
‘নির্বাচন নিয়ে অনৈক্য’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং অনৈক্যের খবর পাওয়া গেছে। হঠাত্ করে নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে একটির পর একটি ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হবে কি না—সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং রাজনীতির মাঠ পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে সরগরম রাখা হচ্ছে।
প্রধান রাজনৈতিক দল-বিএনপি মনে করছে, সংস্কার-বিচার ইস্যুতে নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আরো কঠোর ভাষায় বলেছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কিসের? কী নির্বাচন হবে? এ জন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ অবশ্যই তৈরি করতে হবে।’ অন্যদিকে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি জানিয়েছে, আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কার। তারপর নির্বাচন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংস্কার, বিচার এবং পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর এমন পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে সংশয় বা অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমের কারণে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিমধ্যে গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িক নিষিদ্ধ করেছে। নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে। ফলে বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে বর্তমানে রাজনীতির মাঠে রয়েছে জামায়াত-এনপিসপি-বেশকিছু ইসলামী রাজনৈতিক দল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াত ইসলামী আগামীতে সরকারে থাকবে নাকি বিরোধী দলে যাবে—সেটিও এখনো অস্পষ্ট। এছাড়াও বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কিছু মিত্রের সাথে সমঝোতা হয়নি। তাছাড়াও বিএনপিকে রাজনৈতিক মাঠে চাপে রাখার জন্য জামায়াত-এনসিপি-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পৃথকভাবে টার্গেট করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ১২ জুন অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রশ্নে যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা কেটে যায়। কিন্তু জামায়াত-এনসিপি লন্ডন বৈঠকে যৌথ ঘোষণা নিয়ে আপত্তি তোলে। এর মধ্যে গত ৩০ জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফোনালাপ করেন। সেই ফোনালাপে উভয়পক্ষ দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্প্রতি সেই ফোনালাপ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, চলমান সংস্কার কার্যক্রমে তাদের সমর্থনের কথা বলা হয়। এছাড়াও যত শিগিগরই সম্ভব নির্বাচন করার কথা জানানো হয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দীন। এরপর গত ১ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিল এই দুটি মাসকে সামনে নিয়ে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আমরা ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সিইসির ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির বক্তব্যকে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা বলছেন অনেকেই। কেননা প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল। সেখান থেকে সরে এসে জাপানে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হবে। এরপর লন্ডন বৈঠক থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছে। সেখানে আবার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বাহাসকে কেন্দ্র করে নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বিএনপিসহ দলগুলো নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করছে। এনসিপিও নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে পদযাত্রা, সমাবেশ-গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করছে। জামায়াত ইসলামীর আমিরও সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনও বিশাল সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে অনৈক্যর সুর পাওয়া গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন নিয়ে দলগুলো এখনো সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না।
এরই মধ্যে এসেছে নির্বাচন পদ্ধতির বিতর্ক। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বিতর্ক, সংস্কার বা বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বক্তব্যে পালটাপালটি অবস্থান দৃশ্যমান। সরকারের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময় ইতিমধ্যে আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক থেকে এসেছে এবং পুরো জাতি সেদিকেই তাকিয়ে আছে। সম্প্রতি নির্বাচন ইস্যুতে আমরা কতিপয় নেতার বিবৃতি ও বক্তব্য লক্ষ করেছি, আমরা গভীরভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছি। এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন আয়োজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সারা দেশের মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিভক্তি সৃষ্টি করলে তা কখনোই দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে না।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ইত্তেফাককে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতের অমিল হয়েছে। এ কারণে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। অন্যদিকে, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ইত্তেফাককে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকার যে সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে তা নিয়ে এনসিপির কোনো আপত্তি নাই। তবে নির্বাচনের আগে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং গণপরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ শেষ করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও পুনর্গঠন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারও জরুরি। এই নেতা আরো বলেন, এসব দাবি মূলত এনসিপির দাবি নয় বরং এ দেশের জনগণের দাবি। জনগণের এই দাবির পক্ষে এনসিপির অবস্থান।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ: সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং অনৈক্য খবর পাওয়া গেছে। নির্বাচনের আগে একটির পর একটি ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এই পদ্ধতি নিয়ে কঠোর বিরোধিতা করেছে বিএনপি। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বেশকিছু দল এই পদ্ধতির পক্ষে দঢ় অবস্থান নিয়েছে। ইসিতে বর্তমানে্ নিবন্ধিত ৫৫টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে চারটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ৫০টি দলের মধ্যে ১৮টি দল পিআর পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে। অন্যদিকে ২৮টি দল এই পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে। চারটি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু করা ও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন সমাবেশ করেছে। সেখানে জামায়াত, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তারা অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ঐ সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন।
আগে জাতীয় নাকি স্থানীয় নির্বাচন? জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের যে সময়সীমা তার মধ্যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে নির্বাচন কমিশনের। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, আমাদের ফোকাস এই মুহূর্ত পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। কারণ প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছেন না। তিনি জাতিকে যে ওয়াদা দিচ্ছেন, দেশে-বিদেশে যে কথা বলছেন—তা হলো জাতীয় নির্বাচনের। আমরা তার কমিটমেন্টের প্রস্তুতিতেই এগোচ্ছি।
দলগুলোর পরস্পর বিরোধী অবস্থান: পিআর পদ্ধতি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান দেখা গেছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হতে পারে কি না, এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আরো একবার ভেবে দেখার জন্য আমি সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিনীত অনুরোধ করব। এই পদ্ধতি নির্বাচনের আড়ালে দেশে পতিত স্বৈরাচারের পথ সুগম করে দেবে বলেও আশঙ্কা করেছেন তিনি।
সংস্কার ও বিচারের নামে তালবাহানা না করে স্বল্প মেয়াদে সংস্কার করে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে এবং যারা আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাচ্ছে তারাই বিএনপির সমালোচনা করছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারোয়ার বলেছেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচন দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আপনারা (ইসি) সোজা থাকবেন। অন্যদিকে, এনসিপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সারজিস আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংসদে আমরা যদি আসলেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব চাই তাহলে আগামীতে এই পিআর নিয়ে আমাদের আরো জোরদার কাজ করতে হবে।’
ভোট নিয়ে জামায়াত-এনসিপির একই সুর : ভোট নিয়ে জামায়াত-এনসিপি অভিন্ন সুরে কথা বলছে। সরকারঘোষিত নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল হওয়ার বিষয়ে এর আগে একাধিকবার ইতিবাচক বক্তব্য রাখলেও সম্প্রতি তা থেকে সরে এসেছে জামায়াত। শনিবার ফেনীতে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের জন্য কিছু জরুরি ও মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা পরিষ্কার বলেছি। এ সংস্কারের পথে বাধা দেওয়া কোনো দলের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা হতে পারে না। এর আগে বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটে থানায় হামলা চালিয়ে দুই আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হতে পারে না। পরিবেশ তৈরির জন্যই আগে সংস্কার এবং পরে নির্বাচন করতে হবে।
রংপুর, কুড়িগ্রাম ও বগুড়ায় এনসিপির পদযাত্রায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন—আওয়ামী লীগের বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং তারপর নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিও তুলেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, বিচার দৃশ্যমান করার পাশাপাশি এনসিপির জুলাই ঘোষণাপত্রে শহিদদের মর্যাদা ও অবদানের কথা থাকবে। জুলাই সনদে সংস্কারের কথা থাকবে এবং নতুন সংবিধানে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করার পরেই পরবর্তী নির্বাচন হবে।
বণিক বার্তা
‘সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে কমে আসছে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব’-এটি দৈনিক বণিক বর্তার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন ও বিরোধী মত নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার অনেকটাই পুলিশনির্ভর হয়ে পড়েছিল। ফলে অতি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার মানসিকতা তৈরি হয় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে।
বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে তখন, যার বড় উদাহরণ তৈরি করেছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড। একধরনের শীতল সম্পর্ক তৈরি হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে। সে সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ অনেকটাই ঘি ঢেলেছিলেন দুই বাহিনীর মধ্যে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে। দেখা দেয় আস্থার সংকট।
জুলাই অভুত্থ্যানের পর বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয় পুলিশ। একপ্রকার নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন বাহিনীটির সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মনবল চাঙা করতে পাশে দাঁড়ায় সেনাবাহিনী। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার থেকে শুরু করে, থানা স্থাপনার নিরাপত্তা, টহল ও তল্লাশি কার্যক্রমেও পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন সেনা সদস্যরা। দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চালানো হচ্ছে যৌথ অভিযানও। আর এর মধ্য দিয়ে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ঘুচে গড়ে উঠছে একটি শক্তিশালী সহযোগিতা ব্যবস্থা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রথম আলো
