
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্লেষণ করে বিশিষ্ট রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আশরাফ কায়সার বলেছেন, লোকচক্ষুর আড়ালে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যেগুলোর সম্পূর্ণ রূপ এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি ‘বিটুইন দ্য লাইন্স’ বা আড়ালের বার্তা পড়ে বুঝতে চেষ্টা করছেন, সামনে রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন কোনো চেহারা দেখা দিতে পারে। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, “আমি এক‑একটু আলোচনা করি, মানুষ চেনে আমাকে। ধারণা করি, কিছু ঘটনা ঘটছে… সম্ভবত আমিও সব দেখছি না।”
নির্বাচন বিষয়ে আশরাফ কায়সার মনে করেন, এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, যদি এই নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয় কিংবা বিলম্বিত হয়, তবে সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হবে। তাঁর বিশ্লেষণে বিএনপির বর্তমান অবস্থান ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়—যদি নিরপেক্ষ ভোট হয়, তাহলে তারা জয়লাভ করতে পারে এবং কনসেশন নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এক্ষেত্রে আলোচনায় থাকা ‘ঐক্যমত কমিশন’ এবং পিআর পদ্ধতিতে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ গঠনকে তিনি সম্ভাবনাময় বলে আখ্যা দেন। তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়াটি যদি গঠিত হয়, তবে তা ভবিষ্যতের একটি কার্যকর সাংবিধানিক কাঠামোর সূচনা হতে পারে, যেখানে দেশের সকল মত ও অংশীদারিত্ব উঠে আসবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে সাবধানও করেছেন, দেশে আবারও কোনো 'একাকার' পরিস্থিতি, অর্থাৎ অস্থিতিশীল রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বা অঘটনের ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সরাসরি কোনো ইঙ্গিত না থাকলেও, তিনি বলেন, “যা বুঝতে পারছি না, সেটাই বেশি চিন্তার।” তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাহিদ ইসলাম ও সাদিক কায়েমের পোস্ট নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন আশরাফ কায়সার। তিনি বলেন, নেতৃত্ব ও কৃতিত্ব নিয়ে প্রকাশ্য বিতর্ক রাজনৈতিক ঐক্যের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এর ফলে জনমনে বিভ্রান্তি বাড়ছে এবং চলমান পরিবর্তনের প্রতি আস্থাও নড়বড়ে হয়ে উঠছে।
এছাড়া তিনি ‘জুলাই সনদ’কে একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক প্রস্তাব হিসেবে স্বাগত জানালেও সতর্ক করেন, এর আইনি ভিত্তি না থাকলে ভবিষ্যতে তা অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। রাজনৈতিক দল ও কমিশনের সক্রিয় সদস্যদের স্বাক্ষর ছাড়া এমন একটি ঘোষণাপত্রকে শক্তিশালী দলগুলো উপেক্ষা করতে পারে বা এমনকি আইনি চ্যালেঞ্জও জানাতে পারে।
সব মিলিয়ে আশরাফ কায়সারের বিশ্লেষণে ফুটে ওঠে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—দেশ এখন এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে নেতৃত্ব, ঐক্য ও আইনি কাঠামোর স্পষ্টতা ছাড়া কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই স্থায়ী হতে পারবে না। বিভ্রান্তি ও দ্বিধার চেয়ে অধিকতর বিপজ্জনক হলো ‘অচেনা’ ও ‘অপ্রকাশ্য’ সংকেতগুলো, যেগুলো সময়মতো না চিনতে পারলে আবারও রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।