Image description

সম্প্রতি সাতক্ষীরায় সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ। এই শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে হেদায়েতুল কবির হৃদয়কে। তবে তাকে সভাপতি করার পর থেকে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা ব্যাপক অসন্তোষ  প্রকাশ করেছেন। তারা এটাকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের পুনর্বাসন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

জানা গেছে, হেদায়েতুল কবির গত বছর ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সময় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।

হৃদয়ের বাবা মহাব্বত কবির জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এই কলেজের দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ জামান। তিনি সিটি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। কমিটির যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ যে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা চালান।

অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, কমিটিতে যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তিনিও কখনো ছাত্রদল করেননি। তাকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেউ চেনেন না। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। কেন্দ্রীয় নেতা সিটি কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাহেদ ব্যাপক পরিমাণে অর্থের বিনিময়ে অছাত্র এবং আগে ছাত্রলীগ করত বা কখনোই ছাত্রদল করেনি, তাদের দিয়ে সিটি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি করেছেন।

এর আগে কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ সংশ্লিষ্ট ও বহিরাগতদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন পদবঞ্চিতরা। গত ২১ জুন বেলা সাড়ে ১২টায় কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করেন বিক্ষোভকারীরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. শাফায়াল মোড়ল। তিনি বলেন, সম্প্রতি খুলনা বিভাগীয় টিম অগণতান্ত্রিকভাবে, ব্যাপক পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ও সাবেক এক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতার সুপারিশে কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। এই কলেজের দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাহেদ জামান। প্রকৃত ছাত্রদল কর্মীদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ও বহিরাগতদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি শুধু সংগঠনের আদর্শ ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনই নয় বরং মাঠপর্যায়ে ছাত্রদলের ত্যাগী ও পরিচিত নেতাকর্মীদের চরম অপমান। এই ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কমিটি আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আর উপস্থিত ছিলেন কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ শাখার বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল পরিবারের তৈয়েবুর রহমান, হুমায়ুন কবির, শাকিব প্রমুখ।

এদিকে আশাশুনি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছেন পদবঞ্চিত কলেজ ছাত্রদলের নেতারা। তারা বিগত সময়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে, এমন ব্যক্তি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে; বিশেষ করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, কমিটির সভাপতি সুমন হোসেন আশাশুনি সদর ইউনিয়নের নৌকার চেয়ারম্যান হোসেনুজ্জামান হোসেনের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির বারি উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এ ধরনের কিছু ছবি আমাদের হাতে এসেছে। ছাত্রলীগ নেতা বারি আওয়ামী লীগের আমলে আমাদের ছাত্রদের কলেজ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিতেন না। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি যেয়ে হয়রানি করতেন। আমাদের নেতাদের ধরিয়ে দিতেন। সেই ছাত্রলীগ নেতা বারি হয়েছেন আশাশুনি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা অবিলম্বে এসব আওয়ামী দোসরদের বাদ দিয়ে ত্যাগী নির্যাতিত কর্মীদের দিয়ে কমিটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।