জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। বিগত সরকারের আমলে সারাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ৩১২টি মামলা হয়। এর মধ্যে চার মামলায় তাঁকে সাড়ে আট বছরের সাজাও দেন আদালত। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি। এরপর একে একে প্রায় ৮০টি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বাকি মামলায় হাজিরা দিতে নিয়মিত বরিশাল, পটুয়াখালী, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলায় ছুটতে হচ্ছে তাঁকে।
শুধু রাজীব আহসান নন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে সাধারণ নেতাকর্মীর বড় অংশের রাজনৈতিক মামলা এখনও রয়ে গেছে। সেসব মামলায় তাদের প্রতিনিয়ত আদালতে ছুটতে হচ্ছে। স্বস্তি বলতে এখন গ্রেপ্তার বা কারাগারে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তবুও দিনের একটি বড় অংশ কাটাতে হয় মামলা মোকাবিলার কাজে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান সমকালকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর ৮০টি মামলায় আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সুবিধা এখনও পাইনি।’
বিএনপির মামলা ও গুম-খুনবিষয়ক সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৮৩ মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৬৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৯২ জনকে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে শুধু ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে তিন মাসে সারাদেশে ১ হাজার ৬৪৫ মামলায় প্রায় ৭০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
বিএনপির মামলা ও গুম-খুন বিষয়ক সেলের সদস্য ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার প্রকৃত অবস্থা ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য সেল গঠন করা হয়েছে। ৬ সদস্যের ওই সেল দিনরাত কাজ করে একটি তালিকা সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২২ হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আদালত ১৪ হাজার মামলা খারিজ করেছেন।
জামায়াতের দলীয় সূত্র জানায়, একই সময়ে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪ হাজারের বেশি এবং ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মামলা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের অন্যতম দাবি ছিল, পতিত সরকারের দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা। সরকার সে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে কাজ চলছে ঢিমেতালে।
গণঅভ্যুত্থানের পরও মামলার সুরাহা মিলছে না
বিএনপি নেতারা জানান, গণঅভ্যুত্থানের দেড় মাস পর রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে মামলার তথ্য সংগ্রহ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখানে পর্যালোচনা শেষে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। বিএনপি নেতারা বলেন, আন্দোলনের ফসল হিসেবে সবাই স্বাধীনতা পেলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা এর ব্যতিক্রম। এখনও মামলার ফাঁদে আটকে আছেন তারা।
জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সমকালকে বলেন, মামলা রাজনৈতিকভাবে হয়রানিমূলক, গায়েবি, নাকি ব্যক্তিগতভাবে সংঘটিত অপরাধের জন্য হয়েছে–আগে তা নিশ্চিত হতে হবে। প্রতিটি মামলার রেকর্ড দেখে দেখে নিশ্চিত হতে হচ্ছে। এ কারণে সময় লাগছে। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির হত্যা মামলা তো আমরা প্রত্যাহার করতে পারি না।’
যেসব মামলা আমলে নিচ্ছে না সরকার
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা হত্যা, ধর্ষণ, মাদক আর অস্ত্র মামলা প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। তবে বিএনপি মনে করে, ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্য মামলা হয়রানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। দলটি বলছে, বিগত দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেতাকর্মীদের আটক করে পুরোনো হত্যা মামলা কিংবা হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। অনেককে মাদক ধরিয়ে দিয়ে মাদকের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বিএনপি নেতারা বলেন, ২০১৭ সালে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদকে প্রায় সাড়ে চার মাস গুম করে রাখা হয়। পরে প্রকাশ্যে এনে তাঁকে অস্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময়ে আরও চারটি গায়েবি মামলা দেওয়া হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সেসব মামলায় এখনও তিনি আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
গায়েবি মামলার সেকাল-একাল
