
তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দেশের বর্তমান বাস্তবতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রয়োজনে আবার রাজপথে সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। নাহিদ বলেছেন, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল, ছাত্র এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি অঘোষিত চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি মানা হচ্ছে না। এটা মানা না হলে আবার আমাদের মাঠে নামতে হবে, হয়তো বুলেটের সামনে দাঁড়াতে হতে পারে। আমার দেশ-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
নাহিদ ইসলাম মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন একা হয়ে পড়েছেন।
সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের দরবার হলে দেওয়া বক্তব্য, গুম ও রাজনীতিতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের ওপর ‘বিএনপির প্রভাব’সহ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেন।
গত মঙ্গলবার এনসিপি কার্যালয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার দেন নাহিদ ইসলাম। এতে র্যাব ছাড়াও সরকারে থাকাকালে তার অনেক অভিজ্ঞতার বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেন। নাহিদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের সুযোগ এসেছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেই পথে আগায়নি। আর কেন তারা সেই পথে আগাননি, তার জবাবও তিনি দিয়েছেন আমার দেশকে।
নাহিদ ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের তিন দিন আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
সম্প্রতি লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, জুলাই সনদ হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করা উচিত হবে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা পরে একটি সময়সীমা ডিসেম্বর-জুন ঘোষণা করেন। আমরা তখন নির্বাচনের সময়সীমাকে সমর্থন দিয়েছিলাম। এরপর প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের পর দেখলাম সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই সেই সময়সীমা পরিবর্তিত হয়েছে। এতে সরকারের কর্তৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন আসলে কার কথায় হবে? মনে হয়েছে, একটি দলের চাপেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে অনেক আস্থায় রাখতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘লন্ডনে বসে জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া কারো জন্য ভালো হয়নি। এতে সরকারের কর্তৃত্ব, স্থিতিশীলতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকার কি শুধু রাজনৈতিক শক্তিকে ভয় পাচ্ছে, না কি সাধারণ মানুষ, ছাত্র ও জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাবেÑএটা স্পষ্ট হওয়া উচিত।’
নাহিদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না, বরং মনে করি দেশ গঠনের কাজ আগে হওয়া উচিত ছিল—নতুন বন্দোবস্ত ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সামান্য পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু এসব না করে বারবার নির্বাচনের কথাই বলা হচ্ছে। সরকারের উচিত জনগণের আস্থাও অর্জন এবং সাধারণ মানুষের সংস্কার ও পরিবর্তনের দাবি পূরণ করা।’ তিনি বলেন, ‘আমি সরকারে থাকলে লন্ডন ইস্যুতে কোনো কম্প্রোমাইজ করতাম না। ড. ইউনূস এ সময় অনেক একা হয়ে গেছেন।’
জুলাই সনদ কবে?
জুলাই সনদ নিয়ে নাহিদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল ফ্যাসিবাদী শক্তি ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত প্রয়াস। তাই দলীয় ব্যাখ্যা নয়, একটি সম্মিলিত ব্যাখ্যা থাকা উচিত। জুলাইয়ের সময় অনেক মব দেখা গেছে এবং সেটিকে মবক্র্যাসির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে, যা ভুল। সজীব ওয়াজেদ জয়ও এটি প্রথমে মবক্র্যাসি বলে উপস্থাপন করেছিলেন। এটা আসলে ভারতীয় একটি ন্যারেটিভ, যা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের অবশ্যই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পেছনের প্রেক্ষাপট বলতে হবে—১৬ বছরের লড়াই, কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্বের আন্দোলন এবং জনগণের বাধ্য হয়ে গণভবনে যাওয়ার ঘটনাবলি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যথাযথ না হলে এই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক মর্যাদা ও শহীদদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হতে পারে এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি হবে ।’
নাহিদ বলেন, ‘নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠিত না হলে এই শক্তিকে সংহত করা সম্ভব নয়। সংস্কার বা পরিবর্তনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাও সহজ হবে না। তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে নিয়ে যেতে হলে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব থেকে একটি রাজনৈতিক দল আবশ্যক ছিল।’
