপিটুনি দেওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সংগঠনটি তাদের ওয়েবসাইটে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রতিবেদনে গত বছর ৯ আগস্ট থেকে এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ মাসের তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ৯ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। তবে পরের মাসেই গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪ জন এবং নির্যাতনে মারা গেছেন ৫ জন। এর পরের তিন মাস, অর্থাৎ অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন একজন করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছে ৫ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩ জনের। মার্চ ও এপ্রিলে একজন করে মারা গেছেন। মে মাসে ৪, জুনে ৩, জুলাইয়ে ৬, আগস্টে ৩ ও সেপ্টেম্বরে ২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১ জন নিহত হয়েছেন, এর তিনটি ঘটনার জন্য পুলিশ, একটি ঘটনার জন্য সেনাসদস্য এবং সাতটি ঘটনার জন্য যৌথ বাহিনীকে দায়ী করে অধিকার। 

প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মব সৃষ্টির মাধ্যমে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে। এ মাসে ১৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মারা গেছেন ৪৫ জন। 

অধিকারের হিসাবে, ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে ৭ হাজার ৯৭৯টি। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে চলতি বছরের মার্চে, ৯৪৪টি। গত বছরের ৯ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে ৫০০টি। পরের মাসে ৮৬২টি, অক্টোবরে ৪৭৮, নভেম্বরে ২৬৬ ও ডিসেম্বরে ৪৬২টি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৪৮, ফেব্রুয়ারিতে ৬৪৫, এপ্রিলে ৭৯৮, মে মাসে ৪৪৭, জুনে ৫১০, জুলাইয়ে ৫৯৮, আগস্টে ৬৭০ এবং সেপ্টেম্বরে ৩১৫টি। ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ২৮১ জন, আহত হয়েছেন সাত হাজার ৬৯৮ জন। সবচেয়ে বেশি নিহত চলতি বছরের মার্চে, ৪৪ জন

অধিকারের পরিসংখ্যান আরও বলছে, এই সময়কালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ২৪২টি। ১৪ মাসে কারাগারে ৮৮ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৮৭ জন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, একদিকে বিএসএফ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশে অবৈধভাবে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে এবং সীমান্ত আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই সময়কালে সীমান্তে ৩৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৩৪।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু বর্তমান আইনে এই কমিশনের কাজ সীমিত, যা এর স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। অথচ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন ও স্বচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকা এবং এটি বন্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটছে।