
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মাসহ দুজনকে আজীবন বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আজীবন বহিষ্কার হওয়া আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মার সঙ্গে কথা হয় কালবেলার।
এসময় তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘বড় ভাইয়ের (জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ) মনে হয় মতিভ্রম ঘটে গেছে। তার চোখেরও সমস্যা। এ কারণে তিনি এসব চোখে দেখছেন কিনা। আবু সাঈদ চাঁদের যে পোস্ট, তার যে পোস্টের মর্যাদা, সেই পোস্টে থেকে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনো ভিত্তিই নেই। আমি ওই দিন বাড়িতে বা এলাকাতেই ছিলাম। আমি নাটোরে অবস্থান করছিলাম। যারা ওই দিন ভিকটিমাইজ হয়েছিল তারাই আমাকে ফোন করে বলেছে, এ রকম ঘটনা ঘটেছে। অথচ আমার নামে এমন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।’
বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা জুম্মা আরও বলেন, ‘পুরাতন একটি ঘটনায় অনেকদিন আগে আমাকে শোকজ করা হয়েছিল (একটি স্কুলকে কেন্দ্র করে এক হিন্দুর বাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে)। পুঠিয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্যাডে আমি এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় মর্মে তারা নিজেরাই একটি বার্তা দিয়েছিল। আমি শোকজের জবাবের সঙ্গে তাদের সেই বার্তাটি ট্যাগ করে দিয়েছিলাম। পরে সেটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কার আমি মানি না, যতক্ষণ না জনগণ আমাকে বহিষ্কার করবে। কেননা জনগণ আমাকে ভোট দেবে, এটি বন্ধ করবে কেমনে? তাছাড়া দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তিনি (আহ্বায়ক) আজীবন আমার সদস্য পদ বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন বলে মনে করি না।’
নিজেকে আজীবন বহিষ্কারের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে তার পদ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বহিষ্কৃত এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তিনি (আবু সাঈদ চাঁদ) তার দপ্তরে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। তার ডানে-বামে পরামর্শক হিসেবে যারা আছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করে কী নিচ্ছেন আর কী নিচ্ছেন না তা আল্লাহ পাক ভালো জানেন। তবে আমরা বাতাসের মাধ্যমে যেটি শুনি, তা খুবই খারাপ ম্যাসেজ। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা যে বিএনপি করি এই কথা বলতেই লজ্জা লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জন্মগতভাবে বিএনপি। সুতরাং কাউকে তেল দিয়ে রাজনীতি করার লোক আমি নই। বরং আবু সাঈদ চাঁদেরই রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। তিনি প্রথমে মুসলিম লীগ, এরপর জাতীয় পার্টি, পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তিনি বিএনপি করছেন কিন্তু পুনর্বাসন করছেন আওয়ামী লীগকে। আবু সাঈদ চাঁদ দুইটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট করেছে।’
বহিষ্কৃত এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে আমি আওয়ামী লীগের আব্দুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে ছবি তুলেছিলাম। বিষয়টি হচ্ছে- আমি ছিলাম উপজেলা চেয়ারম্যান আর আওয়ামী লীগের সময় দারা ছিল উপদেষ্টা। উপদেষ্টার কোনো মিটিং কি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে অ্যাভোয়েড করার সুযোগ আছে? আরেকজন যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে- তিনি রফিক। তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। তাকেও আওয়ামী লীগ বানানো হচ্ছে। অথচ তিনি বিএনপি ছাড়া কোনো দিনই আওয়ামী লীগ করেনি।’
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (১১ জুন) দুপুরে পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির দুই নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত দুজন হলেন- উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা ও বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রফিক।
এদের মধ্যে আনোয়ারুল ইসলাম পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আর রফিকুল ইসলাম বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। বুধবার (১১ জুন) জেলা বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ দুজনকে সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুল ইসলাম কিছুদিন ধরে পুঠিয়া উপজেলার নন্দনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন মিমকে বিদ্যালয়ে যেতে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে জেলা বিএনপি আনোয়ারুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছিল। আনোয়ারুল জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক হয়নি।
এদিকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে গত সোমবার ইউপি সদস্য রফিকুল তার লোকজন নিয়ে পুঠিয়ার হাতিনাদা গ্রামের দুই সেনা সদস্যের বাড়িতে হামলা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই সেনা সদস্য সম্পর্কে চাচাতো ভাই। একজনের বাড়িতে হামলা, লুটপাটের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগও করা হয়। অন্যজনের বাড়ির কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়।
এক সেনা সদস্যের বাবা আওয়ামী লীগের সমর্থক। এ জন্য চাঁদা দাবি করা হচ্ছিল বলে পরিবারটির অভিযোগ। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে পুঠিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনও রফিকুলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ দুজনকে সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়েছে। যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা উল্টাপাল্টা অনেক কথাবার্তাই বলবে। আমরা দলের জন্য কী করেছি বা করছি- দলের হাইকমান্ডসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অবগত আছেন।’