Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কেন্দ্রীয় কমিটি না থাকায় নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিতব্য এই কাউন্সিলে সভাপতিসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভ্যারিফিকেশন ও শর্ত পূরণজনিত কারণে এ ১৪ জনের মধ্য থেকে কয়েকজনের আবেদন বাতিল এবং আজ রবিবার (২২ জুন) চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্লাটফর্মটি বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারনের লক্ষ্যে একটি কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সকলের সম্মতিক্রমেই এ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর আগে, গত ১৬ জুন তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান কাওয়ালী ব্যান্ড ‘ছিলছিলা’র প্রতিষ্ঠাতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমান। অন্য দুই সদস্য হলেন- মোঃ ওয়াহিদ উজ্জামান এবং মোহাম্মদ রাকিব।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র—এই চার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত প্রার্থিতা ফরম সংগ্রহ করেছেন আগ্রহীরা, আর আজ (২২ জুন) পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা আজ প্রকাশ করা হবে। সবশেষে ২৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নেতৃত্বে যারা আসছেন?

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী, সাবেক সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব রাশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ) ও সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু আলোচনায় রয়েছেন, যদিও ভোটের উপর নির্ভর করছে এ নেতৃত্ব নির্বাচন।

সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা হাসান এনাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ইব্রাহীম নিরব এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এক্ষেত্রে হাসান ইনামের নাম আলোচনায় রয়েছে।

এছাড়া, সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য আবেদন করেছেন প্লাটফর্মটির নির্বাহী সদস্য মঈনুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ও জাবি শাখার সাবেক মুখপাত্র মালিহা নামলা এবং কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাখার সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।

এর বাইরে, মুখপাত্র পদের জন্য সিনথিয়া জাহীন আয়েশা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নূপুর আক্তার নভাসহ আরও কয়েকজন আবেদন করেছেন।

কেন্দ্রীয় এ কমিটি নির্বাচনের রোডম্যাপ:

সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র পদে কাউন্সিল নির্বাচন আয়োজিত হবে; কাউন্সিলর হবেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ; নির্বাহী কমিটির ৩ জন সদস্য কমিটির সম্মতিক্রমে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন; নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থীগণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীতার আবেদন জমা দেবেন যা যাচাই বাছাই করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রদান করা হবে; নির্দিষ্ট দিনে কাউন্সিলরগণ গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রার্থীগণের মধ্য হতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উপরোক্ত চারটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন; নির্বাচিত হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তাদের দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

প্রার্থীতার আবেদন বাতিলের শর্ত:

প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিকতা, দূর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমানিত হওয়া; যদি আবেদনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থেকেই মূলধারার রাজনীতিতে জড়িত থাকার ইচ্ছা প্রকাশিত হওয়া।

প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া:

প্রতিটি পদে প্রার্থীতার আবেদনকারীদের পদাধিকারবলে জ্যোষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা, ও সুপরিচিতির উপরে ভিত্তি করে বিবেচিত আবেদনকারীদের ক্রম নির্ধারন করে প্রথম তিনজনকে সংশ্লিষ্ট পদে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোঃ ওয়াহিদ উজ্জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চারটি পদের জন্য মোট ১৪টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্য থেকে নির্বাচনের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় কয়েকটি আবেদন বাতিল হয়েছে। আজ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার লুৎফর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগ্রহী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা আমরা আজ (রবিবার) প্রকাশ করবো। ২৪ জুন নির্বাহী সদস্যের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। আমরা এই প্লাটফর্মে এমন নেতৃত্ব চাই, যারা জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যারা অভ্যুত্থানকে নিজেদের অন্তরে ধারণ ও লালন করেন এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে প্লাটফর্মকে এগিয়ে নিতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত বছরের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলন একপর্যায়ে গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলন পরিচালনায় ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে ৩ আগস্ট তা বাড়িয়ে ১৫৮ সদস্যের করা হয়। ২২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২২ নভেম্বর প্লাটফর্মটির ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে থাকা অনেকেই পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) সক্রিয় হতে থাকে। যার ফলে, এ প্লাটফর্মে একধরনের সংকট সৃষ্টি হয়।