এত দিন যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে এলেও এখন বিএনপি স্পষ্ট করে বলছে, চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় তারা। দলটি মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতর থেকে একটি অংশ নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তাই খুব শিগগির এই দাবিতে সোচ্চার হয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে মাঠের কর্মসূচিতে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি।
গতকাল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সংবাদ সম্মেলন কিংবা সভা-সেমিনারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের এই দাবি শিগগিরই সামনে নিয়ে আসবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে আলোচনা-চিন্তা, সেটা জাতীয় নির্বাচনের সময়ক্ষেপণ মাত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং এর সব আয়োজন সম্পন্ন করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা করছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছে। এত দিন তারা চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও এখন সেখান থেকে সরে এসে বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন চাইবে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট ও ট্যাক্স বৃদ্ধির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাঁরা অভিমত দেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কোনো নির্বাচিত সরকার থাকলে তারা কোনোভাবে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর কারণ হয়ে দাঁড়াত না। তাঁরা জনঘনিষ্ঠ ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পণ্যে এভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়াতেন না।
স্থায়ী কমিটির পুরো বৈঠকের ওপর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে।
এর আগে কয়েক দিন ধরে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে বিএনপি। এসব বৈঠকে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মাঠে কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয় দলটি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়া ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করবে তারা। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন দলগুলো। তবে সরকার ব্যর্থ হোক, সেটা তারা চায় না। তাদের মতে, সরকারের ব্যর্থতা মানে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের ব্যর্থতা।
বৈঠকে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসারত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ক্রমাগত উন্নতির দিকে থাকায় শুকরিয়া আদায় করেন বিএনপি নেতারা। কোনো কোনো নেতা বলেন, ‘ধীরে ধীরে ম্যাডামের স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়া আমাদের জন্য সুখবর। বিএনপি চেয়ারপারসন এখন খুব প্রফুল্ল আছেন। তিনি হাসপাতালে পারিবারিক পরিমণ্ডলে বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছেন। গতকাল নিজে নিজে হেঁটেছেন।’
গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। তিনি অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও সালাহ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।