
ইসরাইলের বিমান হামলায় খুব বেশি কাবু করতে পারেনি ইরানকে। ক্ষতি হয়েছে ইরানের মাটি থেকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের ‘টার্গেট কিলিং’ হামলা। বছরজুড়ে তেহরানের নাকের ডগায় বসে ভয়াবহ এই হামলার নীলনকশা করেছে মোসাদ। স্বভাবতই ইরানের কোনো নাগরিকের গোপন যোগাযোগ ছাড়া এত বড় পরিকল্পনা সফল হয়নি। ২০ সেনা কর্মকর্তাসহ ৯ পারমাণবিক বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ডের পর সবকিছুর আগে দেশের অভ্যন্তরের এই বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজতে শুরু করেছে ইরান। ইতোমধ্যেই পাঁচজন ইসরাইলি গুপ্তচরকে আটকও করেছে তেহরান। আলজাজিরা।
অভ্যন্তরীণ এই তল্লাশির মধ্যেই সামনে এলো ইরানের প্রতিবেশী এক রাষ্ট্রের বিশ্বাসঘাতকতার খবর। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র জর্ডান। ইসরাইল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎ করেই নিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। বেসামরিক বিমান চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ জানানো না হলেও সূত্রের বরাতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ক্র্যাডল জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে ইসরাইলের জন্য আসা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহণকে সহজতর করা। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনার মাঝেই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করছে ইরান।
শুক্রবার রাতের হামলা জাতীয় গাদ্দারদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে দেশটি। ইরানের কেন্দ্রীয় শহর ইয়াজেদে পাঁচজন ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আটককৃত ব্যক্তিরা ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ইরানের সংবেদনশীল কৌশলগত স্থানগুলোর ছবি তুলছিল ও গোপন তথ্য সংগ্রহ করছিল। তদন্ত সংস্থার বরাতে জানানো হয়েছে, আটককৃত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলের হয়ে কাজ করে আসছিল এবং তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ অভিযানের সময় একটি গাড়িও জব্দ করা হয়। ইরানের অভ্যন্তরে বিদেশি গোয়েন্দা সরঞ্জাম অনুপ্রবেশের এই ঘটনা দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ইসরাইল সম্প্রতি ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ইসরাইলকে সহায়তায় হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে জর্ডান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ও ইউরোপীয় সামরিক কার্গো বিমান জর্ডানের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরাইলের উদ্দেশে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করছে। এসব চলাচল নির্বিঘ্ন করতেই বিমানবন্দরটি বন্ধ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও জর্ডান সরকার বিমানবন্দর বন্ধের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি। সম্প্রতি জর্ডানের আকাশসীমা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে ইসরাইলের কাছে সামরিক কার্গো বিমানে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একই সময়ে, ইরানের রাজধানী তেহরান, ইসফাহান এবং নাটাঞ্জে ইসরাইলি হামলা চলাকালীন জর্ডানের আকাশে অচেনা বিমান চলাচল লক্ষ করা গেছে। এরই মধ্যে জর্ডানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পেট্রা জানিয়েছে, জর্ডানের বিমানবাহিনী ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। তারা বলেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জর্ডানের সীমানার মধ্যে পড়তে পারত এবং সাধারণ মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারত। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির বিশ্লেষক জোনাথন লর্ড বলেছেন, ‘জর্ডানের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, তারা মার্কিন ও ইসরাইলি নিরাপত্তা কৌশলের ঘনিষ্ঠ শরিক।’