
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শভিত্তিক তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ হচ্ছে নির্বাচনি নতুন প্লাটফর্ম ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’। দল তিনটি হচ্ছে-বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোটের ঘোষণা দেয়া হবে। অভিযুক্ত আওয়ামী দোসরদের নিয়ে এই জোট গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এতে পতিত আওয়ামী ষ্বৈরাচার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।
জানা গেছে, শুধু নির্বাচনি এই জোটেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে গত ২৩ আগস্ট ঢাকায় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ধর্মীয় প্লাটফর্ম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের চারটি গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মাজারপন্থীদের নিয়ে আগামী মাসে আরও একটি জোটের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। এভাবে ধর্মীয় প্লাটফর্মের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থানের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের টার্গেট রয়েছে তাদের।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন শুক্রবার আমার দেশকে জানান, শনিবার তাদের রাজনৈতিক জোট-বৃহত্তর সুন্নী জোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে। নিবন্ধিত তিনটি দলের চেয়ারম্যানরা এজোটের যৌথভাবে শীর্ষ নেতা হিসেবে থাকবেন। আর মহাসচিবরা থাকবেন জোটের মুখপাত্র হিসেবে। প্রাথমিকভাবে তিনটি দলের জোট হলেও পরবর্তীতে আরও কিছু দলের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এম এ মতিন আরও বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নেব। এজন্য কিছু দাবি-দাওয়া ও ঘোষণা দেয়া হবে আজ। পরবর্তীতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরমধ্যে বিভাগীয় ও ঢাকায় মহাসমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সূত্রমতে, ‘বৃহত্তর সুন্নী জোটের’ তিনটি দলই ২০২৪ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অধীনে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। তাছাড়া পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিএসপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদের বেশ যোগাযোগ ছিল। শেখ হাসিনাকে তিনি উপহারও দিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতা ওবায়দুল কাদের সহ অনেকের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আওয়ামী দোসরদের নিয়ে নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন আমার দেশকে বলেন, জোটের তিনটি দলই ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এককভাবে। আমরা ওই নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রহসনের অভিযোগ তুলে বেলা ১২ টার দিকে তা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিই।
তিনি বলেন, আমাদের জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। বরং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। আমাদের ছাত্র সংগঠন-ইসলামী ছাত্র সেনা চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল এবং তাতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি। তাছাড়া মাইজভান্ডার আওলাদ হিসেবে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদের অনুষ্ঠানে আওয়ালীগ নেতাদের আসা-যাওয়া ছিল, এমনকি বিএনপি নেতারাও তাদের প্রোগ্রামে যেতেন বলে তিনি জানান।
এদিকে রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি ধর্মীয়প্লাটফর্মেও সোচ্চার হচ্ছেন সুন্নী জোটের নেতারা। এরই অংশ হিসেবে মাজারপন্থীদের নিয়ে আগামী মাসে একটি জোট গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে এমএ মতিন বলেন, আমাদের মাজারগুলোতে হামলা হচ্ছে। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার নীরব। তাই নাগরিক হিসেবে এর প্রতিকার পেতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি।
এছাড়া আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) র্যালি ঘিরে রাজধানীতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ ।
দলটির দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রতিবছরের মত এবারও ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
সুন্নী জোটের আত্মপ্রকাশে উদ্বেগ প্রকাশ করে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এরা সবাই আওয়ামীলীগের দালাল। আওয়ামীলীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা। এদেরকে সক্রিয় হতে দেয়া যাবে না। তাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
একই ধরণের মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক তুহিন মাহমুদ বলেন, পলাতক হাসিনার দোসররা নানাভাবে মাঠে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। জাপা, সুপ্রিম পার্টিসহ ফ্যসিস্টদের দোসরদের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীও যেনো তাদের কোনো প্রকার স্পেস না দেয়।
আমারদেশ