‘আমি সাত মাস সরকারে ছিলাম এবং যখন পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলো, তখন বেরিয়ে এলাম। এনসিপির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং মধ্যমপন্থি রাজনীতির স্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই দল গঠন করেছি,’ যোগ করেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র, বৈষম্যহীন সমাজ এবং বাংলাদেশপন্থি রাজনীতির কথা বলি। আমরা ফ্যাসিবাদী ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিপরীতে, নাগরিক মর্যাদা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করব। তরুণ প্রজন্মকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিই, কারণ এই গণঅভ্যুত্থান তাদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। আমাদের রাজনীতিতে দায়বোধ, নৈতিকতা এবং দেশপ্রেম অতি গুরুত্বপূর্ণ। ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা নতুন সংবিধানের দাবি জানাচ্ছি, যেখানে ৭২ সালের মুজিববাদী দর্শনের বাইরে গিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও বাংলাদেশপন্থি রাজনীতির ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গড়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শ খুব স্পষ্ট। মাত্র তিন মাসের রাজনৈতিক দলকে যেমন প্রশ্ন করা হচ্ছে, ৫০ বছরের দলকেও এত প্রশ্ন করা হয়নি। আমরা সময় পাচ্ছি না, তার আগেই প্রশ্নবাণে আক্রান্ত হচ্ছি। তবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এনসিপি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে।’
নাহিদ বলেন, ‘আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি ডিসেম্বরেই তুলেছিলাম। সরকার বলেছিল এটা সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা উচিত। এই ঘোষণাপত্র প্রয়োজনের কারণ, এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে, যা পরে সংবিধানে যুক্ত হবে। নতুন সংবিধান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকার কারণে এই গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে, শহীদদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে এবং অংশগ্রহণকারীদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা দিতে হবে।’
সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের অঘোষিত চুক্তি প্রসঙ্গ
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল, ছাত্র এবং ড. ইউনূসের মধ্যে একটি অঘোষিত চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সেটা কেউ রক্ষা করেনি। শুধু ছাত্র ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো সেসব চুক্তির পক্ষে কথা বলছে। সেনাবাহিনী চুক্তি রক্ষা করেনি বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা সেনাপ্রধানের বক্তব্য শুনেছি, যেখানে বলা হয় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে; যা একটি দলের এজেন্ডা। সেনাপ্রধান সংস্কারের পক্ষে বোল্ড পজিশন নেননি। ডিজিএফআই আগের ভূমিকায় ফিরে এসেছে—মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক দল ভাঙন তৈরি করা, নতুন দল গঠন করা ইত্যাদি। তাই এই চুক্তি রক্ষা হয়নি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি চুক্তি রক্ষা না হয়, আমাদের আবার মাঠে নামতে হবে, বুলেটের সামনে দাঁড়াতে হবে এবং আমরা সেটার জন্য প্রস্তুত। অবশ্যই আমরা রাস্তায় নামব।’
নাহিদ বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সবসময় সমর্থন দিয়েছি। আমরা চাই একটি শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সেনাবাহিনী থাকুক, যারা দেশের পক্ষে কাজ করে। তরুণ অফিসার ও সৈনিকরা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল, তাই তাদের আমরা সমর্থন করি। তবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীকে আরো বেশি এই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা উচিত ছিল।’
নাহিদ আরো বলেন, ‘সেনাপ্রধান বলেছেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে এবং জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে নতুন সরকার আসবে। উনি (সেনাপ্রধান) কি এই ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন? এটা সব জায়গায় নিউজ হয়েছে; কিন্তু আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ ধরনের কোনো বক্তব্য আসেনি। আমরা ধরে নিচ্ছি উনি এমনই বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান দেশের রাজনীতির বিষয়ে কথা বলতে পারেন, তবে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। উনি রাষ্ট্রের কর্মকর্তা। বিএনপির দলীয় এজেন্ডা সেনাবাহিনীর দরবারে আলোচিত হলে, সেটার পক্ষে মতামত তৈরি হলে, সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।’
ডিজিএফআই, র্যাব ও গুম কমিশন নিয়ে উষ্মা
