
আওয়ামী শাসনের পতনে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার যে যুগপৎ গণআন্দোলন হয়েছিল, তা সফল হলেও প্রকৃত বিজয় এখনো অধরা—এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের সর্বস্তরে এখনো আগের শাসনের অনুগতদের প্রভাব রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে তৎপর।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে উত্তরা পূর্ব থানা জামায়াতের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনী ও ইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন তিনি।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘গত আন্দোলনে অর্জিত সফলতা অর্থবহ ও টেকসই করতে হলে ‘‘জুলাই সনদ’’ রচনার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র কাঠামোর পুনর্গঠন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারকেও সময়োপযোগী প্রয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।”
তিনি অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন, কাঠামোগত সংস্কার এবং হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
ঈদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদ আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে উদযাপিত হওয়ায় আগের চেয়ে অর্থবহ হয়ে উঠেছে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন থানা আমীর মাহফুজুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক।
সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘ইউনিট হচ্ছে জামায়াত-এর সাংগঠনিক ভিত্তির মূল চালিকাশক্তি। ইসলামী আন্দোলনকে কার্যকর করতে হলে ইউনিট পর্যায়ে দাওয়াতি কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে তিনি কর্মীদের গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর জোর দেন। নেতৃত্ব বিকাশে বেশি বেশি কোরআন-সুন্নাহর চর্চা, ইসলামী সাহিত্য পাঠ এবং আমল-আখলাকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘যখন ইসলামের দাওয়াত প্রতিটি ঘরে পৌঁছাবে, তখনই ইসলামী বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। সেই লক্ষ্যে ইউনিট দায়িত্বশীলদের যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
আলোচনায় মহানগর উত্তর আমীর জানান, দেশের সর্বত্রই ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে ইতিবাচক হাওয়া বইছে। ‘দীর্ঘ নিপীড়নের পর এখন জামায়াতে ইসলামী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে,’ বলেন তিনি। জনগণের মধ্যে এখন ন্যায় ও ইনসাফের জন্য দাঁড়িপাল্লার প্রতীকেই আস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন আর কোনো সাজানো নির্বাচন চায় না। তারা নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে আল্লাহভীরু শাসনের প্রত্যাশায় আছে।’ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষের জন্য সমান সুযোগ তৈরির দায়িত্ব নিতে হবে এবং কোনো মহলের চাপ বা প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন থানা সেক্রেটারি আতিক হাসান রুবেল, ১ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাহফুজুর রহমান, থানা নায়েবে আমির সুলতান আহাম্মদসহ বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল নেতারা।