Image description

ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে—এই আহ্বান জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ লড়াই কারো একার নয়, এটি দেশের সকল জনতার যৌথ সংগ্রাম।’

শুক্রবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জবিসাস) আয়োজিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি জিম্মি করে রেখেছিল। তবে আজ সেই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’

এ্যানি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে বিরোধী কণ্ঠকে দমন করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রদল নেতা— আল আমিন, রানা ও রাসেল — গুমের শিকার হয়েছেন, যারা আমরা ভুলতে পারি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সব ক্রিয়াশীল সংগঠনের লক্ষ্য এক: ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন। আমরা ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব এবং জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। জনগণের সহযোগিতায় ফ্যাসিস্টদের বিচার হবেই।’

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশের মধ্যে নয়, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ও সহাবস্থানের মডেল হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছিল কিছু সাংবাদিকের কারণে, কিন্তু সেই সাংবাদিকরাই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের মাধ্যমে শুধু ফ্যাসিবাদের পতনই হয়নি, নতুন একটি বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নির্মমভাবে নিহত বিশ্বজিতের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে একটি হল তাঁর নামে নামকরণ করা যেতে পারে। তিনি জানান, জবির শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক আন্দোলন করেছে, যা রাজনীতিকদেরও সংহতি পেয়েছে এবং আন্দোলন যেন বিতর্কিত না হয়, সে বিষয়েও সচেতন প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। তাঁর মতে, শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থারও সংস্কার প্রয়োজন—এটাই শহীদদের প্রকৃত দাবি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে বেশিরভাগ বড় গণমাধ্যম স্বৈরাচারকে প্রশ্রয় দিলেও কিছু গণমাধ্যম নৈতিকতা রক্ষা করেছে।’ তিনি জানান, ‘ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও বড় মিডিয়ার অনেকে ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখতে তোষামোদ ও ভুল সংবাদে জড়িয়েছে।’ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।

নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেছেন, শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয় না—যদি নতুন সরকারও গণমাধ্যমকে তোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে প্রকৃত গণতন্ত্র কখনোই প্রতিষ্ঠা পাবে না। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নেতাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি, এবং গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে, সত্য যাচাই ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক গণমাধ্যমই ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে এবং নাগরিক স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। বিশেষ করে ‘জুলাই বিপ্লব’-কে শুধু একটি আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপন করে এর গভীর তাৎপর্য আড়াল করা হয়েছে, যা ছিল জনগণের দৃপ্ত প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি।