
দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবং কৌতূহল থাকলে এখনই রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান। মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। তবে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে রাজনীতিতে তার আসার সম্ভাবনার কথাও জানা গেছে। এদিকে পরিবারের সঙ্গে এক মাস ব্যস্ত সময় কাটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার লন্ডন যাবেন জুবাইদা রহমান। বেলা ১১টায় কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে মায়ের প্রতিষ্ঠিত স্কুল ‘সুরভি’র শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠান ও বিকেলে নিজ বাসায় পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন জুবাইদা রহমান। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের অনেকের প্রত্যাশা, দেশের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ও যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে এবং রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। এই দিক দিয়ে ডা. জুবাইদা রহমান হতে পারেন আদর্শ। কেননা, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ডা. জুবাইদা রহমান রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তিনি রাজনীতিতে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। রাজনীতি হলো মানবসেবার জায়গা। তিনি বহুকাল ধরে মানবসেবায় সম্পৃক্ত। সেটি রাজনীতিরই অংশ। তবে ডা. জুবাইদা আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসবেন কি না, সেটি তার বিবেচ্য বিষয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৭ বছর পর গত ৬ মে দেশে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। ওইদিন খালেদা জিয়াকে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্বাগত জানান। পাশাপাশি জুবাইদা রহমানকেও স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও পোস্টার প্রদর্শন করা হয়। তাকে সম্মান জানিয়ে তার নিজ এলাকা সিলেট-১ আসনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চেয়ে ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো হয়। তার পর থেকে তার রাজনীতিতে আসার বিষয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। তবে বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখনই রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না জুবাইদা রহমান।
আলাপকালে বিএনপি নেতারা কালবেলাকে জানিয়েছেন, সারা দেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ডা. জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসুক। তাদের সেই প্রত্যাশা থেকে ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার-ফেস্টুন এবং পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনিও রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এ ছাড়া দলের মধ্যেও তাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তাই এটা বলা যায় যে, দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে বসবাস করলেও সহসাই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো থাকলেও তিনি রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে শক্ত অবস্থানে রয়েছে দল। প্রথম দিকে তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কিছুটা ‘অস্বস্তি’ থাকলেও নেতৃত্বের গুণে এখন তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। আর তারেক রহমানও চান না এই মুহূর্তে ডা. জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসুক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান কালবেলাকে বলেন, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, ডা. জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে সরাসরি আসুন। সে লক্ষ্যেই তার অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিভিন্ন জায়গায় তার নামে এবং তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে ব্যানার-পোস্টার করেছেন। কিন্তু এটা তার রাজনীতিতে আসার কোনো ঘোষণা নয়। ডা. জুবাইদা রহমান নিজেও রাজনীতিতে আসার কোনো ঘোষণা দেননি। আমরাও আনুষ্ঠানিকভাবে তার রাজনীতিতে আসার ইচ্ছার বিষয়টি জানি না। এটা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কোনো আলোচনা হয়নি।
জুবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বলেন, এখনই তিনি (ডা. জুবাইদা) রাজনীতিতে আসছেন না। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। সেসব কাজকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, দেশের প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দল কখনো প্রয়োজন মনে করলে ডা. জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসবেন কি না, সেটা তখন সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ডা. জুবাইদা রহমানের মতো বরেণ্য চিকিৎসক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান রাজনীতিতে এলে সেটি হবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। যদিও তিনি এখনই রাজনীতিতে আসবেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হলেন জিয়া পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি। তার নেতৃত্বে শুধু বিএনপিই নয়, পুরো দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। যার প্রমাণ ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ করে গত বছর ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ।
স্বমহিমায় উজ্জ্বল ডা. জুবাইদা: জুবাইদা রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে। তার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মরহুম মাহবুব আলী খান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারেও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী ডা. জুবাইদা রহমানের চাচা। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন।
ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিন বিভাগে বিদ্যায়ন করে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেছেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে ডা. জুবাইদার বিয়ে হয়। তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা দম্পতির জায়মা রহমান নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে। যিনি যুক্তরাজ্যে বার-এট ল ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং মা-বাবার সঙ্গে সেখানেই থাকছেন।
২০০৮ সালে জেলমুক্তির পর শিক্ষাছুটি নিয়ে তারেক রহমানের উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান জুবাইদা রহমান। পরবর্তীকালে হাসিনা সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০২৫ সালের ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।