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিগত সরকারের আমলে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বড় অংশ গায়েবি মামলা হিসেবে পরিচিতি পায়। কোনো ঘটনাই ঘটেনি, কিন্তু নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ তুলে কিংবা সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে।
বিএনপির নেতাদের দাবি, এর ধারাবাহিকতা পরেও চলে। এ মামলাগুলোর এজাহার প্রায় একই ধরনের হতো। একই নেতাকর্মীকে একাধিক মামলায় আসামি করে এলাকাছাড়া করা হতো কিংবা গ্রেপ্তার করা হতো। কোনো ঘটনা ছাড়াই মামলা হওয়া এবং মৃত, প্রবাসী কিংবা বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ নেতাকর্মীকে আসামি করা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক খবর হয়েছে তখন।
২০২৩ সালের এপ্রিলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় করা একটি মামলায় বলা হয়, ৩০ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসি এলাকার রেললাইনের পাশে অস্ত্র নিয়ে জমায়েত হন বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়েন। এ মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমকেও আসামি করা হয়। যদিও তিনি ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, এই ব্যক্তিরা বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। মামলার বাদী ওই সময়ের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক সোহেল রানা।
সমকালের সঙ্গে কথা বলার সময় সোহেল রানা ওই মামলার কথা স্মরণ করতে পারেননি। তবে তিনি জানান, তেজগাঁও এলাকাটি ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। এখানে তাঁর নির্দেশনা ছাড়া কোনো কিছুই হতো না। চাকরি বাঁচাতে তখন সবাইকে এমন অনেক কাজ করতে হয়েছে।
একই থানায় ওই বছরের ২ মে করা আরেক মামলার বাদী উপপরিদর্শক শেখ জহিরুল ইসলাম। মামলার এজাহার অনুযায়ী, ওই দিন দুপুর ২টার দিকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়সংলগ্ন সিটি ফিলিং স্টেশনের সামনে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী সরকার পতনে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে জমায়েত হন। তাদের রাস্তা থেকে সরাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল ছোড়েন বিএনপির নেতাকর্মী। বাস্তবে তেমন কোনো ঘটনা তখন ঘটেনি বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এ বিষয়ে শেখ জহিরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, ‘বুঝেনই তো।’
আরেকটি আলোচিত মামলা হয় ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। এজাহারে বলা হয়, রাজধানীর পল্টন মডেল থানা এলাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে ২০০ থেকে ২৫০ নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুর করেন ও বিস্ফোরণ ঘটান। এ ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক মো. আয়নাল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় দলের তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খন্দকার এনামুল হক এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামকেও আসামি করা হয়।
বাদী আয়নাল হক ৫ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে তার সহকর্মীরা সমকালকে জানান, আয়নাল হক কোনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ঘটনার দিনে ছুটিতে তার শ্বশুরবাড়ি বরিশাল ছিলেন। তবে সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন তাঁকে দিয়ে এই মামলা করান।
আর্থিক ক্ষতি
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, আইনজীবীর ফি বাদ দিলেও একটি মামলা নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত নিয়ে যেতে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখানে একজন কর্মীর এক ধরনের খরচ। বড় নেতার আরেক ধরনের খরচ। আবার গ্রেপ্তার হলে জামিন করা পর্যন্ত খরচ আরও বাড়তে থাকে। এসব খরচ জোগাতে অনেক নেতাকর্মীর পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। কেউ স্ত্রীর গহনা বিক্রি করেছেন, কেউ জমি বিক্রি করেছেন। আবার কাউকে কাউকে নিঃস্ব হয়ে পড়ায় ধারদেনা করে মামলা পরিচালনা করতে হয়েছে।
দলের নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনা করেছেন আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ফি নিতেন না তিনি। কিন্তু আদালতের আনুষঙ্গিক নানা খরচ নেতাকর্মীদেরই বহন করতে হতো। খুব দরিদ্র কর্মীদের বেলায় দল থেকে কিছু খরচ দেওয়া হতো। তাও খুব কম।
এখনও চলছে গায়েবি মামলা
