
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের যে পদ্ধতি আছে, এই ব্যবস্থায় নারী এমপিদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি লেখেন, সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের যে পদ্ধতি আছে, এই ব্যবস্থায় নারী এমপিদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। এজন্য এনসিপি থেকে আমরা বলছি যে, নারী সাংসদের যেন একটি নির্দিষ্ট আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মানুষের ভোটে নির্বাচিত হন।
তাসনিম জারা লেখেন, তার এ অবস্থানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক লিখেছেন, সাংসদের কাজ কী, সেটা কি এই এনসিপি নেতা জানেন? স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগসূত্র কেন হতে হবে? স্থানীয় সরকারের কাজটা কী তাহলে? এই মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন নির্বাচন কমিশনের একজন ডেপুটি সচিবও।
তাদের উদ্দেশে এনসিপির এ সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব লিখেন, ওনাদের মতো বিজ্ঞজনের মধ্যে যেহেতু কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে, তাই ভাবলাম সংক্ষেপে লিখি সংসদ সদস্যের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকা কেন জরুরি। কেন এটা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির অংশ।
১. সংসদ সদস্য শুধু আইন প্রণয়ন করেন না। তারা আইন প্রণয়ন করেন কোনো জনগোষ্ঠীর পক্ষে, তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যাকে সামনে রেখে। এই কাজটি তখনই অর্থবহ হয়, যখন সাংসদের নিজস্ব একটি জনভিত্তি থাকে, যারা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং যাদের কাছে তিনি জবাবদিহি করতে বাধ্য। প্রতিনিধিত্বের ধারণাই হল, ‘আমি কথা বলছি, কারণ আমাকে কেউ পাঠিয়েছে।
২. যদি কোনো সাংসদের একটি নির্দিষ্ট ভোটদাতা জনগোষ্ঠী না থাকে, তাহলে তার কাজের জবাবদিহি থাকে কেবল দলের কাছে। তারা তখন দলের কথা মত চলেন, দল যা চায় সেটা করেন। কিন্তু গণতন্ত্রে সাংসদের প্রথম দায়বদ্ধতা থাকা উচিত জনগণের কাছে, যাদের পক্ষে তিনি আইন প্রণয়ন করছেন। ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত না হলে, এই জবাবদিহির চক্রটাই ভেঙে পড়ে।
৩. কারখানার শ্রমিকদের সমস্যার কথা আপনি রিপোর্ট পড়ে জানতে পারেন, কিন্তু সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে সেই শ্রমিকের কান্না আপনি নিজের অফিসে শুনবেন।
৪. বলা হয়, ‘তাহলে স্থানীয় সরকারের কাজ কী?’ উত্তর সোজা, স্থানীয় সরকার বাস্তবায়ন করে, সংসদ সদস্য নীতি নির্ধারণ করেন। স্থানীয় সরকার যদি বাজেট না পায়, দুর্নীতি হয়, জনগণ সেবা না পায় - এই ব্যর্থতা পার্লামেন্টে তুলে ধরার দায়িত্ব সংসদ সদস্যের। এটা কোনো দ্বন্দ্ব না, বরং গণতান্ত্রিক কাঠামোর দুই স্তরের সংযোগ।
৫. যুক্তরাজ্যের প্রতিটি এমপি সপ্তাহে একাধিকবার ‘কনস্টিচুয়েন্সি সার্জারি’ চালান, যেখানে এলাকার সাধারণ মানুষ এসে নিজেদের সমস্যার কথা বলেন। হাউজিং সমস্যা, বেনিফিট কাটা, ইমিগ্রেশন, সব কিছুই শোনা হয় এবং সেই কথা সংসদে তোলা হয়। এমপির সাংবিধানিক কর্তৃত্ব আসে এই যোগসূত্র থেকেই। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কেউও বলেন না, ‘আমার জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও চলবে।’
শেষে জারা লিখেন, সংসদ সদস্য মানেই একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। আর প্রতিনিধিত্ব মানেই - ভোটার, এলাকা, সমস্যা ও সমাধানের দায়িত্ব। সেই ক্ষমতা কেবল মানুষের সাথে যোগসূত্র দিয়েই অর্জিত হয়। এটা নারী বা পুরুষ, কারো জন্যই ভিন্ন নয়। আমরা চাই নারী নেতৃত্ব আসুক, কিন্তু সেটা যেন হয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে, যেখানে তারা আইন করবেন, জবাব দেবেন, এবং মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এটাই তো গণতন্ত্র।