Image description

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকটা কেটে যাওয়ায় ভোটের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেয়ার চিন্তা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তারা মনে করছে, সরকার আন্তরিক হলে জুলাই সনদ ঘোষণা, ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করা- এগুলো আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না।

লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা এক ধরনের স্বস্তিতে আছেন। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট ও অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। একই সাথে নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কিছু দিন ধরে চলা টানাপড়েনমূলক সম্পর্কেরও অবসান ঘটেছে।

বৈঠকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, লন্ডন বৈঠকটি ছিল ঐতিহাসিক, যুগান্তকারী, জাতির প্রতি দিকনির্দেশনামূলক এবং বহুল প্রত্যাশিত। এই বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, গণতান্ত্রিকভাবে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, পলিটিক্স ইজ এন আর্ট অব কম্প্রোমাইজ অর্থাৎ রাজনীতি হলো একটি আপসের শিল্প। এ কথাটি আমরা অনুসরণ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা অনুধাবন করেছেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আবহাওয়া, রমজান, পাবলিক পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। এটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আশা করি, সেই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) যথাযথ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলবেন।

গত কয়েক মাস ধরে ডিসেম্বরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি।

বিএনপির এমন অনড় অবস্থানের মধ্যে ঈদুল আজহার আগের দিন গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন। এর পর ওই রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে সরকারের এই ঘোষণার কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। এতে করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘিরে সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এমন অবস্থার মধ্যে ১৩ জুন লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক চূড়ান্ত হয়। বিএনপি সিদ্ধান্ত নেয়, বৈঠকে তারেক রহমান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়টি অর্থাৎ নির্বাচনের সময় এগিয়ে নিয়ে আসার বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন। বিএনপিসহ দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক থেকে একটা ইতিবাচক ফল বেরিয়ে আসবে, নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট কেটে যাবে। সেটিই হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ হলে রমজানের আগেই নির্বাচনে সম্মত হন দুই নেতা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, লন্ডনে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো জাতি একটা উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের মধ্যে ছিল। বৈঠকের পর এখন সবার মধ্যে একটি স্বস্তি এসেছে। দেশে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এখন আমরা ইনশাআল্লাহ সেই উৎসবে নির্বাচনী মাঠের দিকে যাব। সবাই মিলে তো দেশটাকে গড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের একটা বড় দায়িত্ব আছে। এখন পরবর্তী করণীয় কী, আশা করি সবাই সবার অবস্থান থেকে সেটা নির্ধারণ করে এগিয়ে যাবেন।

বিএনপি মনে করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। দুই পক্ষই সব প্রস্তুতি শেষে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনে সম্মত হওয়ায় দেশে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় যথাসময়ে উদ্যোগ নেবে এবং সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে, দেশ নির্বাচনমুখী হবে।