Image description

দলের আদর্শ ও লক্ষ্যকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বড় পরিসরে সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং তরুণদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও জাতীয়তাবাদী আদর্শে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সেমিনার ও সমাবেশÑ এ দুই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি।

এর মধ্যে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘তারুণ্যের সেমিনার ও সমাবেশ’। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলÑ বিএনপির এই তিন সংগঠনের ব্যানারে এ কর্মসূচি হচ্ছে। দশ সাংগঠনিক বিভাগের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, সর্বশেষ রাজধানী ঢাকা শহরে এ কর্মসূচি হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে এ কর্মসূচি। এটি সফল করতে গত কয়েকদিন ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

এদিকে সারাদেশে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে দলের আদর্শ আর লক্ষ্যকে পৌঁছে দিতে বড় পরিসরে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এক কোটির বেশি সদস্য সংগ্রহ করতে আগামী ১৫ মে থেকে দুই মাসব্যাপী সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এরই মধ্যে এই কর্মসূচি এবং এক কোটির বেশি সদস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দলটি। এ নিয়ে গত বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছিল বিএনপি; দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতাদের। কিন্তু তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় কাক্সিক্ষত ফল আসেনি। প্রত্যাশিত ফল পেতে এবার জেলা, মহানগরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তো বটেই, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলনে তরুণদের অবদান ছিল সর্বাগ্রে। কিন্তু এখন এক শ্রেণির মানুষ তাদের নিয়ে ব্লেম গেমের রাজনীতি শুরু করেছে; রাজনীতি থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখার গভীর ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা না যায়। এ জন্যই বিগত দিনে তাদের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে প্রত্যেক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মেধাবী তরুণরা কর্মসংস্থান না পেয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। আর দেশে ফিরছে না। দেশ হারাচ্ছে তার মেধাবী সন্তানকে, যা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিএনপি তরুণদের এই মেধা, জ্ঞান ও স্বপ্নকে ধারণ করতে চায়। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তরুণদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায়।

এ পরিকল্পনায় দেশের চার স্থানে আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে তারুণ্যের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, তরুণদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করাসহ বিভিন্ন বার্তা দেওয়া হবে। কাল চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের সমাবেশ। ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ থেকেও দেওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

একইভাবে আগামী ১৬ মে খুলনায় সেমিনার ও ১৭ মে সমাবেশ, ২৩ মে বগুড়ায় সেমিনার ও ২৪ মে সমাবেশ এবং ২৭ মে ঢাকায় সেমিনার ও ২৮ মে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়ায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের থাকার কথা রয়েছে। সর্বশেষ ঢাকায় সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখতে চায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। তবে এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালেও একই সংগঠনের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় আয়োজনের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়লেও এবারের আয়োজন হচ্ছে অবাধে। তাই এবারের সমাবেশ ও সেমিনার ঘিরে দলের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলায় প্রস্তুতিসভা ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিভাগীয় শহর, জেলা ও থানা পর্যায়ে যৌথসভা ও প্রস্তুতিসভা করছে। এতে যোগ দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও। প্রচারণা চালানোর সময় সাড়া দিয়েছেন সাধারণ লোকজনও। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে একই সঙ্গে অনলাইন ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।

এ ছাড়া সেমিনারে কর্মসংস্থান, বহুমাত্রিক শিল্পায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৌলিক অধিকার, কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তরুণদের বক্তব্য ও মতামত শুনবেন নেতারা। এসব মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করে এর ভিত্তিতেই আগামীতে পথ চলবে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে তরুণদের বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে। মূলত তরুণদের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বলছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, সেমিনার ও সমাবেশে দেশের তরুণদের কথা শুনব। তরুণদের স্বপ্ন, মেধা, জ্ঞান, শক্তি ও সাহসকে ধারণ করার সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে আমরা কাজে লাগাতে চাই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের বাইরে যে সব তরুণ রয়েছেন, যারা বিএনপির কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তাদের সেমিনারে আনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্য যে কোনো প্ল্যাটফরমে যারা ভালো করছেন, তাদেরও এই সেমিনারে আনা হবে। এর মধ্যে সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার তরুণদের সম্পৃক্ত করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠন তিনটি। শুধু শিক্ষিত তরুণই নন, যে সব তরুণ বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি, তাদেরও এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে গুরুত্বারোপ করছে বিএনপির হাইকমান্ড।

তরুণদের কাছে টানার পাশাপাশি সারাদেশে বিভিন্ন পেশার মানুষকেও দলে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। গত বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠক হয়। এ বৈঠক শেষে সারাদেশে সদস্য সংগ্রহ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সারাদেশে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। আগামী ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।

সমাজের ক্লিন ইমেজের, একদম ভদ্র মানুষ, যারা হয়তো অবসরে গেছেন, তিনি একজন শিক্ষক হতে পারেন, একজন ব্যাংকার হতে পারেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেন, একজন এনজিও কর্মকর্তা হতে পারেন, একজন কৃষক ও শ্রমিক হতে পারেনÑ তাদের মধ্যে যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শকে বিশ্বাস করেন, তাদেরই এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুলাইতে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন ফ্যাসিস্ট সরকারের নানা চাপে ও বাধায় আশানুরূপ সদস্য সংগ্রহ হয়নি। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারাও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সচেষ্ট ছিলেন না। তাই এবার এই কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের সমন্বয় করবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, এবার নিজ নিজ এলাকায় কেন্দ্রীয়, মহানগর-জেলা ও উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সদস্য ফরম বিতরণ করতে পারবেন। সবার প্রচেষ্টায় আশা করি এক কোটির বেশি সদস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।