দেশ রূপান্তর: জুলাই সনদে ২৫টি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী (সাধারণ সম্পাদক) বলেছে, নভেম্বরের আগে গণভোট না হলে তারা স্বাক্ষর প্রত্যাহার করে নেবে এবং আন্দোলনে যাবে।
মির্জা ফখরুল: জামায়াতের এমন কথায় আমরা কোনো জটিলতা দেখি না। তারা স্বাক্ষর করেছেন, তাতে আমরা আশাবাদী। তারা যা বলেছেন বা করছেন, আমি মনে করি, এখন দেশের মূল সমস্যা হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও নির্বাচন। এই দুটি বিষয় পার হয়ে গেলে, যা কিছু তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, তা পার্লামেন্টে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমরা কেন এটি করি না? কেউ আমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন, তবু পার্লামেন্টেই এটি সমাধান হোক। রাস্তায় নিয়ে গেলে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত এক বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় থমকে আছে। এর মূল কারণ গণতান্ত্রিক সরকারের অভাব। আমি সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব, নির্বাচন হোক। ফল যাই হোক, আমরা মাথা পেতে নেব। তারপর সবাই মিলে জাতি গঠনে কাজ করব। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও একই কথা বলেছেন।
দেশ রূপান্তর: আপনি বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ভিন্নমত লালনে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভিন্নমতের কারণে সহিংসতাও দেখা দিচ্ছে। এ থেকে মুক্তির উপায় কী?
মির্জা ফখরুল: মুক্তির একমাত্র উপায় দলগুলোকে বোঝানো। সমস্যা হলো, কিছু গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। তারা গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কিছু রাজনৈতিক দল এটি পৃষ্ঠপোষকতা করছে। কেউ কেউ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এক বছর নির্বাচন পিছলে গেলে লাভ কী হবে? এতে দেশ কতদূর এগোবে? আমাদের কাজ হলো নির্বাচনে অংশ নেওয়া। জনগণ ভোট দিক।
দেশ রূপান্তর: আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে কেমন চ্যালেঞ্জ মনে করছেন, যেহেতু যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোও আপনাদের সঙ্গে আছে?
মির্জা ফখরুল: গত ১৫-১৬ বছর ধরে আমাদের নবীন-প্রবীণ নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। আমরা মাঠ জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছি। পার্লামেন্টারি বোর্ড যতটা সম্ভব ন্যায্যভাবে এটি করছে। যুগপৎ দলগুলোর কাছ থেকে আমরা তালিকা নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করব ন্যায্যভাবে বণ্টন করতে। যদি কোনো আসনে কারও জয়ের সম্ভাবনা কম হয়, তাহলে সেই আসন হারানোর ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের অনুরোধ করব বিষয়টি অন্যভাবে নিতে। তবে তাদের প্রতিটি বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দেব।
দেশ রূপান্তর: নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা আছে কি?
মির্জা ফখরুল: আমরা জোট সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন করব, এটি আগেই ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশ রূপান্তর: পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) নিয়ে দ্বিমত আছে। পিআর ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় কী কী সংস্কার চান, যাতে জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হয়?
মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন সেই জায়গায় আস্থা ফিরে এসেছে। বিশেষ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কমিশন কিছু পরিবর্তন আনছে, আমরা তা মেনে নিচ্ছি। তবে কিছু বিষয়ে আমাদের আপত্তি জানিয়েছি।
দেশ রূপান্তর: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প্যানেল নির্বাচিত হয়েছে। এটি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কি?
মির্জা ফখরুল: আমি মনে করি না। অতীতেও এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
দেশ রূপান্তর: ছাত্রদল কেন খারাপ করল?
মির্জা ফখরুল: গত ১৫-১৬ বছর ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। ফলে সেখানে নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। তারা সবচেয়ে বেশি লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। কারাগারে গেছে, হাত-পা ভেঙেছে, মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ প্রতিপক্ষ সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। তাই তাদের ভালো করার কথা।
দেশ রূপান্তর: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগে তিন বা পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। এবার তিনি নির্বাচন করবেন কি?
