Image description
 

চট্টগ্রাম এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের আসনগুলোতে ধারাবাহিক ভালো ফল করেছে বিএনপি। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রামে জমে উঠছে ভোটের লড়াই। এবার বেশ কয়েকটি আসনে বিএনপির হেভিওয়েট নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী। কোনো কোনো আসনে বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট নেতা নির্বাচনি লড়াইয়ে সামিল হতে চান। 

 

তবে দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণায় এগিয়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে একজন করে প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিয়েছে। প্রার্থীরা যাচ্ছেন জনগণের দ্বারে দ্বারে। মাঠে প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছেন তারা। 

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের প্রতিটিতে ৬-৭ জন করে শতাধিক বিএনপি নেতা মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে ঘোষণা দিচ্ছেন। এদের মধ্যে অতি তরুণ, ‘আগন্তুক’ বা গত ১৬ বছর মাঠে ছিলেন না—এমন অনেক সাবেক এমপি ও নেতা এখন সরব। ভিআইপি প্রার্থীদের আসনেও মনোনয়ন চাওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন দলের ওয়ার্ড বা থানা পর্যায়ের নেতারাও।

বিশেষ করে ৫ টি আসনে হেভিওয়েট হেভিওয়েট লড়াই জমে উঠেছে। সেগুলো হচ্ছে—চট্টগ্রাম ২, চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯ ও চট্টগ্রাম-১০। এই আসনগুলো একজনকে মনোনয়ন দিলে অপর হেভিওয়েট বাদ পড়বেন। 

 চট্টগ্রামের আসনগুলোতে বিএনপির প্রস্তুতি বিষয়ে দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের প্রতি আসনেই এক বা একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। 

 

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই): এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী, ক্লিফটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বড়তাকিয়া গ্রুপের কর্ণধার ও কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফ, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মরহুম জেডএ খানের ছেলে বিএনপি নেতা জিয়াদ আমিন খান, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সরোয়ার উদ্দিন সেলিম, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান (বর্তমানে বহিষ্কৃত)।

 

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছালাউদ্দিন এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়জী।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ): বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুল রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু তাহের, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা বাবু, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক রফি উদ্দিন ফয়সাল।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড): বিএনপির প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী এফসিএ। এখানে লায়ন আসলামের বিপরীতে আপাতত আর কারও নাম শোনা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী): এ আসনে তিনজন হেভিওয়েট মনোনয়ন চাইছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক এবং সাবেক হুইপ ও সংসদ-সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা মনোনয়ন চাইছেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): এই আসনে তিনজন হেভিওয়েট মনোনয়ন চাইছেন। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহধর্মিণী ফারহাত কাদের চৌধুরী এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন।

 

 

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এসএ মুরাদ চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম খান, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু আহমেদ হাসনাত।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী): বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন-দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-চসিক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল আলম এবং নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আলমগীর নূর।

 

 

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী) : মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে তরুণ শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাঈদ আল নোমান।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা): জামায়াতের প্রার্থী শফিউল আলম। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, বিএনপি নেতা সৈয়দ শাদাত আহম্মেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম ইদ্রিস মিয়া, নগর বিএনপির সাবেক নেতা শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী সিরাজ উল্লাহ।

 

 

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, কারা নির্যাতিত নেতা আলী আব্বাস, সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন, সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম, নগর বিএনপির সাবেক নেতা কাজী খোরশেদ আলম।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক): বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিলুর করিম, বিএনপি নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এমএ হাশেম রাজু, বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া): বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা, জিয়া ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামাল হোসেন।

 

 

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী চেয়ারম্যান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, তার ভাই চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক ও জেলা পিপি আশরাফ হোসেন রাজ্জাক।