
প্রায় ৩৩ বছর পর হওয়া জাকসু নির্বাচনের দিনটি কাটলো প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে। ভোট গ্রহণ শুরুর ৬ ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলন করে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদলের প্যানেল। আর পোলিং এজেন্টেসহ কয়েকটি বিষয়ে অসঙ্গতি পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবিরের প্যানেল।
সমন্বিতভাবে ওঠা বাকি অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) প্যানেলের অনাস্থা। তাদের অভিযোগ, এই নির্বাচন যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হচ্ছে না। এই অনিয়ম শুরু হয়েছে সম্প্রীতির ঐক্যের ভিপি প্রার্থী অমর্ত রায়ের প্রার্থিতা জোরপূর্বক এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাতিল করার মধ্য দিয়ে।
ছাত্রদলের তোলা অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে, তাজউদ্দীন হলে ঢুকতে না দেওয়া। একই ভোটারের বারবার ভোট দেওয়া, তালিকায় ভোটারদের ছবি না থাকা, ২১ নম্বর হলে মব সৃষ্টি করা, জাহানারা ইমাম হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গায়ে হাত তোলা।
প্যানলটির জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী বলেছেন, এই নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। জামায়াত নেতার সরবরাহকৃত ওএমআর মেশিন তারা চাননি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত ব্যালটেই ভোট হচ্ছে।
ব্যালট পেপার এবং ওএমআর মেশিন নিয়ে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেলও। জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম বলেছেন, প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হয়েছে। ছাপানো হয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যালট পেপার। ভোট শুরু হওয়ার পর ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের প্যানেলের প্রার্থীরা বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ছিলেন নির্বিকার।
ছাত্রদলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ছাত্র শিবিরের প্যানেল। এর মধ্যে আছে, ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আধিক্য, বিভিন্ন স্থানে ও হলে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের উপস্থিতি, তাদের দ্বারা বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের প্রভাবিত করা।
নির্বাচনে বিচ্ছিন্নভাবে ওঠা বাকি অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে, দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়া, ব্রেইল না থাকায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ভোট অন্যজনের দেওয়ায় বিপত্তি, বিভিন্ন হলে আধা ঘণ্টার মতো ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকা, ভোটারদের সারি থাকার পরও কয়েক ঘণ্টায়ও প্রত্যাশিত সংখ্যক ভোট না পড়া, ভোটদানের পর আঙুলে অমোচনীয় দাগ না দেওয়া।
এ ছাড়া, প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসংগতি, গাফিলতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন শিক্ষক। তাদের মধ্যে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রশাসন শুরু থেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছে। নানা অনিয়ম, কারসাজি করছে। এরকম একটা নির্বাচনের দায়ভার আমাদের নেওয়া উচিত না। প্রতিবাদের জায়গা থেকে আমরা দায়িত্বশীল শিক্ষকরা এই নির্বাচনকে বর্জন করলাম।