মির্জা ফখরুল: একটু অপেক্ষা করুন। শিগগিরই সব জানিয়ে দেব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিষয়েও।
দেশ রূপান্তর: এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পিআর নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা। আপনি কি তাই মনে করেন?
মির্জা ফখরুল: তাদের রাজনৈতিক বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তারা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এসব বলছেন। আমরা স্পষ্ট বলেছি, আমরা পিআর চাই না। জাতি এখনো পিআরের জন্য প্রস্তুত নয়। পরবর্তী পার্লামেন্টে পিআর গ্রহণ করলে করবে।
দেশ রূপান্তর: এনসিপির সঙ্গে আপনাদের জোট হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে?
মির্জা ফখরুল: আপনার মতো আমিও শুনছি।
দেশ রূপান্তর: নির্বাচন এলেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোর্চা বা জোট গঠনের বিষয় দেখা যায়। এনসিপি যদি জোটে আসতে চায়, সে দরজা কি খোলা?
মির্জা ফখরুল: আমাদের কাছে সব রাজনৈতিক দলের জন্য দরজা খোলা।
দেশ রূপান্তর: জামায়াতের জন্যও কি দরজা খোলা?
মির্জা ফখরুল: জামায়াত যদি আসতে চায়, আমরা ভেবে দেখব। তবে বিরোধী দল তো লাগবে।
দেশ রূপান্তর: এনসিপির প্রতি আপনাদের সহানুভূতি আছে?
মির্জা ফখরুল: আমরা সবসময় তাদের স্বাগত জানিয়েছি। তাদের পছন্দ করি। তারা ভালো করুক, এটাও চাই। রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, তবে তারা আমাদের যুদ্ধের শত্রু নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাদেরও এভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা।
দেশ রূপান্তর: তারা জোটে এলে স্বাগত জানাবেন?
মির্জা ফখরুল: এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আগাম কিছু বলতে পারি না।
দেশ রূপান্তর: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফোনে মনোনয়ন দিচ্ছেন বলে প্রচারণা চলছে?
মির্জা ফখরুল: আমাদের মিডিয়া ও পশ্চিমা মিডিয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। পশ্চিমা মিডিয়া তথ্য যাচাই করে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিয়েছেন, এমন কোনো বিষয় নেই। যেদিন হবে, প্রকাশ্যে হবে।
দেশ রূপান্তর: সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ কান্নাকাটি করছে, কেউ মিষ্টি বিতরণ করছে মনোনয়ন পাওয়ার কথা বলে?
মির্জা ফখরুল: অনেকে আবেগে এমন করছেন।
দেশ রূপান্তর: বিএনপির ইশতেহার কতদূর এগিয়েছে?
মির্জা ফখরুল: ইশতেহারের কাজ প্রায় শেষ। সেক্টর অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। অনুমোদনের পর চূড়ান্ত হবে। এটি ৩১ দফার ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর: জেন-জি’র যুগে তাদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মির্জা ফখরুল: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রথম ১৫ মাসে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করবেন। তিনি এর জন্য হোমওয়ার্ক করছেন। ফ্যামিলি কার্ড, ফারমার্স কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে।
দেশ রূপান্তর: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?
মির্জা ফখরুল: আমাদের লক্ষ্য দেশকে গণতান্ত্রিক করা। শুধু কৃষি বা শিল্পে উন্নতি হলেই দেশ উন্নত হয় না। মিডিয়াকেও উন্নত করতে হবে। রাস্তায় নেমে আন্দোলনের প্রবণতা কমাতে হবে।
দেশ রূপান্তর: নভেম্বরের মধ্যে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে শোনা যাচ্ছে?
মির্জা ফখরুল: তিনি যখন আসবেন, আমরা জানিয়ে দেব।
দেশ রূপান্তর: জামায়াত ধর্মীয় কার্ড খেলতে চাচ্ছে?
মির্জা ফখরুল: আমরা যেকোনো ধর্মীয় কার্ড খেলার বিপক্ষে।
দেশ রূপান্তর: এটি কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
মির্জা ফখরুল: আমরা রাজনৈতিক কার্যক্রম দিয়েই এটি মোকাবিলা করব।
দেশ রূপান্তর: আপনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছোট করতে?
মির্জা ফখরুল: আমরা বলেছি, বর্তমান সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে দেখতে চাই।