
সম্প্রতি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে দলটির বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত ও বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটিকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছেন অনেকে। দেশে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটির জন্য এই সিদ্ধান্ত বিশাল এক ধাক্কা বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এ ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা—আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না? তবে সরকার এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে কোন কোন মামলা চলমান আছে এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকার সীমিত হবে কি না, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা হয়তো নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করবেন, অথবা বিদ্যমান নিবন্ধিত দলগুলোতে যোগ দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের অনেক সাবেক এমপি ও মন্ত্রী, যারা বর্তমানে সরাসরি কোনো মামলায় অভিযুক্ত নন, তারা এখন দোটানায় পড়েছেন।
সংবিধান ও প্রচলিত নির্বাচনী আইন অনুসারে, একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন স্থগিত হওয়া মানে সেই দলের ব্যানারে রাজনৈতিক কার্যক্রম কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দলীয় নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে না, যদি না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হন বা আদালতের রায়ে অযোগ্য বিবেচিত হন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলেও কোনও ব্যক্তি যদি বিচারাধীন না থাকেন বা দণ্ডপ্রাপ্ত না হন, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কিংবা অন্য বৈধ রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হবে, যেসব প্রার্থী সাবেক ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের অতীত কর্মকাণ্ড, অভিযোগ এবং বিচারাধীন অবস্থার পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই করা।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী দলীয়ভাবে কোনও নেতা-কর্মী স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেউ যদি চান, স্বতন্ত্রপার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে যতি কোনও মামলা বা অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়- এমন অপরাধ বা দোষ না থাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা হয়তো নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করবেন, অথবা বিদ্যমান নিবন্ধিত দলগুলোতে যোগ দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের অনেক সাবেক এমপি ও মন্ত্রী, যারা বর্তমানে সরাসরি কোনো মামলায় অভিযুক্ত নন, তারা এখন দোটানায় পড়েছেন।
স্বতন্ত্রভাবে যদি কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে চান বা অন্য দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন, তাহলে আদালতের দণ্ডাদেশ না থাকলে নির্বাচন করতে পারবেন। এ পর্যন্ত যেটা আছে, পূর্বে যদি সংসদ সদস্য না থাকেন, তবে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে। অর্থাৎ ভোটারের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হবে যে, তাকে (প্রার্থী) তারা (ভোটার) সমর্থন করছেন। -দিলীপ কুমার সরকার, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন)।
তারা হয়তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন কিংবা বিদ্যমান কোনও ছোট দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কৌশল বেছে নিতে পারেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে নেতৃত্ব ও কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে জনপ্রিয় নেতারা ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে জনগণের সামনে আসবেন কি না এবং তারা কতটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি তুলে ধরতে পারবেন, সেটাই হবে আগামী দিনের মূল নির্ধারক।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, যেহেতু নিবন্ধন স্থগিত করেছে এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সে কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষে বা নেতা-কর্মীদের দলীয়ভাবে নির্বাচন করার আইনত সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বতন্ত্রভাবে যদি কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে চান বা অন্য দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন, তাহলে আদালতের দণ্ডাদেশ না থাকলে নির্বাচন করতে পারবেন। এ পর্যন্ত যেটা আছে, পূর্বে যদি সংসদ সদস্য না থাকেন, তবে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে। অর্থাৎ ভোটারের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হবে যে, তাকে (প্রার্থী) তারা (ভোটার) সমর্থন করছেন।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এর মধ্যে যদি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশ সেটি যদি অনুমোদিত হয়, তবে সেটি এক শতাংশের জায়গায় ৫০০ ভোটারের স্বাক্ষর লাগবে। আবার এর সঙ্গে এফিডেভিট যুক্ত করতে হবে।