
২০২৪ সালের জুলাই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে তখন আন্দোলন তুঙ্গে। সে সময়কার একটি ভিডিওতে এক তরুণকে দেখা যায়, কাঠের একটি চৌকিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সামনে সশস্ত্র পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। নির্ভীক এ তরুণের নাম মোস্তাকিন আলম দিপু।
দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দিপু। মিরপুরের শাহ আলী থানার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা তিনি। জুলাই আন্দোলনের সময়ের সেই ছবির সঙ্গে তার আরও একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, ফুটপাতে একটি জুতার দোকানে বসে আছেন। ছাত্রদলের এ নেতা জানান, পরিবারের প্রয়োজনের তাগিদেই এ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের পর অনেকে নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে নিজেদের হিস্যা বুঝে নিয়েছেন। তবে দিপু সে পথে পা বাড়াননি। জুলাইয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা আন্দোলনে সফল হয়েছেন। এখন প্রকাশ্যে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারেন। তবে আর্থিৎ সচ্ছলতা এখনও ফেরেনি তার। ভাগ্যটাও আগের মতোও। এরপরও তিনি সৎ পথে থেকে উপার্জন করতে পেরে খুশি।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে দিপু বলেন, মিরপুর এলাকায় প্রায় চার বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। আগে আড়াই বছর একটি দোকানে থাকার পর সর্বশেষ দেড় বছর আরেকটিতে যুক্ত হয়েছেন। গত বছরের ১৬ জুলাই আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
দিপু জানান, বড় ভাইয়ের সংসার আছে। ছোট বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন সংসারে। এ কারণে তাকেও পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। তিনি এ ব্যবসায় যুক্ত হয়ে এর আয় দিয়ে সংসারে সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও এখনও পদ পাননি। তবে শিগগিরই ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি হলে পদ পাবেন বলে আশা তারা।
দিপুর পাশাপাশি দুটি ছবি শেয়ার করে বুয়েটের শিক্ষার্থী তাশরিক হাসান লিখেছেন, ‘এই ছবি দুটো হোমপেইজে ঘুরছে, বামপাশেরটা জুলাইয়ের সময়ের। ডানপাশেরটা রিসেন্টলি, একই ব্যক্তির। ছেলেটা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের, নাম দিপু। জুলাই শেষে কেউ নেমেছে জুলাইব্যবসার ধান্ধায়, কেউ নেমেছে দখলে, কেউ নেমেছে চাঁদাবাজিতে, কেউ নেমেছে ব্যাংক দখলে-হাদিয়া(!)য়।’
তাদের সবার জন্য সামগ্রিক লজ্জার এই ছবি দুটো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু দিপুর জন্য ভীষণ গর্বের! জুলাইকে রুটি-রুজির মাধ্যম না বানিয়ে হালাল আর সৎ উপার্জনে ফিরে গেছে। দিপুরা জিতে যাক, দিপুরা ভালো থাকুক!’