
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্তসহ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি জোরদার করেছে জামায়াতে ইসলামী। ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে নানা কর্মসূচি নিয়ে হাজির হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে এ তৎপরতা আরও বেড়েছে।
ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ছুটছেন জামায়াত নেতারা। প্রার্থী ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, অসহায় মানুষের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ড চালাবেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুল আমার দেশকে বলেন, কেন্দ্র থেকে আলাদাভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। তারা নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং গরীবদের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণ করবেন। ঈদ পুনর্মিলনীসহ অন্য সব স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাবেন জামায়াত নেতারা।
তিনি আরও বলেন, দলীয় কাজে ব্যস্ততা এবং বিগত ৫ আগস্টের আগে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে অনেকেরই নিজ এলাকায় ঈদ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এখন স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ এসেছে। তাই ঈদের সময়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। জামায়াত আমির ঢাকা-১৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। গত ঈদুল ফিতর তিনি ঢাকাতেই উদযাপন এবং শহীদ পরিবারের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে তিনি এবারের ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন মৌলভীবাজার জেলায় নিজ গ্রামে। এরই মধ্যে তিনি দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
সূত্রমতে, দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান (রাজশাহী-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের (কুমিল্লা-১১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ও মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় নিজ নিজ গ্রামে ঈদ করবেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে আছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম (রংপুর-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) ঢাকায়, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় নারায়ণপুর গ্রামে ঈদ করবেন।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় নওকৈড় গ্রামে, হামিদুর রহমান আযাদ (কক্সবাজার-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) ঢাকার বসুন্ধরায়, মাওলানা আবদুল হালিম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ভাঙ্গাপুষ্কুরুনী গ্রামে, অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল (বরিশাল-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) বরিশাল জেলায় নিজ গ্রামে, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট জেলায় নিজ গ্রামে, মাওলানা মোঃ শাহজাহান চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঈদ উদযাপন করবেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যথাক্রমে সাইফুল আলম খান মিলন (ঢাকা-১২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) ঢাকায়, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ (ময়মনসিংহ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় নিজ গ্রামে ঈদ উদযাপন করবেন।
এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব ঢাকায়, অধ্যক্ষ মোঃ শাহাবুদ্দিন বগুড়ায়, অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে, মোবারক হোসাইন ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং মসজিদে, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নিজ গ্রামে এবং উত্তরের আমির মোঃ সেলিম উদ্দিন (সিলেট-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) সিলেট জেলায় নিজ গ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করীম (লক্ষীপুর-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) এবং দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ (পটুয়াখালী-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী) নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন এবং নির্বাচনি গণসংযোগ করবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৪ আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. আতাউর রহমান সরকার এরই মধ্যে নিজ এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। বৃহস্পতিবার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়ন অফিসে নির্বাচনি আসন পরিচালনা কমিটির এক প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, কসবা-আখাউড়া উপজেলাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত মডেল এলাকা করতে চাই। তিনি বলেন, শিক্ষা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং অনেক গুণী জনের জন্মস্থান কসবা-আখাউড়া উপজেলাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদকমুক্ত সমৃদ্ধ উপজেলায় পরিণত করতে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক আল্লাহভীরু নেতৃত্বের বিকল্প নেই। জামায়াত জাতির সামনে সে ধরনের নেতৃত্বই তুলে ধরেছেন। বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কসবা-আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঈদ পুনর্মিলনী ও গণসংযোগ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।
একইভাবে জামায়াতের অন্য নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় ঈদের আমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকার আসনগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ঈদ উদযাপন ও শুভেচ্ছাবিনিময় করবেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জামায়াতের নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'আজকেই যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমতল মাঠ তৈরি, ফেয়ার ইলেকশনের পক্ষে জাতি প্রস্তুত এবং সব অর্গান প্রস্তুত হয়, তাহলে জামায়াত সেই নির্বাচনে যাবে।'