আওয়ামী লীগ আমলে বিরোধী দল ও মতের লোকদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও গায়েবি মামলার একাধিক অভিযোগ উঠেছে। পার্থক্য হচ্ছে– আগে হতো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। এখন হচ্ছে ব্যক্তিগত রেষারেষি কিংবা লাভের আশায়।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুলি ও সহিংসতায় গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ৮৩৬ জন নিহত হন। আর জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ১৪০০ মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। ১৬ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যু এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সরকারি হিসাবে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে এক হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৭০৭টি মামলা হয়। শুধু পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয়েছে ৭৬১টি।
জুলাই-আগস্টের এসব মামলায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এবং নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। দুটি স্থানে একই সময়ে সংঘটিত ঘটনায় করা একই আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আসামি হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর নামও। প্রতিপক্ষ ঘায়েল করতে এমনটি করা হয়েছে।
গাজীপুরে এ রকম একটি মামলায় নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম শেখের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবার নিয়ে দেশে আসি। এসব সংঘর্ষের সময় দেশে ছিলাম না। মামলার বাদী আমাকে চেনেন না, আমিও তাঁকে চিনি না। কিন্তু আমাকে ৫০ নম্বর আসামি করা হয়েছে।’
গাজীপুরের গাছা থানায় ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট মামলা করেন ইনছার আলী। একই মামলার ৭০ নম্বর আসামি সাবেক ছাত্রদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি জয়দেবপুর ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। আমার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার পরও কীসের জন্য আমার নামে হত্যা মামলা হলো, সেটা জানি না।’
জানতে চাইলে ইনছার আলী সমকালকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে মামলা করেছি। তাদের নির্দেশে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো আসামিকে আমি চিনি না, জানি না। পুলিশ কার নাম দিয়েছে, তাও আমার জানা নেই।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, জুলাই আন্দোলনের বহু মামলায় এমন ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে, যাদের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। এক্ষেত্রে যারা এসব মামলা দায়ের করেছে, আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং যারা এ ধরনের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
তখনকার আদালতে সাজানো শাস্তি
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৫৩টি রাজনৈতিক মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে সাজা দেন নিম্ন আদালত। রাতে আদালত বসিয়ে এই সাজা দেওয়া হয় বলে জানান বিএনপি নেতারা। জনপ্রিয় নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করাও এসব রায়ের উদ্দেশ্য ছিল বলে তখন অভিযোগ ওঠে। এই মামলাগুলো ছিল ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে করা। কোনো কোনো মামলার রায়ে মৃত কিংবা গুম হওয়া নেতাকর্মীকেও সাজা দেওয়ায় তখন বিতর্ক তৈরি হয়।
বিএনপির মামলা ও গুম-খুনবিষয়ক সেলের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচনের আগে সাজার রায় ঘোষণার ১৫৩ মামলা থেকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় এ পর্যন্ত ৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকিগুলো আদালতে আছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওইসব মামলাও খারিজ হবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।
ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি কতদূর
জুলাই অভ্যুত্থানের পরও বিচারাঙ্গনে অনেকটা আগের মতো একদেশদর্শী অবস্থা চলছে বলে দাবি করছেন অনেক আইনজীবী। তারা বলেন, আগে ছিল সরকারের হস্তক্ষেপ। এখন কাজ করছে ভয়ের সংস্কৃতি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রথম ৭-৮ মাস জামিন প্রায় বন্ধ ছিল। এরপর কিছু মামলায় জামিন দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু জামিনে মধ্যম সারির কোনো নেতা কারাগার থেকে বের হলে মব-সন্ত্রাস করে আবার তাঁকে থানায় দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারাফটক থেকে পুলিশ আবার গ্রেপ্তার করছে। এই পরিস্থিতি ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা বলে মনে করছেন বিচার-সংশ্লিষ্টরা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন সমকালকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের বিচার ব্যবস্থায় এমন কোনো কাঠামোতে পরিবর্তন আসেনি, যেটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।’ তিনি বলেন, ভয় বিচার ব্যবস্থার ভেতরেও আছে, বাইরেও আছে। এমন ভয়ের পরিবেশে কে ঠিকমতো রায় দেবেন? রায় তো দূরের কথা, আদেশই-বা কে দেবেন? মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এ অবস্থা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে।