
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অবশেষে আগামী আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। আগামী সপ্তাহে ঘোষণা হবে নির্বাচনি তফসিল। ৩৬ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন ও ফলাফল ঘোষণার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, আগস্টের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে পুরোপুরি প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো চাপ বা চ্যালেঞ্জ নেই বলেও জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে ‘ডাকসু নির্বাচন ২০২৫’-এর একটি খসড়া তফসিল তৈরি করেছে। এই তফসিল অনুযায়ী ১৫টি ধাপে সম্পন্ন হবে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনি আচরণবিধি প্রকাশ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও যাচাই, আপিল ও শুনানি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা এবং ১২ দিনব্যাপী প্রচার। নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ, গণনা ও ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ প্রক্রিয়া।
হলে নয়, একাডেমিক ভবনে হবে ভোটকেন্দ্র
২০১৯ সালের বিতর্কিত ডাকসু নির্বাচনের পর এবার ভোটকেন্দ্র নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনা। আগেরবার হলে ভোটগ্রহণের সময় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে নির্বাচনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ ছিল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এবারের নির্বাচনে সে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোটকেন্দ্র হল থেকে একাডেমিক ভবন বা খোলা মাঠে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে চায়। মাত্র ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী হলেই ভোট চান। প্রশাসনের সাম্প্রতিক বৈঠকে বেশির ভাগ হল প্রভোস্টও ভোটকেন্দ্র বাইরে স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
কমিশনের প্রধান অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভোটার তালিকা ও রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সব পক্ষের মতামত নিয়ে তা নির্ধারণ করা হবে।’
প্যানেল গঠনে তৎপর ছাত্রসংগঠনগুলো
নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো। তারা জোট গঠন, প্যানেল প্রস্তুতি ও শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব বাছাইয়ে কাজ করছেন।
ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠনতন্ত্র সংস্কার, সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাইন আহমেদ বলেন, ‘নিয়মিত নির্বাচন ও গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদের হাতে থাকতে হবে।’
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য সংগঠনও পৃথকভাবে বা ঐক্যবদ্ধ জোটের মাধ্যমে নির্বাচনমুখী হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ স্লোগানে সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমরা সক্রিয় ছিলাম। সম্ভাব্য জোট নিয়ে আলোচনা চলছে।’ বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছি।’
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকটি সংগঠন গঠনতন্ত্র সংস্কার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংস্কার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য মধ্যপন্থি সংগঠনও ভোটকেন্দ্রের অবস্থান ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে হলে হলের বাইরে বুথ করা প্রয়োজন।’
আগস্টে অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসজুড়ে তৈরি হয়েছে ছাত্ররাজনীতির নতুন চাঞ্চল্য। একদিকে প্রশাসনের প্রস্তুতি, অন্যদিকে ছাত্রসংগঠনগুলোর প্যানেল গঠন ও জোট নিয়ে আলোচনাÑসব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে গণতান্ত্রিক উত্তাপ ফিরে এসেছে। শিক্ষার্থীরা শুধু সময়ের অপেক্ষায়।