Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৫ পুলিশ নিহতের ঘটনায় বাহিনীটির ‘মেরুদণ্ড ভেঙে যায়’, তারপরই সরকারবিরোধী আন্দোলন ‘ত্বরান্বিত’ হয় বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। তার এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেছেন, “২০২৪ সালে আমাদের সিরাজগঞ্জে যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি, সেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যদি ১৫ জন পুলিশ নিহত না হত, তাহলে বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভাঙত না।

“আমরা সিরাজগঞ্জে আন্দোলন করে, বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে, ২০২৪ সালের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছি আমরা।”

বৃহস্পতিবার একটি মতবিনিময় সভায় দেওয়া তার এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ভিডিওটি ফেইসবুকে প্রচুর শেয়ার হয়।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে অবস্থিত মিল্কভিটার অভ্যন্তরে (আগামী রমজানে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মিল্কভিটার উদ্যোগে) প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সমবায়ীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ও সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু। এই বক্তব্যের ভিডিও তিনি নিজেও ফেইসবুকে আপলোড করেন।

যদিও শুক্রবার ভিডিওটি ভাইরাল ও বক্তব্যের সমালোচনার পর বিএনপি নেতা সাইদুরের ফেইসবুক প্রোফাইলে ভিডিওটি আর দেখা যায়নি।

দিনভর আলোচনা-সমালোচনার পর শুক্রবার রাতে নিজের ফেইসবুকে আরেকটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন তিনি।

৯ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের সে ভিডিও বার্তায় সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, “গতকালকে (বৃহস্পতিবার) একটি বক্তব্যে আমি বলেছিলাম, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ১৫ জন পুলিশ নিহত হয়েছে। সেই নিহতের মধ্যে দিয়ে পুলিশের মেরুদণ্ডটা ভেঙে গেছে। মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার কারণে সারাদেশের আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, “দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, আমার সেই বক্তব্যটাকে আওয়ামী লীগের একজন দালাল সাংবাদিক, যিনি বর্তমানে দেশে নাই, সে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর জন্য আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করেছে।”

তিনি তার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তিনি বলেন, “এরপরও আমি যদি ‘স্লিপ অব টাঙ’ করে অতিরিক্ত কিছু বলে থাকি, সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।”

এ ছাড়া বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ অগাস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যা, অস্ত্র লুট ও থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ঘটনার ২১ দিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় স্থানীয় চারজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ছয় হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এবং সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর) আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে এই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এনায়েতপুর থানার ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ড ছাত্র-জনতার জনরোষ থেকে হয়েছে। এ নিহতের ঘটনা নিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তা ঠিক হয়নি।

“তবে এর মধ্যে তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি আমি মনে করি, সাংবাদিক প্রসঙ্গে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও কারো জন্য কাম্য নয়।”

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এনায়েতপুর থানার ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যার বিষয়ে বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান বাচ্চু সত্য বক্তব্যই দিয়েছেন। দিন যত যাবে তাদের নানা অপকর্মের সত্যতা ততই প্রকাশ পাবে। সত্য কোনো দিন চাপা থাকে না। অথচ এই পুলিশ হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।”

বিএনপি নেতার ভিডিও শেয়ার করে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কারা পুলিশ হত্যা করেছিল সেটা সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর মুখেই শুনুন। অথচ এই পুলিশ হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এখন জেলে।”