‘আওয়ামী লীগের কয়েকটা ছেলের উপকার ভুল গেলে মুনাফিক হবো’ বলে মন্তব্য করেছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিয়ার রহমান। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে তার আলাপচারিতার এমন একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকায় এবং নিজ দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপির এই নেতা।
তবে অডিওর কণ্ঠ নিজের নয় বলে দাবি করেছেন শফিয়ার রহমান। তিনি বলেছেন, ‘এডিট করে আমার কণ্ঠ বানানো হয়েছে।’
এদিকে, উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা বলেছেন, অডিওটি তারা শুনেছেন। অডিওতে যে কণ্ঠ শোনা গেছে, তা বিএনপি নেতা শফিয়ারের বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।
১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের আলাপচারিতার অডিওতে শফিয়ারকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই লোক কয়টা আমার যে উপকার করে, করছে আওয়ামী লীগের আমলে। আমার জায়গার বিষয়ে বিশেষ করি ৭ থেকে ৮ জন ছেলে (নেতাকর্মী)। তাদেরকে তো আমি ভুলতে পারছি না। ভোলাও যাবে না। ভুললে মুনাফিক হবো।’
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর উপকারের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা শফিয়ার আরও বলেন, ‘আজকে তো বিপদ আছে। আমার যখন বিপদ আসছে, তখন ছক্কু আমার যে কাজটা করছে আমার বাপের সমতুল্য কাজ করছে। কথাটা বোঝেন। রেজাউল নাম চেংড়াটা, এরশাদুল এরা যে আমার ভূমিকাটা পালন করছে। ওটাই (ওখানে) বক্কর চাচা। তারা প্রকাশ্যে বলছে যে কেটা যায় শফিয়ার চাচার ঘরের ওটাই আমরা লাঠি ধরবো। ওদের ১০ জনের জন্য আমি তখন রক্ষা পাছি।’
নিজের সঙ্গে বিএনপির টিকে থাকার কথা জানিয়ে শফিয়ার আরও বলেন, ‘আমি টিকি আছি বিধায় এহানে বিএনপির কিছু শক্তি আছে। আজকে শহিদুর বিএসসির খাওয়া আছে যে এটেই আসি কোনও রাজনীতি করে। আসুক না ক্যানে। একদিনে ধাওয়াতে চলি যাইবে ওগুলা। আমরা বুঝি না।’
অডিওতে বলা নামের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছক্কু হলেন দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। রেজাউল ছাত্রলীগের কর্মী। আর এরশাদুল ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য।
শফিয়ারের জীবনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ভূমিকার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা হাট-বাজারের সরকারি খাস জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতা শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে স্থানীয় প্রশাসন দখলকৃত স্থান উচ্ছেদ করতে গেলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় উচ্ছেদে বাধা দেন শফিয়ার। পরে সরকারি খাস জমি উদ্ধার না করে ফিরে যায় প্রশাসন।
অডিওতে শহিদুর বিএসসি নামে যে ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি।
তাকে নিয়ে বিএনপি নেতা শফিয়ারের এমন মন্তব্য সম্পর্কে শহিদুর বিএসসি বলেন, ‘অডিওটি শুনেছি। ওটা শফিয়ারের কণ্ঠ। আমি আগামীতে নেতৃত্ব প্রত্যাশী। শক্ত প্রতিপক্ষ ভেবেই শফিয়ার আমাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। দাঁতভাঙ্গা বাজারে সে একজন ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তার ওপর ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ। এসব অপকর্ম আমলে নিয়ে দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা করি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হাট-বাজারের সরকারি জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণসহ সীমান্তে চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে শফিয়ারের বিরুদ্ধে। তিনি সবসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ান। তাই দল থেকে তার অপসারণ চায় স্থানীয় বিএনপি।’
তবে অডিওর আলাপচারিতার কণ্ঠ নিজের নয় দাবি করে শফিয়ার রহমান বলেন, ‘রেকর্ডটি আমার কণ্ঠের নয়। কেউ একজন এডিট করে এমনটি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সীমান্তে চোরাচালান কিংবা জমি দখলের অভিযোগ মিথ্যা। আমি যেসব জমি নিয়ে আছি সেগুলোর কাগজ আছে। এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু বলেন, ‘অডিওটি শুনেছি। সেটি শফিয়ারের কণ্ঠ। অডিওর বক্তব্যসহ একাধিক অভিযোগে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি জবাবও দিয়েছেন। জবাবে অডিওর বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।’
শফিয়ারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি অডিওর কণ্ঠ তার। তিনি অস্বীকার করে লাভ নেই। তার বিষয়ে জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’