নাহিদ বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৬ বছরে সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী কাজ ছিল গুম। এই গুমগুলোর সঙ্গে ডিজিএফআই এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অফিসারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আমাদের সেনাবাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে কমিটমেন্ট নেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর সংঘটিত না হয়। কিন্তু গুম কমিশনে কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না এবং আইসিটিতে ট্রায়ালেও কোনো ফলাফল আসেনি। ডিজিএফআইয়ের পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হলেও তাদের গ্রেপ্তার বা বিচার কার্যকর হয়নি। এ বিষয়গুলো আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা লক্ষ করেছি, আয়নাঘরের তথ্য বা স্মৃতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমাদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো এই অপরাধগুলো ঢাকতে বা অপরাধীদের রক্ষা করতে চেষ্টা করে, তাহলে এমনকি আজ না হলেও ভবিষ্যতে জনগণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। আমাদের কাছে একটি সুযোগ এসেছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে বদলাতে; দোষীদের শাস্তি দিতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না করতে কমিটমেন্ট নিতে এবং জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে। কিন্তু আমরা এ ধরনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি।’
নাহিদ বলেন, ‘ডিজিএফআই আমাদের গণঅভ্যুত্থানে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপ বা গিলটিফিলনেস (দোষ স্বীকার) দেখতে পাইনি। তারা এখনো বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর করায়, তাদের নিয়ন্ত্রণে নতুন দল গঠন করাচ্ছে এবং নতুন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা করছে। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে তাদের মনোযোগ নেই; বরং দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে তারা সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে এবং নির্বাচনী কৌশলে প্রভাব বিস্তার করছে। আগেও তারা এমন কাজ করেছে আর এবার না করার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে, এ বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই সমাধান করতে হবে। গুমের শিকারদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া উচিত, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।’
গুম বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন সরকারে ছিলাম, ক্যাবিনেটে গুমবিষয়ক প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এখনো কিছুদিন এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব। পরে অফিশিয়ালি আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করব।’
নাহিদ বলেন, ‘র্যাব বিলুপ্ত করা উচিত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। দলগতভাবে আমরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। তবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, র্যাব ডিসব্যান্ড হওয়া দরকার। এ ছাড়া এনটিএমসি, ডিজিএফআইসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন। এগুলো কী উদ্দেশ্যে কাজ করবে, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। এখনো ফোনকল রেকর্ড হয়ে ফাঁস হয়, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুতর সমস্যা। এসব যদি ঠিক না করা হয়, তাহলে নাগরিকরা নিরাপদে ফোনে কথা বলতে পারবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়া জরুরি, যার জন্য কঠোর আইন প্রয়োজন।’
মিডিয়া হাউসগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে
নাহিদ বলেন, ‘কিছু গণমাধ্যম এনসিপির তীব্র বিরোধিতা করছে এবং প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এসব নিয়ে আমরা বেশি কথা বলি না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তরুণ প্রজন্মের অনেক ঐতিহাসিক সুযোগ ছিল, যেগুলো তারা লুটপাটে পরিণত করেনি। ১৯৭১ সালের রক্ষীবাহিনীর মতো মিলিশিয়া তৈরি না করেও তারা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তরুণদের সম্পর্কে অন্যায্য প্রচারণা চলছে, যা ভুল। দেশের ভবিষ্যৎ যদি এই ছাত্র-তরুণরা হয়, তাদের প্রতি এমন অবজ্ঞা থাকলে, তারা আর কখনো দেশের জন্য রাস্তায় নামবে না।’
মিলিশিয়া বাহিনী তৈরির প্রস্তাবনা সম্পর্কে
নাহিদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মিলিশিয়া তৈরির প্রস্তাবনা ছিল, তবে আমরা যেহেতু আগে থেকেই সংগঠিত কোনো দল না, তাই কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে, সন্দেহ ছিল। ৭১ সালের পর রক্ষীবাহিনীর নেতিবাচক ভূমিকা যেমন ছিল, সেটাও মাথায় রেখেছি। তারা লুটপাট ও মানুষের অধিকার হরণে লিপ্ত ছিল, বিশেষ করে জাসদকে দমন করেছিল। এ জন্য আমরা মিলিশিয়া গঠনের পথে যাইনি।’