
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচারের দাবির প্রতীক ‘প্রজন্ম চত্বর’ স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার দায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে তাসফিয়া জান্নাত নামে এক বিএনপির সমর্থক ফেসবুকে পোস্ট করায় বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তবে শাহবাগ থানা থেকে জানানো হয়েছে, স্থাপনাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর নতুন স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য ভেঙেছে। যদিও সিটি কর্পোরেশন ও গণপূর্ত থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যদিকে, শাহবাগ পশ্চিম থানা জামায়াতে ইসলামী দলের বিরুদ্ধে তোলা এ অভিযোগ নাকচ করে বিষয়টিকে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আজ রবিবার (১৩ জুলাই) ভোরে তাসফিয়া জান্নাত তার ফেসবুকের এক পোস্টে লেখেন, রাতের অন্ধকারে শাহবাগ চত্বর ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। জামাত শিবিরের যা মন চাইছে তাই করে চলছে। দেশে কি কোন সরকার নাই!?

তার পোস্টের কমেন্টে সাইয়্যেদ মাহবুব হাসান মামুন নামে একজন লেখেন, এখনি সময় এই ৭১-এর রাজাকার আলবদর আলসামস-এর সহদর জাশা’দের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। জহুরুল ইসলাম নামে একজন লেখেন, জামাত ১৯৭১ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে।
এদিকে, তাসফিয়া জান্নাতের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, তার কোনো পদ-পদবীর বিষয়ে জানা না গেলেও তিনি বিএনপির সমর্থক। কারণ, তিনি তার টাইমলাইনে বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।
তবে জানা গেছে, প্রজন্ম চত্বর ভাঙার সঙ্গে জামায়াত-শিবির জড়িত নয়। গত শনিবার দিবাগত রাতে এ স্থাপনাটি ভাঙা হয়। এসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে বলেও কেউ কেউ জানান।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এটা ভেঙেছে। তারা নতুন স্থাপনা নির্মাণ করবে। আর এ ব্যাপারে তারাই বিস্তারিত বলতে পারবে।
তবে এ বিষয়ে জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোর্শেদ ইকবালকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে তিনি জানেন না। তাছাড়া, এটা গণপূর্তের আওতাধীনও নয় বলে জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী সালেহ মুস্তানজির দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে কল দিলেও তারা একই কথা জানান।
তাসফিয়া জান্নাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহবাগ পশ্চিম থানা জামায়াতের মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক তানভীর আহমেদ বলেন, আমরা যতদূর জানি, স্থাপনাটি সিটি কর্পোরেশন ভেঙেছে। বিষয়টির সাথে আমাদের সংগঠনের কারো কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সংগঠনটির শাহবাগ পশ্চিম থানা সেক্রেটারি এম. লোকমান হোসাইন বলেন, এ সকল কার্যক্রমের সঙ্গে জামায়াতের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কোন সংশ্লিষ্টতা অতীতে কখনো ছিল না, বর্তমানেও নেই। এসব অপপ্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ফ্যাসিবাদিদের পুরনো অভ্যাসের ধারাবাহিকতা। এগুলোর মাধ্যমে জুলাই অভ্যু্ত্থানের স্পিরিটকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার শাহবাগ চত্বরে ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালের গণজাগরণ আন্দোলনের সময় শাহবাগে গড়ে ওঠা এ ‘প্রজন্ম চত্বর’ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচারের দাবির প্রতীক হয়ে ওঠে। জানা যায়, স্থাপনাটি ওই আন্দোলনেরই স্মৃতি ধরে রেখেছিল।