
ময়মনসিংহে সমন্বয়কদের ঝুলিয়ে হত্যা করে প্রতিবিপ্লবের ডাক দেওয়া হয়েছে। এমন হুমকির পর এক সমন্বয়ককে ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। অভিযোগ দেওয়ার চারদিন পেরিয়ে গেলেও টনক নড়েনি পুলিশ ও প্রশাসনের। বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হুমকিদাতা, নিয়মিত যাতায়াত করছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে।
জানা গেছে, গত ২৬ মে সকালে ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ এলাকায় আওয়ামী লীগপন্থি সন্ত্রাসীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব ও সমন্বয়ক আল নূর মোহাম্মদ আয়াশের ওপর হামলা চালায়। তাকে লাঠি ও রড দিয়ে পেটায় এবং ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত হয়ে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর তিনদিন আগে আওয়ামী লীগের দোসর সাংবাদিক বদরুল আমিন ফেসবুকে পোস্ট করে সমন্বয়কদের ঝুলিয়ে হত্যা করে প্রতিবিপ্লবের ডাক দেন। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন আওয়ামী পান্ডা ফেসবুক, এমনকি প্রকাশ্যে সম্বয়কদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এতে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নায়ক জুলাই যোদ্ধাদের জীবন।
অনুসন্ধানে দেখা য়ায়, বদরুল নিয়মিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে বেশ কয়েকবার মহানগর আওয়ামী লীগের পলাতক এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার তথ্য নিশ্চিত করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। শুধু তাই নয়, গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ডজনখানেক নেতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন বদরুল।
বদরুল বর্তমানে স্থানীয় উর্মি বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন, যার প্রকাশক ও সম্পাদক ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুমন ভৌমিক। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা ময়মনসিংহের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে বদরুলসহ কিছু দালাল সাংবাদিককে অর্থায়ন করছেন।
সমন্বয়ক আয়াশ বলেন, আমাকে হত্যাচেষ্টা চালানোর পর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিলাম। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অভিযুক্তদের ধরা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ দেশে ফেরার আগেই শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙার প্রতিশোধ নিচ্ছে তাদের পান্ডারা। আর প্রশাসন চেয়ে চেয়ে দেখছে। বদরুলের বিষয়ে পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে, এরপরও কিছু হয়নি।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, আয়াশের ওপর হামলার পরদিন কোতোয়ালি থানায় যান বদরুল। তিনি ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না তা জানার চেষ্টা করেন। সে সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার’ পরামর্শ দেন। এরপর থেকে বদরুল ধারাবাহিকভাবে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছেন এবং পলাতক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করার কারণ জানতে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সাইফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।