
জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিলে বাক-স্বাধীনতা রক্ষা, সংবাদপত্রের উৎকর্ষ সাধন ও সংবাদকর্মীদের স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাবে।
রোববার (১৫ জুন) সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষ্যে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, তৎকালীন সরকার ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করে দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বাকশালী সরকার ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ৪টি সংবাদপত্র দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ অবজারভার সরকারি নিয়ন্ত্রণে চালু রেখে বাকী সব সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল করে দিয়ে সংবাদপত্র ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছিল।
ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক, কর্মচারী ও কলাকৌশলীরা বেকার হয়ে পড়েছিল। বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে সাংবাদিক-কর্মচারী ও কলাকৌশলীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, একইভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবাদপত্র ও মিডিয়ার ওপর দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার তার ১৫ বছরের শাসনামলে দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, সিএসবি টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার এবং বহু অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ বেশকিছু সংবাদপত্র ও মিডিয়ার প্রকাশনা অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়। হাজার হাজার সাংবাদিক, সংবাদপত্রের কর্মী ও কলাকৌশলীরা বেকারত্বের মুখে পড়ে চরম অমানবিক জীবন-যাপন করতে বাধ্য হন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৩২ ধারা হিসেবে পরিচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে কালাকানুন তৈরি করে। আইনটি নিবর্তনমূলক হওয়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র সংস্থার চাপের মুখে সরকার। সরকার আইওয়াশ হিসেবে আবারও ২০২৩ সালে আগের আইনটির নামে মাত্র কিছু ধারা পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নতুন শিরোনাম দিয়ে আরেকটি কালাকানুনের ব্যবস্থা করে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতেই পতিত স্বৈরাচার সরকার ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনটি’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এই নিবর্তনমূলক কালাকানুনে বহু সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার মানুষকে হয়রানি করা হয় এবং তাদের বিনা অপরাধে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হয়। দেশের সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সমাজ এ কালো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও সরকার সেদিকে মোটেই কর্ণপাত করেনি। মূলত সাংবাদিক সমাজের কলম বন্ধ করতেই সরকার নতুন এই কালাকানুনটি প্রণয়ন করেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই কালো আইনটির ৯টি ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে বাকি সবগুলো ধারা বাতিল করেছে এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা ও দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, সিএসবি ও ইসলামিক টিভি চালুর অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বে সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন এবং সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলবেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগণকে সচেতন করবেন।
তিনি আরও বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিলে জামায়াত বাক-স্বাধীনতা রক্ষা এবং সংবাদপত্রের উৎকর্ষ সাধন ও সংবাদকর্মীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।