Image description

 জাতীয় সংসদে আনা কোনো বিলে সদস্যদের ভোটদানের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনার পথ খুলছে। ভোটের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের (এমপি) স্বাধীনতা দিতে একমত হয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল। দলগুলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করে অর্থবিল, আস্থা-অনাস্থা ভোট, সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দিতে একমত হয়েছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও দলের বিরুদ্ধে ভোটাধিকারের পক্ষে মত দিয়েছে, যা একজন সংসদ সদস্যকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই সংলাপে ৭০ অনুচ্ছেদ, নারী আসন এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটি নিয়ে দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি হলেও নারী আসন নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। 

গত মার্চ থেকে প্রথম দফার সংলাপ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলোর ১৬৬ সুপারিশে ৩৩ রাজনৈতিক দল এবং জোটের মতামত নিয়ে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রথম দফার ওই সংলাপে কমিশন প্রতিটি দল এবং জোটের সঙ্গে আলাদাভাবে বসলেও সোমবার শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার সংলাপে সব দল একসঙ্গে বসছে। 

চলতি সংলাপে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, বিএনপি এবং প্রধান দলগুলো আগের তুলনায় নমনীয় হলেও বিএনপির মিত্র এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো কঠোর অবস্থানে।

৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কমিশন প্রস্তাব করেছিল সংসদ সদস্যরা অর্থবিল বাদে বাকি সব বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। এতে রাজি হয়নি বিএনপি, জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল। গতকাল সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দলীয় অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “অর্থবিল ছাড়া আস্থা-অনাস্থা ও সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় বাদে অন্য সব বিষয়ে এমপিরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।”

সংলাপে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের দলের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “অর্থবিল, আস্থা-অনাস্থা ও সংবিধান সংশোধন ছাড়া বাকি বিষয়ে ভোটদানে স্বাধীন থাকবেন সংসদ সদস্য।” 

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবে এমপিদের ভোটদানে স্বাধীনতা থাকতে হবে। তবে সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য আস্থা-অনাস্থা প্রস্তাবে এমপিদের দলীয় নির্দেশনায় ভোট দিতে হবে।

অন্য সব দল ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করে অর্থবিল, আস্থা-অনাস্থা ও সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব ছাড়া বাকি বিষয়ে এমপিদের ভোটদানে স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে মত দেয়।

সংলাপ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “যদি কোনো সময় যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, তখন যাতে এমপিরা দলের বিরুদ্ধে না যেতে পারে, সেই জন্য ৭০ অনুচ্ছেদে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেবে।”

“জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু এলে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সব রাজনৈতিক শক্তির একসঙ্গে থাকা উচিত” বলে মন্তব্য করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। বলেন, “এখানে অস্পষ্ট অবস্থান সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।”

জাতীয় সংবিধানে ‘রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া’ বিষয়ক ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

এর ফলে সংসদের দলীয় সদস্যদের ভোটাধিকার পুরোপুরি দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকারি দল ইচ্ছা করলে বিরোধী দলগুলোর প্রবল আপত্তির মুখেও যে কোনো বিল সংসদে পাস করিয়ে নিতে পারে।

নারী আসনসহ অন্যান্য ইস্যু

সংলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুন অর্থাৎ ১০০ করতে রাজি। তবে সরাসরি নির্বাচন নয়, বিদ্যমান সংরক্ষিত পদ্ধতিতেই মত তাদের। এ ক্ষেত্রেও এনসিপি চায় সরাসরি নির্বাচন। বামপন্থি দলগুলো নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চায়। 

অপরদিকে ইসলাম ভিত্তিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভোটের অনুপাতে নারী আসনের বণ্টন চাইলেও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস নারী আসনই চায় না। 

সূত্র আরও জানিয়েছে, সংলাপের আলোচ্যসূচিতে থাকলেও সময়ের অভাবে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়সীমা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়নি।

শীর্ষনিউজ