‘রাজনৈতিক’ ট্রেনে খরচ ওঠে না, বন্ধের উদ্যোগ-এটি দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বর্তমানে সবচেয়ে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করা ট্রেনগুলোর একটি বিজয় এক্সপ্রেস। ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর চালুর সময় এটি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করত। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনটির যাত্রার স্থান পরিবর্তন করে জামালপুরে নেওয়া হয়। এতে বেড়ে যায় যাত্রার সময়। কমতে থাকে যাত্রীর সংখ্যা। এখন ট্রেনটি চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে খরচই তোলা যাচ্ছে না।
রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, বিজয় এক্সপ্রেসের যাত্রার স্থান পরিবর্তনের আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। ফলে লাভ-লোকসানের বিষয়টি বিবেচনায় আসেনি। মূলত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলের নেতাদের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনটির যাত্রার স্থান পরিবর্তন করে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, জ্বালানি খরচ, লোকবল ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় শতভাগ যাত্রী পরিবহন করার পরও আন্তনগর ট্রেনে লোকসান হয়। এ ছাড়া আছে ইঞ্জিন-কোচের সংকট। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীর চাহিদা বেশি না থাকলে নতুন ট্রেন চালু করতে চায় না কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনীতিকদের চাপে নতুন নতুন ট্রেন চালু, ট্রেনের গন্তব্যস্থল সম্প্রসারণ, নতুন নতুন স্টেশনে ট্রেন থামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবই করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা বলে।
যেমন নুরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকার সময় দিনাজপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় চলাচলকারী প্রায় সব আন্তনগর ট্রেনের গন্তব্যস্থল বর্ধিত করে তাঁর নিজ জেলা পঞ্চগড়ে নেন। মন্ত্রীর ভাইয়ের নামে স্টেশনের নামকরণ এবং নতুন এক জোড়া আন্তনগর ট্রেনও চালু করা হয়।
যুগান্তর
দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের নাম করে চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী। এর মধ্যে ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য বিএনপির’ নামধারীরাই বেশি বেপরোয়া। এমনকি তারা তৃণমূল বিএনপিতে কোন্দল ও গ্রুপিংয়েও সম্পৃক্ত। ফলে কয়েকটি জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় বিব্রতও হতে হচ্ছে বিএনপিকে। এ অবস্থায় দলের নাম করে অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। তালিকা করা হচ্ছে অপকর্মকারীদের। তালিকা ধরে চলবে শুদ্ধি অভিযান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
দলটির নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, অফিশিয়ালি বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না। তবে হাইকমান্ডের নির্দেশে ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযানের কাজ শুরু হয়ে গেছে। একেবারে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, জেলাসহ সব পর্যায়ের কমিটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি এলাকায় বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জনমনে নেতিবাচক পারসেপশন শুরু হয়েছে সে বিষয়টিকে বেশি আমলে নেওয়া হচ্ছে। জনগণ যাদের ওপর রুষ্ট তাদের সতর্ক করাসহ অনেককে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। মোদ্দা কথা, যারা দলের সুনাম নষ্ট করবে এবং দলের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ছেঁটে ফেলতে হাইকমান্ড এতটুকু দ্বিধা করবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি যুগান্তরকে বলেন, ‘দল এবং দেশের স্বার্থে বিএনপি যা যা করার তাই করবে। সেক্ষেত্রে যারা দলের ইমেজ নষ্ট করবে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে মোটেই পিছপা হবে না বিএনপি। ধরে নিতে পারেন এ বিষয়ে কাজ চলছে। প্রয়োজনে তালিকা করতে হলে তাও করা হবে। যে কোনো অপকর্ম ও অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কালের কণ্ঠ
‘অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগ তলানিতে’-এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। একদিকে দাবি আদায়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন, অন্যদিকে শিল্প-কারখানায় শ্রমিকপক্ষের অসন্তোষ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পুলিশ প্রশাসনেও ফেরেনি ভেঙে পড়া মনোবল।
মব সন্ত্রাসে দূর হয়নি সামাজিক অস্থিরতা। রয়েছে আসন্ন নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা। সব মিলিয়ে আস্থাহীনতায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ।
দেশি বিনিয়োগের অবস্থাও নাজুক। এতে কমেছে শিল্পের উৎপাদন। ব্যবসায় চলছে মন্থরগতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিপরীতে বাড়ছে বেকারত্বের হার।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা।
তাঁরা মনে করছেন, দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তখন বিনিয়োগে মনোযোগী হবেন উদ্যোক্তারা।
সমকাল
দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম ‘বিএনপিকে আনুপাতিক উচ্চকক্ষে রাজি করাতে পিআর পদ্ধতির চাপ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ভোটের অনুপাতে (পিআর) সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল। আনুপাতিক নির্বাচন না চাইলেও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিও এ দাবিতে সমর্থন দিচ্ছে। ভোটের অনুপাতে প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাবে বিএনপিকে রাজি করাতেই এই চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে।
