
মুরাদনগরে সাবেক সংসদ-সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ভাতিজা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সরকারের ‘রাজত্ব’ বহাল রয়েছে। উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন এখনো এলাকায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব দেখাচ্ছেন।
বিগত ১৬ বছরের মতো এখনো ইউপি চেয়ারম্যান এলাকার সব সালিশ-দরবার এবং অবৈধ বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। এতে এলাকার জনসাধারণের মাঝে ফ্যাসিবাদের আতঙ্ক কাটেনি।
এদিকে আ.লীগের ১৬ বছর সব ধরনের অপকর্ম করে ওই ইউপি চেয়ারম্যান এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে থাকেন এমন নানা প্রশ্ন এলাকাবাসীর মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করেই তিনি তার রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিন জানা গেছে, কুমিল্লার-৩ (মুরাদনগর) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য এবং জেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ভাতিজা ইকবাল হোসেন সরকার। বিগত ইউপি নির্বাচনে ইকবাল হোসেন সরকার চাচার প্রভাবে নৌকা প্রতীকে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এমপি জাহাঙ্গীর আত্মগোপনে থাকলেও তার পরিবারের সব সদস্য এলাকায় বহাল তবিয়তে আছেন। এমনকি অবৈধ বালু ব্যবসাসহ সব ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ধরে রেখেছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ১৬ বছর ধরে এলাকায় অবৈধ বালুমহালের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। ওই চেয়ারম্যানের মহালের বালু ছাড়া এলাকায় কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। গত ১৬ বছর সরকারি-বেসরকারিভাবে যত উন্নয়ন প্রকল্প, ভবন নির্মাণসহ পাকাকরণের কাজ হয়েছে সব কিছুতে বাধ্যতামূলক ইকবাল চেয়ারম্যানের বালু ব্যবহার করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য হাতিয়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস ছিল না কারও। অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
এদিকে গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন হলে কয়েক দিনের জন্য থমকে যান ইকবাল চেয়ারম্যান। এক সপ্তাহের মধ্যেই রহস্যজনক কারণে তিনি আবারও অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকার সালিশ-দরবার এবং অবৈধ বালুর ব্যবসা। এখনো এলাকার সব উন্নয়ন কাজে ইকবাল চেয়ারম্যানের মহালের বালু ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এলাকার লোকজন বলছেন, দেশে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নে ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। ওই ইউপিতে এখনো আ.লীগের সংসদ-সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকার পরিবারের আধিপত্য এবং শাসন চলছে। ফ্যাসিস্ট পতনের ৯ মাস অতিবাহিত হলেও ওই এমপি পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা দিতে এবং মুখ খুলতে সাহস পাননি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বিএনপি নেতা জানান, সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর সরকারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিএনপির অনেক নেতার আঁতাত রয়েছে। যার ফলে পুলিশও তাদের সামনে আসতে ভয় পায়।
রামচন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল হক বলেন, গত ১৬ বছর ইকবাল চেয়ারম্যান একচেটিয়া এলাকার বালুমহালগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এলাকার ড্রেজার, ভেকু এবং মাটির ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়েছেন ইকবাল। ৫ আগস্টের পর সপ্তাহখানেক বিরত থাকলেও এখন পুরোদমে এলাকার সালিশ-দরবার এবং অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
একই এলাকার মাওলানা আবু বকর বলেন, ‘ইকবাল চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হবে না আ.লীগ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ এখনো ফ্যাসিবাদের শাসনের মধ্যেই রয়েছে। ইকবাল চেয়ারম্যান বালু ব্যবসা এবং মাটি ব্যবসা করে কী পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন তা অনুমান করা যাবে না। ধারণার বাইরে টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।’
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হিসাবে এলাকার দায়িত্ব পালন করছি। বালুমহালগুলো আমার পুরোনো ব্যবসা। আমি কারও ওপর জোরজবরদস্তি করি না।’
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সরকার সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের আপন ভাতিজা। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাই চাইলেও আমরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। যদি কোনো অভিযোগ পাই তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’