Image description

৫ই আগস্টের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এ পর্যন্ত সারা দেশে দল এবং এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের চার থেকে সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই সারা দেশে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে দলটি। অনিয়ম ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ সংগঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে। তৃণমূল কর্মী থেকে কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারাও এই শাস্তির আওতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলেই সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না বলে কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয়, তৃণমূল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, দখল, টেন্ডার, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মূলত বিএনপি’র দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটছে। এ ছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য, কমিটিতে পদ-পদবিকে কেন্দ্র করেও দ্বন্দ্ব্ব বাড়ছে। এসব ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। ঘটছে দখল, চাঁদাবাজি ও সংঘাত। আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছে দলটি। এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণেও এসেছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। বলছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, দলের নামে যারা দুর্বৃত্তপনা করছে, অনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে, মানুষকে বিরক্ত করছে, মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করছে- তাদের বিএনপি রেহাই দেয়নি, দিচ্ছিও না। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিনিয়ত, প্রতি সময় সারা দেশে কোথায় কী ঘটছে দলের নামে, কারা কী করছে- সবকিছুর খবর নিচ্ছেন। এসব ঘটনায় আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে বিএনপি এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের, যারা দলের নামে এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে কোনো দুর্বৃত্ত চক্র গড়ে তুলছে, অনৈতিক কোনো কাজের মধ্যে থাকছে- এগুলো আমরা সন্ধান করে এবং ঘটনা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ পর্যন্ত চার থেকে সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 

সর্বশেষ গত ৯ই জুলাই পাবনার সুজানগরে মুঠোফোনে ছেলেমেয়ের কথা বলা নিয়ে বিএনপি’র দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ই জুলাই সুজানগর উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব রউফ শেখসহ দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ১০ জন নেতাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন অপশক্তি অনুপ্রবেশ করে বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। বিএনপি’র যদি কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও নেয়া হবে। 

ওদিকে, এসব ঘটনায় ছাত্রদল এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৩২৯ জনকে বহিষ্কার ও ৫৪১ জন নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমপক্ষে ১০০ জনকে বহিষ্কার, ১৫০ জনকে শোকজ, কমপক্ষে ১০০ জনের পদ স্থগিত এবং প্রায় ২০০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, যুবদলের ১৫০ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, ৫৬ জনকে শোকজ এবং ৫ জনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না মানবজমিনকে বলেন, সাংগঠনিক যে ক্ষমতা আছে, সেটা প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ আমরা জানাচ্ছি। এসব কর্মকাণ্ড ১শ’ ভাগ বন্ধ না হলেও এর সংখ্যা খুবই কম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার পরও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না, আমাদের হাতে তো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি। আমরা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্সে আছি।  

যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন মানবজমিনকে বলেন, শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বহিষ্কার ও শোকজ করা হচ্ছে। এমনকি কমিটিও বিলুপ্ত করা হচ্ছে। মামলাও করা হয়েছে। এসব অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা গ্রেপ্তার করতে বলছি এবং ভুক্তভোগীকে মামলা দায়ের করতেও বলছি।  

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসবই করা হচ্ছে সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে। এর মধ্যদিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।