সংস্কারের চলমান সংলাপে দরকষাকষির কৌশল হিসেবে সংসদের নিম্নকক্ষে প্রচলিত আসনভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাব বিএনপি মেনে নিলে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলো নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির দাবি থেকে সরে আসবে। আনুপাতিক উচ্চকক্ষ না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না হওয়া কিংবা নির্বাচন বর্জনের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে দলগুলোর।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল রাজি হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের। ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষে বিদ্যমান ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে লড়বেন। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি জয়ী হবেন। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষেও ততগুলো আসন পাবে। অর্থাৎ, কোনো দল নির্বাচনে ১০ শতাংশ ভোট পেলে, উচ্চকক্ষে ১০টি আসন পাবে।
আজকের পত্রিকা
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘জোরেশোরে প্রস্তুতি সারছে ইসি’। খবরে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরে প্রস্তুতি সেরে রাখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহেই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হতে পারে। নিজেদের প্রস্তুতি সেরে রাখার পাশাপাশি আইন-বিধিতে কোনো পরিবর্তন করতে হবে কি না, সে জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক স্থায়ী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একান্ত বৈঠক হওয়ায় এর বিষয়বস্তু নিয়ে সব মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছিল। গত মঙ্গলবার সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে তাঁর আসন্ন সংসদ নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি ফুল গিয়ারে (পুরোদমে) নিচ্ছি।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিল এই দুটি মাসকে সামনে নিয়ে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যখনই সরকার নির্বাচন করতে চায় আমরা যাতে করতে পারি।... নির্বাচনের তারিখ ও শিডিউল আপনারা যথাসময়ে পাবেন।’
দেশ রূপান্তর
‘রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পিআর পদ্ধতি’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির প্রস্তাব। ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্নমতের ফলে ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভোট আয়োজনের আশ্বাস দিলেও দেশে ফিরে এই পিআর পদ্ধতির আলোচনা শুরু হয়।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, ভোটের শতাংশ অনুযায়ী সংসদে আসন বণ্টন হলে ছোট দলগুলো রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশের সুযোগ পাবে।
এ প্রস্তাবে ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস এবং একাধিক বামপন্থি দল। এনসিপি চাইছে দ্বিকক্ষের সংসদ, নিম্নকক্ষে প্রচলিত ভোট আর উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি। তবে দ্বিমত রয়েছে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক জোটের মধ্যে।
বিএনপি মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে দেশে কার্যকর সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে কার্যকর সরকার গঠন করা কঠিন হবে। ছোট দলগুলো কম ভোট পেয়েও সংসদে ঢুকে সরকার গঠনে অচলাবস্থার জন্ম দিতে পারে।’ তার মতে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরাসরি ভোটই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম ‘নিয়ন্ত্রণহীন মব ভায়োলেন্স’। খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার আকুবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কড়াইবাড়ী গ্রামে মব সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই এলাকার সর্বত্র এখন আতঙ্ক। মানুষ ঘরছাড়া।
১ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়ায় মব সৃষ্টি করে থানায় হামলা চালানো হয়। রাজধানীর মহাখালীতে হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে ভিআইপি কেবিন না পেয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেন বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে মব সৃষ্টি করে থানায় হামলা চালিয়ে সাজা পাওয়া দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামলায় ওসিসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন।
এমন সব ভয়ংকর মব সন্ত্রাস এখন সারা দেশে। এতে মানুষের মধ্যে এখন অজানা আতঙ্ক। মবের নামে পিটিয়ে হত্যা, মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া, লুটপাট, হেনস্তা, পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো, ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটছে। রাজনীতিবিদ, পুলিশ, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মবের শিকার হচ্ছে। থানাও বাদ পড়ছে না মব সন্ত্রাস থেকে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে ও ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে টার্গেট করেও ‘মব সন্ত্রাস’ তৈরি করা হচ্ছে।
ডেইলি স্টার
দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম ‘Inside the 3-year plan to fix banks’ অর্থাৎ ‘ব্যাংকের পরিস্থিতি ফেরাতে ৩ বছরের যেসব পরিকল্পনা।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য তিন বছরের একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো দুর্বল ব্যাংকগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। একইসঙ্গে আইনি সংস্কার এনে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যতে করদাতাদের অর্থ দিয়ে ব্যাংক রক্ষা করা থেকে বিরত থাকা।
এতে সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
সরকার একটি ব্যাংক সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করবে এবং নতুন আইনের মাধ্যমে দেউলিয়া আইন ও অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধন করা হবে। খেলাপি ঋণ কেনাবেচার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।