Image description
 

গত বছরের জুলাইয়ে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গন থেকে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বিতাড়িত হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসেও তাদের আধিপত্যের অবসান ঘটে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসার প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়।

তবে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে সহিংসতা, হল দখল এবং ‘মব ভায়োলেন্সের’ (গণপিটুনি বা সমষ্টিগত বিচার) মতো বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।

শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এসব ঘটনার পেছনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা জড়িত।

 

আরও অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রশিবির মনোনীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন’ ব্যানারে ক্যাম্পাসে নিজের প্রভাব বিস্তার করছেন।

 
 

গত ১১ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে এ এফ রহমান হলের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক দাউদ সালমানকে আটক করে রনির অনুসারীরা। তার হাতে থাকা একটি খেলনা পিস্তল সদৃশ লাইটারকে ‘লোডেড পিস্তল’ বলে দাবি করে গুজব ছড়ানো হয়। এরপর ওই যুবককে বেঁধে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়।

 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলে রনির নেতৃত্বে শিবির ক্যাম্পাসের দখল নেয়। প্রথমে তারা হলগুলো টার্গেট করে সিলগালা করা রুম ভেঙে নিজেদের কর্মীদের বরাদ্দ দেয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে কমপক্ষে দুই শতাধিক শিবির কর্মী অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে অন্তত ১০টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, এসব হামলার সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততা থাকলেও প্রশাসন নির্লিপ্ত থেকেছে। এ ছাড়া সমাবর্তনের দিন এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত হয়নি।

জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিজয় ২৪ হলে শিবিরের নেতাকর্মীরা মব তৈরি করে হলে প্রবেশ করে। তারা হলে থাকা নৌকার প্রতীক ভাঙতে গেলে ছাত্রীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরে প্রশাসন একতরফাভাবে ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করে, যার মধ্যে সুমাইয়া শিকদার আদালতে রিট করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ছিল অন্যায্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বেশির ভাগ সদস্যই শিবিরের প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা ক্যাম্পাসে শিবিরকে নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, রনি ও তার অনুসারীরা ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের’ নামে একটি ছদ্ম আন্দোলনের মাধ্যমে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষ সংগঠনগুলোকে হেয় করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে চবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনিকে নানাভাবে চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।