
অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। দলটি সরকারকে সন্দেহের চোখে দেখছে। এ সংকটের প্রধান কারণ নির্বাচনি রোডম্যাপ। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট চায়। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেনÑডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তারুণ্যের সমাবেশে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে জাপান সফরে রয়েছেন। সেখানে তিনি বিএনপির নাম উল্লেখ না করে বলেন, একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। এই বক্তব্যের পর জাতীয়তাবাদী দলটির নেতারা সরকারকে একের পর এক আক্রমণ করছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা বলতে চাই, শুধু একজন লোক নির্বাচন চায় না, তিনি হলেন ড. ইউনূস। নির্বাচন যদি করতে হয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন আদায় করে নেবে।’
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণায় সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করছে বিএনপি। দেশের অন্যতম প্রধান এ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবির পক্ষে শুরুতে কিছুটা নরম হলেও সময়ের ব্যবধানে চাপ বাড়িয়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ দলটি সরকারের ওপর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করেছে। সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করলে বিএনপি ‘নিজেরাই’ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেÑএমন হুঁশিয়ারিও দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একটি ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার অবসানের পর দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। সরকার সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে। এ সময় দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা কারো কাম্য নয়। সরকারের উচিত আলোচনার মাধ্যমে দলগুলোর মধ্যে একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করা। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা হলে সে পরিবেশ তৈরি হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নির্ধারণ করলেও এতে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। দলটির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে আসছে।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি ন্যূনতম মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। সংস্কারের স্বার্থে নির্বাচন কিছুটা পেছালে তাদের কোনো আপত্তি নেই। জামায়াতে ইসলামী রোজার ঈদের আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছে। এক্ষেত্রে ঈদের পর গেলেও দলটির কোনো আপত্তি থাকবে না। আর এনসিপি প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনে তাদের অনাপত্তির কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা মৌলিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের অন্য দলগুলোও যথাসম্ভব দ্রুত নির্বাচন নিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছে। অবশ্য এ দলগুলোক বিএনপির মতো ‘ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হতে হবে’Ñএমন অনড় অবস্থানে দেখা যায়নি। যদিও বিএনপি দাবি করেছে, তারা ছাড়াও ১২ দলীয় জোট ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।
গত ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ২০টি দলের নেতাদের বৈঠকের পর প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, ড. ইউনূসকে সবাই সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা যে সংস্কার করছি, আমরা যে বিচারকাজ শুরু করেছি, নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেছি; তাতে তারা পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা আবারও জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করবেন। ৩০ জুনের পর একদিনও পেছাবে না। এতে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এর আগের দিন ২৩ মে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বৈঠকের পর প্রেস সচিব বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে। জামায়াত মনে করে, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হতে ডিসেম্বর লেগে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে তিনটি দলকেই বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। জামায়াত ও এনসিপি এই টাইমলাইনকে সমর্থন জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা উল্লেখ করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর দেওয়া ওই ভাষণে তিনি বলেন, অল্প কিছু সংস্কার হলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার হলে আরো অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে ওই সময়ের ব্যাখ্যা দিয়ে ‘অতিরিক্ত ছয় মাস’ বলতে আগামী বছরের জুনের কথা বলা হয়। পরে স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছিÑ এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অবশ্য এর আগে-পরে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা একই কথা বলে আসছেন। সরকারের সর্বশেষ অবস্থানও এটাই। জাপান সফরকালেও প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি, জায়ায়াতে ইসলামীসহ জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলো গত ২৪ ও ২৫ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে গেলেই নির্বাচনের তারিখ প্রশ্নে সবাই আগের অবস্থানের কথাই জানিয়েছেন।
দুই দিনব্যাপী সাক্ষাতের শেষ দিনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা আবারও জানিয়েছেনÑডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করবেন। ৩০ জুনের পরে যাবে না। এতে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওই দিন অবশ্য একাধিক দলের নেতারা একই ধরনের মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের কঠোরভাবে জানিয়েছেন—২০২৬ সালের ৩০ জুনের পর এক ঘণ্টাও তিনি ক্ষমতায় থাকবেন না। প্রধান উপদেষ্টার কথায় তারা আস্থা স্থাপন করেছেন বলেও জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ মে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে দলটির নীতিনির্ধারকরা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ৯ মাসেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষিত না হওয়ায় অসন্তোষও প্রকাশ করে। তাদের দাবি, সরকারের মধ্যে কতিপয় স্বার্থান্বেষী চক্র নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি করছে। ফলে নানা ঘটনায় পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথের দাবির আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলা হয়। নগর ভবনের টানা ওই আন্দোলনকে যুমনা পর্যন্ত আনা হয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবির আন্দোলন ক্যাম্পাস থেকে শাহাবাগমুখী করা হয়। এ কর্মসূচি দুটি সরাসরি বিএনপির ব্যানারে না হলেও দলটির পুরোপুরি সমর্থন ছিল বলে জানা যায়। অন্যান্য পেশাজীবী ও ছাত্রদের ধারাবাহিক আন্দোলনের পাশাপাশি একই সঙ্গে বিএনপির দুটি কর্মসূচি পালনে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুোম্মদ ইউনূস। তিনি পদত্যাগেরও হুমকি দেন। পরে অবশ্য বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অন্যান্য দলের মতো বিএনপিও সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। অবশ্য সরকারের প্রতি সমর্থন জানালেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পরও বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের বিষয়ে অনড় অবস্থানের জানান দিয়েছে। ডিসেম্বরে ভোটের দাবিতে নিয়মিত বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে আসছেন দলটির নেতারা।
গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সালাহউদ্দিন আহমেদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। ডিসেম্বরে ভোটের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টা নিজেই দিয়েছেন বলে দাবি করেন মির্জা আব্বাস। জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, বিএনপি বরাবর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস সাহেব নিজে বলেছেন। আমরা বলিনি, এটি তারই প্রস্তাব। পরে তিনি সেখান থেকে শিফট করে জুন মাসে চলে গেলেন। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশে কখনো হবে না।
তিনি জোর গলায় বলেন, ‘নির্বাচন যদি করতে হয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। নির্বাচন যদি করতে না চান, তাহলে সেটি ইউনূস সাহেবের দায়দায়িত্ব, আমাদের নয়। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন আদায় করে নেবে।
প্রধান উপদেষ্টা জাপানে বসে বিএনপির নামে বদনাম করছেন বলেও মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন। ‘একটি দল ডিসেম্বরে ভোটা চায়’ জাপানে প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের জবাবে আব্বাস বলেন, উনি বলেছেন দেশে নাকি মাত্র একটি দল নির্বাচন (ডিসেম্বরে) চায়। কিন্তু আমরা বলতে চাই শুধু একটি লোক নির্বাচন চান না, তিনি হলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কেবল একটি দল নির্বাচন চায় প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য সঠিক নয়। যথেষ্ট তথ্য না থাকায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব রাজনৈতিক দলই চায় ডিসেম্বরে নির্বাচন হোক। প্রধান উপদেষ্টা কেন বিএনপিকে নির্বাচন নিয়ে দোষারোপ করলেন, তা বোধগম্য নয়।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতির মধ্যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে এবং জাতির প্রত্যাশার ওপর আমরা আমাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছি।
পরশু খুলনায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমাদের নেতা (তারেক রহমান) রাষ্ট্রের, সরকারের, বিএনপির এবং দেশের মানুষের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। আপনি যদি ডেট দিতে না পারেন, আরেকটু অপেক্ষা করেন, আমরাই ডেট দিয়ে দেব।
এ সময়ে তিনি আরো বলেন, তারেক রহমান চূড়ান্ত কথা বলেননি। যখন চূড়ান্ত কথা বলবেন, সারা দেশ স্থবির হয়ে যাবে, সেদিন বুঝবেন।
জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে দুদু বলেন, তারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে, অথচ তারাই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলেছে। আমি নিশ্চিত, এরা নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের স্ত্রীরা ধানের শীষে ভোট দেবে।
গত ২৮ মে ঢাকার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভার্চুয়ারি যুক্ত হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘টালবাহানা’ শুরু হয়েছে বা চলছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে গতকাল যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গী ১২ দলীয় জোট ও কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) বিবৃতি দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট চেয়েছে। তারা বলেছে, এ বছরের ডিসেম্বরে কেবল একটি দল নয়, দেশের সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন চায়। মাত্র একটি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন চায় বলে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সঠিক নয় বলে তারা দাবি করেন।
নির্বাচন প্রশ্নে বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকারের মধ্যে একটি বোঝাপড়ার দরকার রয়েছে। আর এই কাজটি সরকারকেই করতে হবে। কর্তৃত্ববাদী অবস্থান থেকে সরে এসে দলগুলোকে আস্থার জায়গায় আনতে হবে। বোঝাপড়ার অভাবে যদি ভিন্ন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার দায় তো সবার আগে সরকারকে নিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ভোট অনুষ্ঠানের উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, গত আগস্টে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এক্ষেত্রে একেবারেই তারা সময় পাননি বিষয়টি কিন্তু তা নয়। কাজেই সরকারের উচিত হবে দলগুলোতে আস্থায় নিয়ে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়ার কারণে বিএনপিসহ কিছু দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া শ্রেয় উল্লেখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ডিসেম্বর হোক বা তার পরে হোক একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা দরকার। যে মুখোমুখি অবস্থান আমরা দেখছি আমার মনে হয় রোডম্যাপ ঘোষণা হলে তা আর থাকবে না। কারণ নির্বাচন তো বললেই হবে না। দলগুলোর একটি প্রস্তুতির বিষয় আছে। এজন্য সরকারের উচিত হবে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে দলগুলোর মধ্যে একটি আস্থা তৈরি করা।
নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ আমার দেশকে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সবাই আগামী দিনের শাসনকর্তা মনে করছে। সেই দলের তরফ থেকে নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়া এবং সরকারকে উদ্দেশ্য করে এ ধরনের বক্তব্য এলে দেশ কোথায় যাবে তা ভাবনার বিষয়। আমার তো মনে হচ্ছে সরকার-বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার পতনের পর রাজনৈতিক দলের এ অবস্থান সত্যি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি বিএনপির নেতারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার কথা বলছেন। এটা কী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার যৌক্তিক বক্তব্য হতে পারে? উনারা কী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন?