
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ২০২৪ সালের ১১ জুলাই সংঘটিত রক্তাক্ত হামলার স্মরণে ‘দ্য বিগেইনিং অব ব্লাডি জুলাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও আহতদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, কুবি শাখা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ছাত্র আন্দোলন চত্বর’ এর পাশে একটি রিসোর্টে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আন্দোলনে আহত প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সেক্রেটারি মো. মোজাম্মেল হোসাইন আবির।
এছাড়াও ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প মোড় তথা ‘ছাত্র আন্দোলন চত্বরে’ ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা সেবা দেওয়া হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য সাবেক কুবি শিবির সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক মো. আবু রায়হান, সদস্যসচিব মো. রাশেদুল হাসান, কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন মো. রুবেল, এবং কুবি শাখা শিবিরের সভাপতি হাফেজ মাজহারুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, আমরা ৩৬ জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই আন্দোলনে প্রায় ২ হাজার শহীদ হয়েছেন, ৩০ হাজারের মতো আহত হয়েছেন। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে শহীদদের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। ‘জুলাই বিপ্লব’ অনেক কথা, স্মৃতি, আশা, ব্যথা ও প্রত্যাশার প্রতীক। তবে এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি বা ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হয়নি। সরকারকে অবশ্যই শহীদদের পরিবার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সদ্য সাবেক কুবি শিবির সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী বলেন, আমাদের বিপ্লব চুরি হয়ে যাচ্ছে—একটি শ্রেণি আমাদের বিপ্লবকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। ১১ জুলাই ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তিম অধ্যায়। সেদিন যারা ভিলেন ছিল, তারা আজও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা এখনো বার্ডে প্রোগ্রাম করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক আওয়ামী রেজিম দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। শিক্ষক ব্যতীত বাকি সবাই আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দালাল। এখনো কিছু জায়গায় ফ্যাসিবাদী প্রভাব আছে। আমরা যদি নির্যাতন সয়ে বেঁচে থাকি, তাহলে আমাদের দায়বদ্ধতাও আছে। স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘুমাবো না। সকল ছাত্র-জনতাকে অন্যায় ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক মো. আবু রায়হান বলেন, আন্দোলনের সুফল কখনো বাঙালিরা ভোগ করতে পারেনি। ২৪-এর আন্দোলন যেন সেই ভাগ্য না দেখে, সেই চক্রান্ত চলছে। ১১ জুলাই কুবিসাসসহ শহরের অনেক গণমাধ্যম ফেসবুক লাইভ, ভিডিও, নিউজ করেছে—দেখলেই বোঝা যাবে কারা মাঠে ছিল, কারা ঘরে, আর কারা গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বসে ছিল। আন্দোলনের সময় দুই পক্ষ ছিল—এক দল আন্দোলনে প্রাণ দিচ্ছিল, আরেক দল পেছন থেকে সেটি থামাতে চাচ্ছিল। সেই অপশক্তি এখনো সক্রিয়।
কুবি শাখা শিবিরের সভাপতি হাফেজ মাজহারুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জুলাইয়ের হামলায় জড়িত ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এবং প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ছিল স্পষ্ট। কিন্তু আজও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করছি—১১ জুলাইয়ের হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। বর্তমানে জুলাই স্মৃতিকে বিকৃত করে ব্যবসা করা হচ্ছে, যা আমরা সহ্য করবো না। ইসলামী ছাত্রশিবির বেঁচে থাকতে জুলাইয়ের সম্মান কখনো ম্লান হবে না, ইনশাআল্লাহ।
আহত শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সোহান বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আমি সাকিব ভাইকে অনেক আগে থেকেই সাহায্য করতাম। আমি ওনাকে বড় অঙ্কে সাহায্য করি, কিন্তু আমি আহত হওয়ার পর তিনি একবারও খোঁজ নেননি। দুঃখজনকভাবে তিনি এখন জুলাইকে বিক্রি করে খাচ্ছেন। এখনো কেউ কেউ আমাদের স্বীকৃতি দিতে চায় না। কীভাবে এতটা অজ্ঞ দল হয়, বুঝি না। মনে হয় যারা ১৭ বছর ধরে নির্যাতিত বলে দাবি করত, তারা আসলে সুবিধাভোগী ছিল। যারা সত্যিই নির্যাতিত, তারাই ‘জুলাই সনদ’ দাবি করে, সুবিধাভোগীরা নয়।
আহত শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দীন বলেন, ১১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মিছিল ঠেকাতে বাধা দিয়ে জানায় সরকার সব মেনে নিয়েছে, আন্দোলনের দরকার নেই। প্রক্টরের এই বক্তব্য আসলে পরিস্থিতি ঠান্ডা করে আমাদের থামানোর কৌশল ছিল। কিন্তু আমরা থামিনি। ছাত্র আন্দোলন চত্বরে গুলিবর্ষণের শিকার হই। ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন ছিল এবং তা চলবে।