
জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর। কিছুদিন আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের আপন ভাই তিনি। তার এনসিপিতে যোগদানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তিনি আগেই ছাত্রদলের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ায় এনসিপিতে যোগদানের বিষয়টি স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন। তবে অনেক নেতা বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। আবার স্বাগতও জানিয়েছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন সোমবার (২ জুন) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তিনি ছাত্রদল ছেড়েছেন ছয় বছর আগে। নিজে একটি দলও করেছিলেন। এখন এনসিপিতে যোগদান নতুন কিছু নয়। এটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। সাম্য যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তখন ছাত্রদলের পদধারী নেতা ছিলেন। তাকে হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আমাদের যে আন্দোলন চলছিল, তা অব্যাহত থাকবে।’
ছাত্রদলের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর। তাকে এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর সমন্বয় কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে গরিব পার্টি নামে দলেরও উদ্যোক্তা ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেছেন, ‘২০১৯ সালে ছাত্র রাজনীতি ছাড়ার পর থেকে আর কিছুতে ছিলাম না। জিয়াউর রহমানের আদর্শের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমার বাবাও ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করার প্রচেষ্টা হিসেবেই এনসিপিতে যোগ দিয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ অনেকে। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খলিল ফিরোজ লিখেছেন, ‘গরিবের ব্যাংকের মালিক হয়ে গেছে দেশের সরকার প্রধান। এইদিকে আবার গরিব পার্টির মহাসচিব নিজেই কিংস পার্টিতে যোগ দিয়ে দিছে। বুঝতেছি না এইদেশের গরিবদের এইবার কি হবে? সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর ভাই?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈকত ইকবাল বলেছেন, ‘বিএনপির এমন রমরমা সময়ে এসে উনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। ভালো করছেন কী খারাপ করেছেন সেটা বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি, ভাই যে দলেই যাবেন, আশা করছি উনি সত্যাশ্রয়ী রাজনীতির পথকেই বেঁছে নিবেন।’
ফয়সাল নূর পোস্ট করেছেন, ‘সাম্যের জানাজায় যারা যায়নি সাগর ভাই যোগ দিলেন তাদের দলে, আবার জানাজায় না যাওয়া দল গর্ব করতেসে সাম্যের ভাই আমাদের দলে আসছে। ছাত্রদল বিচারের দাবীতে আন্দোলন করায় এরাই বলছিল, ছাত্রদল লাশের রাজনীতি করতেসে। সরি মুনাফেকস, জুলাই সহযোদ্ধার নিথর দেহের সাথে দুই কদম না হেঁটে, একবারও বিচার না চেয়ে সাম্যের ভাই আমাদের দলে যোগ দিয়েছে বলে দাঁত কেলানোটাই আসলে লাশের রাজনীতি। শুভকামনা আপনি ও আপনাদের জন্য। তবে আমি জুলাই যোদ্ধা শহীদ সাম্যের ভাই, এ কথা বলার অধিকার আপনি হারাইসেন।’
এ পোস্ট শেয়ার করে ছাত্রদলের আরেক সহ-সভাপতি হাসান আল আরিফ লিখেছেন, ‘সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর ভাই? ভাই, আজ থেকে ১০ বছর পরে আপনার সাথে একটা মূল্যায়নসভায় বসব। যদি আল্লাহ তায়ালা উভয়কেই বাঁচিয়ে রাখেন।’
শাহজাহান শুভ তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সাগর ভাইকে আমি চিনি সম্ভবত ২০০৫ সাল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পাশাপাশি রুমে থাকতাম আমরা। ভাই যোগ দিলেন এনসিপিতে। জুলাই বিপ্লবী তারুণ্যের একটা বড় অংশ এনসিপির সাথে জড়িত। শুরুতে চমক সৃষ্টি করে নানা কারণে এখন কিছুটা কোনঠাসা দলটি। আশা করি, সাগর ভাই তরুণদের এই দলে ভালভাবে জায়গা করে নেবেন।’
জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে বহিষ্কার হন সাগর। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে সংগঠনে ফিরিয়ে নিয়েছিল ছাত্রদল।
গত ১৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাবির এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। সাম্যের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। তাকে হত্যার ঘটনায় এখনও আন্দোলন করছে ছাত্রদল। তিনি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সর্বাত্মক অংশ নেন। সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগরেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।